Search of food alternatives ভবিষ্যত পৃথিবীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিকল্প সন্ধানে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা

উত্তরাপথঃ খাবারের সাথে মানুষের সবসময় এক ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে।সেই কারণে আমরা বিভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন রকম খাবার খেতে ভালোবাসি।কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার প্রিয় খাবারটি তৈরি করতে কতধরনের উপাদানের প্রয়োজন হতে পারে? উত্তর খুব সহজ ধরুন আপনার প্রিয় খাবার চিলি চিকেন।এটি তৈরি করতে কোন ধরনের উপাদানের প্রয়োজন হতে পারে তার জন্য কোনও রন্ধন বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। সাধারনভাবে মাংসের কিমা,কিছু সবজি এবং তেল মশলা ব্যাস।এবার আসাযাক উপাদানগুলি প্রসঙ্গে চিলি চিকেনের প্রধান উপাদান চিকেন তা আমরা সবাই জানি। এই মুরগী লালন-পালনের জন্য খাবার, জল এবং একটি জায়গা দরকার।এবার হিসেব করুন চিলি চিকেনে থাকা অন্যান্য সবজি ও মশালা চাষের জন্য আরও কতটা জমির দরকার? ভবিষ্যত পৃথিবীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ভাবেই চিন্তা করছেন বিজ্ঞানীরা।

আমরা প্রতিদিন যা খাচ্ছি তার পেছনে আসলে কত কী লাগছে এবং সেগুলি চাষ করতে কতটা জমি লাগছে এইসব নিয়ে চিন্তা করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৪ সালে পৃথিবীতে প্রায় ৮.১ বিলিয়ন লোক বাস করছে।এইভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এত বিশাল জনসংখ্যার খাবার জোগান দিতে হিমশিম খেতে হবে, তার হিসাব কষতে বসেছেন বিজ্ঞানীরা। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তন আর বৈশ্বিক উষ্ণতা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদকে যেভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাতে চাষের জন্য জমি আর সেচের জন্য পর্যাপ্ত জল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ তখন কী খেয়ে বেঁচে থাকবে? পৃথিবীর এই চরম অবস্থা আসার আগেই একটা উপায় বের করতে হবে বিজ্ঞানীদের। এখন থেকে এই নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।

খাদ্যের বিকল্প কি কিছু হতে পারে? এর উত্তর দেওয়ার আগে জানতে হবে—আমরা আসলে খাবার কেন খাই। আমাদের শরীরকে সচল রাখতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দরকার। আরও স্পষ্ট করে বললে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন আর জল—এই ছয়টা উপাদান হলেই আমরা বেঁচে থাকতে পারি। খাবার থেকেই এসব আমরা পাই। এখন যদি খাবারই না থাকে, কোথা থেকে পাব আমরা এসব?

আমরা শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন আর জল এই ছয় উপাদানের মধ্যে ভিটামিনটা ট্যাবলেট আকারে ইতিমধ্যে বাজার থেকে কিনে খাই। বাকিগুলোকেও যদি এমন ট্যাবলেটের আকার দিয়ে গিলে ফেলা যায় তাহলেই তো আর সমস্যা থাকে না।যেমনটা আমরা বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশন মুভিতে দেখি।কিন্তু এমনটা হলে সমস্যা একটা আছে তা হলো মানুষের রসনাতৃপ্তি। কারণ এসব ট্যাবলেটে পুষ্টির চাহিদা পূরন হলেও রসনার তৃপ্তি হওয়া সম্ভব নয়। 

টক, ঝাল, মিষ্টির স্বাদ থেকে মানুষকে যেন বঞ্চিত না হতে হয় তার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিজ্ঞানীরা এই ট্যাবলেট ফুডের দিকে জোর না দিয়ে আপাতত বিজ্ঞানীরা ভাবছেন কৃত্রিম খাদ্যের কথা। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো খাদ্যের বদলে রাসায়নিক উপায়ে খাবার তৈরি করা খাদ্যের কথা। যা প্রাকৃতিক খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টির অনুরূপ হবে। এর মানে এই নয় যে বাজারে আর তাজা ফল ও সবজি উপলব্ধ থাকবে না, বরং ল্যাব থেকে তৈরি বিকল্পগুলির সাথে আমাদের খাদ্যের পরিপূরক করার দিকে একটি পরিবর্তন হতে পারে।উদাহরণ হিসেবে ডাচ অধ্যাপক মার্ক পোস্টের কথা বলা যেতে পারে। তিনি ল্যাবে বসেই গরুর কাঁধ থেকে স্টেম কোষ সংগ্রহ করে মাংস তৈরি করে ফেলে

পৃথিবীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন এ পথেই চলছে গবেষণা। পৃথিবীতে বেশীরভাগ মানুষই মাংসজাতীয় খাবারগুলোকে সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার হিসেবে বিবেচনা করেন। মুরগির মাংসের কদর তো পৃথিবীজুড়েই। ভবিষ্যতে খাদ্যতালিকা থেকে এসব মাংস বাদ দিতে হবে, এমনটা ভাবতেই কেমন লাগে! প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস মাংসকে বাদ দিলে, বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রোটিনের চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে এখনই ভাবতে শুরু করেছেন গবেষকেরা।

আজকাল টিভি রিয়েলিটি শো বা অ্যাডভেঞ্চেরাস ট্রাভেলিং শোগুলোতে পোকামাকড় ধরে ধরে চিবিয়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় প্রায়ই। এই পোকামাকড়ই কি ভবিষ্যতে সুস্বাদু আর পুষ্টিকর ডিশ হিসেবে পাতে উঠবে আমাদের? পতঙ্গবিজ্ঞানী মার্কেল ডিকে হিসাব করে দেখেছেন, প্রতিবছর নিয়মিত খাবারের সঙ্গেই আমরা গড়ে প্রায় ৫০০ গ্রাম কীটপতঙ্গ হজম করি! এমনকি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রতি ২২৫ গ্রাম পাস্তা বা ১০০ গ্রাম হিমায়িত ব্রকোলিতে ২২৫টির মতো পোকামাকড়ের অংশবিশেষ থাকার কথা বলেছে।

তাহলে কি আমাদের খাদ্য তালিকা ধীরে ধীরে অনেকটা আর্থোপোডা প্রাণীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে ?আর্থোপোডা প্রাণীদের মধ্যে আমরা ইতিমধ্যে চিংড়ি আর কাঁকড়াকে সুস্বাদু খাদ্য বলে মেনে নিয়েছি। তবে এমুহূর্তে অন্য পোকামাকড়দের পাতে নিতে আমাদের একটু ইতস্তত লাগতে পারে। তবে এখনই পৃথিবীর প্রায় ২০০ কোটি মানুষ তাদের খাবারের মেন্যুতে যোগ করেছে এই সব কীটপতঙ্গকে।

 পোকামাকড়কে খাবারের তালিকায় যোগ করার অনেকগুলো সুবিধা আছে।আমাদের বাজার চলতি মাংসের থেকে এদের খরচ অনেক কম আর কম পরিশ্রমে এগুলো উত্পাদন করা যায়। মেক্সিকোতে স্ট্রিট ফুড হিসেবে ঘাসফড়িংয়ের রোস্ট বেশ জনপ্রিয়। এ রকম ১০০ গ্রাম রোস্টে থাকে ২০.৬ গ্রাম প্রোটিন আর মাত্র ৬.১ গ্রাম চর্বি। ১০০ গ্রাম চর্বিবিহীন মুরগি থেকেও সমপরিমাণ খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়।

খাদ্য হিসেবে এসব পোকামাকড়ের নাম শুনলেই অনেকের গা গোলাতে পারে। কিন্তু আমারা যে রেস্তোরার খাবার খেতে এত পছন্দ করি সেখানকার বিশেষ করে বেস কিচেন, যেখানে খাবার তৈরি করা হয় এবং বেশিরভাগ খাদ্য সামগ্রী রাখা হয়।  সাধারণত কোন গ্রাহক এই সব নিয়ে বেশী ভাবেন না সেখানে তৈরি খাবারে আমরা পরোক্ষ ভাবে আমরা বিভিন্ন রকম পোকা  ভাজা খেয়ে থাকি। বেড়ে চলা জনসংখ্যার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা ‘এফএও’ সাধারণ মানুষের কাছে এখনই পোকামাকড় খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমাদের প্রতিটি খাদ্য পছন্দের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

সূত্রঃ : Discovery Magazine

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top