নির্জন গ্যালারি, অসম প্রতিযোগিতা: ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপে ঠিক কি সমস্যা?

ছবি – এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।

উত্তরাপথঃ ফিফা দাবি করেছে, ক্লাব বিশ্বকাপ বিশ্ব ফুটবলে ‘বিপ্লব’ আনবে। কিন্তু ২০২৫ সালের এই প্রতিযোগিতার শুরুটা হতাশাজনক।

যখন ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫ শুরু হলো, তখন বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন লিওনেল মেসি তার জাদু দেখালেন মিয়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে বসা তারকাখচিত দর্শকসারিতে থাকা ডেভিড বেকহ্যাম, রোনালদো, কাকা, বেবেতো, রবার্তো ব্যাজ্জিও ও জাভিয়ার জানেত্তিদের সামনে।

যদিও মেসি গোল করতে পারেননি ইন্টার মিয়ামি ও মিশরের আল আহলির ০-০ ড্র ম্যাচে, তবুও হাজারো ভক্ত গ্যালারিতে হাজির হয়েছিল তার খেলা দেখতে।

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর নেতৃত্বাধীন আয়োজকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও প্রতিযোগিতা যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—গোলযোগ বাড়ছে।

কী কী সমস্যায় জর্জরিত ক্লাব বিশ্বকাপ?

 বাজে ম্যাচ সূচি ও খেলোয়াড়দের শারীরিক ভোগান্তি

দুপুর ১২টা ও ৩টার সময় প্রচণ্ড গরমে ম্যাচ শুরুর ফলে খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্লাব তাদের নিজস্ব লিগ ও কাপ মৌসুম শেষ করেই এই টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছে, আবার কিছু ক্লাব এই প্রতিযোগিতার জন্য মাঝপথে বিরতি নিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ফুটবল সংস্থা ও খেলোয়াড়দের ইউনিয়ন বহু আগে থেকেই এই সময়সূচির সমালোচনা করে আসছে। FIFPro (খেলোয়াড়দের ইউনিয়ন) এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই সময়সূচি খেলোয়াড়দের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতা প্রকাশ করে।”

অসম প্রতিযোগিতা

নিউজিল্যান্ডের অপেশাদার দল অকল্যান্ড সিটি ইউরোপিয়ান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে ১০-০ গোলে হারল। ৪,৯৫৭তম র‍্যাংকে থাকা একটি দল যদি ৬ নম্বর র‍্যাংকিংধারী দলের সঙ্গে খেলে, তাহলে প্রতিযোগিতা না হয়ে তা কেবল প্র্যাকটিস ম্যাচে পরিণত হয়। বায়ার্নের কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানি নিজেই স্বীকার করেছেন, “বোকা জুনিয়র্সের বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচটাই আমাদের জন্য আসল চ্যালেঞ্জ।”

ফাঁকা স্টেডিয়াম ও টিকিট বিক্রির হতাশাজনক চিত্র

যেখানে মেসির ম্যাচে ভিড় দেখা গেছে, অন্যদিকে চেলসি বনাম এলএএফসি ম্যাচে আটলান্টার ৭১ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে মাত্র ২২,১৩৭ জন দর্শক ছিল।

চেলসির কোচ এনজো মারোস্কা বলেছিলেন, “স্টেডিয়ামের পরিবেশটা একটু অস্বাভাবিক লেগেছে।” দিনের বেলা গরমে খেলা ও সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে ম্যাচ রাখার কারণে দর্শক কম হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলার স্থানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি, যেমন বর্ডার প্যাট্রোল ও পাসপোর্ট চেক, অনেক দর্শককে নিরুৎসাহিত করছে।ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো দাবি করেছিলেন, “এটি হবে এক ঐতিহাসিক সূচনা, যা ফুটবলকে বদলে দেবে।” কিন্তু বাস্তবতা বলছে, শুরুটা যেমন নিরাশাজনক, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধও। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আর বিপুল বাজেট দিয়ে সবকিছু সম্ভব নয়—প্রয়োজন চিন্তাশীল পরিকল্পনা ও খেলোয়াড় ও দর্শকদের সম্মান।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top