

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ বেশ কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি World Bio Fuel Day’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি গল্প বলেছিলেন – প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি খবরে পড়েছেন – একজন চা-বিক্রেতার নিকটবর্তী নর্দমা থেকে নির্গত দাহ্য গ্যাসের চা তৈরিতে বুদ্ধিমান ব্যবহার সম্পর্কে। তিনি বলেন, চা-বিক্রেতা একটি বাসন উল্টে, একটি গর্ত কেটে পাইপ বসিয়ে নর্দমা থেকে বেরিয়ে আসা গ্যাস ব্যবহার করে চা তৈরি করেন। চা বিক্রেতার এত সহজ প্রযুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী বিস্মিত হয়েছিলেন। যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নর্দমা হতে নির্গত গ্যাসকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করার ধারণাটি উল্লেখ করেছিলেন, আমি সহ, অনেকের কাছে এটি অবিশ্বাস্য ছিল। সব থেকে বেশী উল্লেখযোগ্য ছিল, মোদির মন্তব্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া। রাহুল গান্ধী থেকে কেজরিয়াল সবাই ফলাও করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা শুরু করেন। সমানতালে মিডিয়াগুলিও লেগে পড়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘র সমালোচনায়। সেদিন রাজনৈতিক দলগুলি প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতার দুর্বলতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছিল। মিডিয়াগুলিও একাধিক কভারেজ এই তথ্য নিয়ে প্রকাশ করেছিল।


সম্প্রতি, দক্ষিণ কোরিয়ার POSTECH এবং Korea Institute of Science and Technology (KIST) এর গবেষকদলের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যা অ্যাডভান্সড ফাংশনাল ম্যাটেরিয়ালস (Advanced Functional Materials)-নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন Kangwoo Cho। বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার দূষণবিহীন ভবিষ্যতের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি । তারা একটি নতুন অনুঘটক তৈরি করেছে যা দক্ষতার সাথে নর্দমা থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে সক্ষম, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী শক্তি উৎপাদনে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলে প্রমানিত হতে পারে । সেদিনের প্রধানমন্ত্রী মোদি’র সেই বক্তব্য আজ বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত।


বিজ্ঞানীরা একটি অভিনব অনুঘটক তৈরির মাধ্যমে আরও দীর্ঘস্থায়ী ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন যা কার্যকরভাবে হাইড্রোজেন তৈরি করতে নর্দমার গ্যাস ব্যবহার করে। এই অগ্রগতি, অ্যাডভান্সড ফাংশনাল ম্যাটেরিয়ালস-এর সাম্প্রতিক প্রকাশনায় বর্ণিত, হাইড্রোজেন জেনারেশন প্রক্রিয়ায় ধীরগতির অক্সিজেন বিবর্তনের জটিল সমস্যা মোকাবেলা করে।
হাইড্রোজেন, জ্বালানী হিসাবে পরিবেশ-বান্ধবতার জন্য বিখ্যাত, পরিবেশের উপর জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাবগুলি প্রশমিত করার জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প উপস্থাপন করে। তা সত্ত্বেও, জলের তড়িৎ বিশ্লেষণের বিদ্যমান প্রক্রিয়াটি অক্সিজেন বিবর্তন প্রতিক্রিয়ার অলসতায় বাধার সম্মুখীন হয়, যার ফলে এর সামগ্রিক কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়।
এই গবেষণা দলটি প্রচুর দূষক ইউরিয়া, যা সাধারণত পয়ঃনিষ্কাশনে পাওয়া যায়, হাইড্রোজেন উৎপাদনে একত্রিত করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। ইউরিয়ার জারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, উল্লেখযোগ্য শক্তি নির্গত হয়, যা উন্নত হাইড্রোজেন উৎপাদন এবং নর্দমা পরিশোধনের দ্বৈত সুবিধা প্রদান করে।
বৈজ্ঞানিকরা যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসের সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টায় রয়েছে, সেক্ষেত্রে নর্দমার গ্যাসকে শক্তিতে রূপান্তরের মতো উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে তাদের কাছে। POSTECH এবং KIST -এর বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণাটি দীর্ঘস্থায়ী শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনার মধ্যে একটি প্রতিশ্রুতিশীলতার আভাস দেয় এবং আমাদের একটি পরিষ্কার এবং সবুজ পৃথিবী তৈরি করার সম্ভাবনার একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে৷
সূত্রঃ Accessible Ni-Fe-Oxalate Framework for Electrochemical Urea Oxidation with Radically Enhanced Kinetics, Jiseon Kim, Min-Cheol Kim, Sang Soo Han, Kangwoo Cho, Advanced Functional Materials, 2024, p.2315625. (https://doi.org/10.1002/adfm.202315625)
আরও পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন