গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগকে কেন্দ্র করে ভুরি ভুরি অভিযোগ প্রায় সমস্ত রাজ্য সরকারগুলির বিরুদ্ধে। গত ১৭ ও ১৮ তারিখে উত্তরপ্রদেশে পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। পঞ্চাশ লাখের বেশি তরুণ-তরুণী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল।এই অবস্থায় হতাশাগ্রস্ত যুবকদের, সিস্টেমকে অভিশাপ দেওয়া আর আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষা বাতিলের এর আগেও বহু উদাহরণ রয়েছে। ২০২২ সালে রাজস্থানের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা পেপার ফাঁসের পর বাতিল হয়ে যায়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তেলেঙ্গানা স্টেট পাবলিক সার্ভিস কমিশন (টিএসপিএসসি)পেপার ফাঁসের কারণে সহকারী প্রকৌশলী, পৌর সহকারী প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল অফিসার এবং বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জুনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছিলেন।পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও সরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বহু অভিযোগ রয়েছে।যদি সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় বা টাকা নিয়ে নিয়োগে কারচুপি করা হয়, তাহলে সেই প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন যারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন সততার সাহায্যে বা মেধার ভিত্তিতে।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের দুর্নীতি আমাদের পুরো সিস্টেমকে ফাঁকা করে দিচ্ছে। সরকার বলছে মেধাবী ও পরিশ্রমী যুবকদের প্রতি অবিচার হতে দেবে না।কিন্তু সত্যিই কি বিচার হবে? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সরকারি চাকরির নিয়োগে দুর্নীতি এতটাই বেড়েছে যে খুব কমই কোনও সরকারি চাকুরী পরীক্ষা দুর্নীতির প্রভাব এড়াতে সক্ষম হচ্ছে। ইউপি-পিসিএস, ইউপি সম্মিলিত প্রি-মেডিকেল টেস্ট, ইউপি-সিপিএমটি, এসএসসি, ওএনজিসি এবং রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলি বড় আকারে ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র কয়েক লাখ টাকায় বিক্রি করে সেগুলোর উত্তর সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে বহু সরকারি চাকরি প্রার্থী বিভিন্ন অসাধু উপায়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে যোগদান করছে।এমতাবস্থায় আমাদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলো কখনো এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সম্প্রতি, সংসদের বাজেট অধিবেশনে লোকসভায় পাবলিক পরীক্ষা (অন্যায্য উপায় প্রতিরোধ) বিল, ২০২৪ পাস হয়েছে। সরকার দাবি করেছে যে এটি দেশের সব ধরনের পরীক্ষায় প্রতারণা এবং প্রতারণা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করবে। এই বিলে লিফলেট ফাঁসের মতো কাজে দোষী সাব্যস্ত হলে তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ন্যূনতম এক কোটি টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবিত আইন সত্ত্বেও পরীক্ষাগুলো প্রকৃত অর্থে অনিয়ম থেকে মুক্ত হতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
প্রশ্নপত্র ফাঁস সহ টাকার বিনিময়ে যোগদান আজকে আমাদের দেশে শুধুমাত্র সরকারি চাকুরি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই । এই রোগ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।এর একটা বড় কারণ হল জালিয়াতির মামলায় ধরা পড়া বেশিরভাগ লোকই নামমাত্র শাস্তি পেয়েছে। কয়েক মাস জেল খাটার পর আবারও একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন এসব মানুষ।আজ প্রফেশনাল কোর্স হোক বা চাকরি, সবক্ষেত্রেই একশো শতাংশ রুগ্ন অবস্থা।অর্থাৎ চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। ১০- ১২ লক্ষ জেখেনে আবেদনকারি শূন্যপদ যেখানে এক থেকে দুই হাজার। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই অর্থ ও অবৈধ কৌশলের ভূমিকা বাড়ছে।
এই সব বেআইনি কাজকর্ম চালানোর ক্ষেত্রে একটি দিক হল যে বেশিরভাগ ঘটনায় সিস্টেমের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের একটি বড় ভূমিকা থাকে।তা সে আমাদের রাজ্যে এসএসসি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেই হউক বা সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেই হউক ।উভয় ক্ষেত্রের এই ঘটনাগুলি এটি প্রমাণ করে যে শাসক শ্রেণী এই ধরনের ঘটনাকে খুব হালকাভাবে নেয়, না হলে এতদিনে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। প্রকৃতপক্ষে, এই সব অপরাধের সাথে যুক্ত সবচেয়ে বড় অপরাধীরা আমাদের সাধারণ সমাজের মধ্যে লুকিয়ে আছে, কিন্তু সমস্যা হল তাদের অর্থ বা ক্ষমতার কারণে পুলিশ তাদের ধরতে পারে না এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে পারে না।
তাহলে প্রশ্ন হল কিভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব ? আমাদের দেশে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হউক বা নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে উপলব্ধ সরকারি চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, বেকারত্ব এবং জনসংখ্যার ভারসাম্যহীন অনুপাত এই সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী।শিক্ষিত চাকরি প্রার্থী ও চাকরির পদ এই দুটির মধ্যে ভারসাম্যহীনতা এই সমস্যাকে আরও গভীর করে তুলছে। গত কয়েক দশকে শিক্ষাকে যেভাবে শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে দেখা হয়েছে, তাতে সমাজে এক ধরবের নৈতিক অবক্ষয়ের বিরাট জায়গা তৈরি হয়েছে। শিক্ষাকে আর শুধু কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়, এটিকে সমাজ গঠনের সঙ্গেও যুক্ত করতে হবে। এই কাজটিতে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষদের এক সাথে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন
শুভেন্দুর, ‘স্ট্র্যাটেজি’ খারিজ সুকান্তর
উত্তরাপথ: শুভেন্দুর, ‘স্ট্র্যাটেজি’খারিজ সুকান্তর, পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএমকে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন শুভেন্দুর, আর সেই স্ট্র্যাটেজি খারিজ করে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।এখন প্রশ্ন রাজ্য বিজেপির প্রধান দায়িত্বে কে? বিরোধী দলনেতা না রাজ্য সভাপতি ? শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) তার বিতর্কিত কথার জন্য রাজ্যে বিশেষ পরিচিত, তবে তিনি কি পারেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের(ম্মঞ্জ)সাথে আলোচনা ছাড়া কোনও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত একক ভাবে নিতে ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Tomato দাম কমাতে উদ্যাগ কেন্দ্রের
উত্তরাপথ: প্রায় গোটা দেশে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো (Tomato)। কোথাও কোথাও কেজি প্রতি দেড়শো থেকে আড়াইশো টাকা অবধি। এই পরিস্থিতিতে আমজনতাকে স্বস্তি দিতে উদ্যোগী হল কেন্দ্রের উপভোক্তা বিষয়ক বিভাগ। তারা জাতীয় কৃষি সমবায় বিপণন ফেডারেশন এবং জাতীয় সমবায় উপভোক্তা ফেডারেশনকে নির্দেশ দিয়েছে, কৃষকদের থেকে সরাসরি টমেটো সংগ্রহ করে দেশের যে এলাকায় বেশি দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে, সেখানে তা বিক্রি ব্যবস্থা করতে। বাজারে জোগান বাড়লেই কমবে টমেটোর দাম, মত মোদি সরকারের। .....বিস্তারিত পড়ুন
Delhi Flood: লাল কেল্লা, আইটিও-রাজঘাট পর্যটকদের জন্য বন্ধ
উত্তরাপথ: যমুনা জল বাড়াতে Delhi Flood বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার রাত থেকে যমুনার জলস্তর ১৭ সেন্টিমিটার কমেছে। যদিও রাজধানী দিল্লির সব এলাকা এখনও জলাবদ্ধ। বন্যার আশঙ্কায় ১৬ জুলাই পর্যন্ত দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্স থেকে ফোনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং এলজি বিনয় সাক্সেনার সাথে কথা বলেছেন এবং দিল্লিতে বন্যার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
জঙ্গলমহলে হলুদ বাহিনী আগামীতে তৃণমূলের মাথা ব্যথার কারণ
উত্তরাপথ: পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর হলুদ আবীরে ভরে গেছে জঙ্গলমহল। ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনের রাজনৈতিক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল জঙ্গলমহল । আকর্ষণের এই কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠার অন্যতম কারণ নিঃসন্দেহে কুড়মি আন্দোলন। এই জঙ্গলমহল নিয়ে শাসকদলের মাথা ব্যাথা যেমন রয়েছে, তেমন রাজনৈতিক উৎকণ্ঠা রয়েছে বিজেপির । শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এই নির্বাচনে অনেকটাই নিজেদের জমি উদ্ধার করতে পেরেছে সন্দেহ নাই । .....বিস্তারিত পড়ুন