

প্রীতি গুপ্তাঃ বছরের পর বছর ধরে, ভারতের তাজমহলের আইকনিক সাদা মার্বেলটি ধীরে ধীরে রঙ পরিবর্তন করে চলেছে, যার ফলে অনেকেই ভাবছেন কেন এই প্রিয় স্মৃতিস্তম্ভটি আর আগের মতো সাদা নেই।দূষণে তাজমহল বর্ণহীন পড়ছে, তাজমহলের মার্বেল, যা আবহাওয়া, ধূলিকণা এবং দূষণের কারণে হলুদ ও মাঝে মাঝে কালো হয়ে গিয়েছে, বর্তমানে মাডপ্যাক থেরাপি ব্যবহার করে তা উজ্জ্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাজমহলের রঙ পরিবর্তনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা।
তাজমহলের বর্ণহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দূষণকে দায়ী করা হচ্ছে। আগ্রা শহর, যেখানে তাজমহল অবস্থিত, সেই অঞ্চলটি উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের জন্য পরিচিত। এই দূষণ যানবাহন নিষ্কাশন, শিল্প নির্গমন এবং অন্যান্য দূষণের উৎসের কারণে হচ্ছে। এই দূষণে রয়েছে কণা পদার্থ এবং সালফার ডাই অক্সাইড, যা মার্বেলের সাথে বিক্রিয়া করে মার্বেলের মধ্যে অসংখ্য কালো,হলুদ দাগ তৈরি করেছে।উপরন্তু, এলাকায় পোকামাকড় এবং পাখির উপস্থিতিও মার্বেলের বিবর্ণতায় অবদান রাখতে পারে, কারণ তাদের বর্জ্য এই স্মৃতিস্তম্ভের পৃষ্ঠে দাগ তৈরি করতে পারে।


তাজমহল বর্ণহীন হওয়ার আরেকটি কারণ যা তাজমহলের রঙ পরিবর্তনের জন্য অবদান রেখেছে তা হল আবহাওয়া। স্মৃতিস্তম্ভটি সারা বছর ধরে প্রখর সূর্যালোক, বৃষ্টি এবং আর্দ্রতা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানগুলির সংস্পর্শে আসে। এই আবহাওয়ার কারণে মার্বেল ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে এর আসল উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে, যার ফলে ধীরে ধীরে তাজমহলের রঙের পরিবর্তন হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা।
যদিও বর্তমানে প্রশাসন তাজমহলের রঙের পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন । তারা তাজমহলের আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং স্মৃতিস্তম্ভের কাছে একটি বায়ু পরিশোধক স্থাপন সহ একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে ।তাজমহলের বিবর্ণতা রোধ করার প্রচেষ্টা হিসাবে মার্বেল পরিষ্কার করতে এবং আরও ক্ষতি থেকে তাজমহলকে রক্ষা করতে একটি মাডপ্যাক থেরাপি প্রয়োগ করা হচ্ছে যাতে তাজমহলকে তার আগের রঙ ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
প্রসঙ্গত তাজমহলটি ১৬৩১ থেকে ১৬৪৮ সালের মধ্যে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মরণে তৈরি করেছিলেন। এটি যমুনা নদীর ডান তীর বরাবর দাঁড়িয়ে আছে এবং এটি এর জটিল মার্বেল কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত। তাজমহল , ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের এক অসাধারণ মাস্টারপিস।তাজমহলের মূল কাঠামো ইট-ইন-লাইম মর্টার ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছিল।এর বাইরের দিকটি সাদা মার্বেল এবং লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরি। তাজমহল ‘পিট্রা ডুরা’ নামে পরিচিত একটি কৌশল ব্যবহার করে জেড, ক্রিস্টাল, ল্যাপিস লাজুলি, অ্যামেথিস্ট এবং ফিরোজা সহ অর্ধ-মূল্যবান পাথর দিয়ে যত্ন সহকারে তৈরি করা হয়েছিল।
যদিও তাজমহলের নির্মাণে জড়িত বেশিরভাগ শ্রমিকের নাম অজানা, আমরা জানি যে ২০,০০০ জন দক্ষ কারিগর এর নির্মাণে অবদান রেখেছিল। তারা বুখারা, সিরিয়া, পারস্য সহ এদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছিলেন। উল্লেখযোগ্য নামগুলির মধ্যে রয়েছে ওস্তাদ আহমদ লাহোরি (প্রধান স্থপতি), ইসমাইল আফান্দি (মূল গম্বুজের ডিজাইনার), এবং শিরাজের আমানত খান (প্রধান ক্যালিগ্রাফার)।
আরও পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন