

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ আপনি কি জানেন আমাদের দেশে বর্তমানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সমস্যাটা কতটা গুরুতর? এটি শুধু পরীক্ষা পদ্ধতি বা এর সাথে জড়িত পুরো সিস্টেমের ত্রুটি নয়, এটি একটি বড় ইস্যু যা লাখ লাখ তরুণের স্বপ্নকে চুরমার করে দিচ্ছে। কিন্তু আজও এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।প্রশ্নপত্র ফাঁস এর এই সমস্যা মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে সরকারি চাকরি সর্বত্র রয়েছে। আমাদের লাখ লাখ তরুণের কাছে সরকারি চাকরি কোনো স্বপ্নের চেয়ে কম নয়। কয়েক মাস পরিশ্রমের পর একটি সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আসে তাদের জীবনে,যা বদলে দিতে পারে তাদের জীবন। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে তাদের দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম জলে যাচ্ছে।
সম্প্রতি আমাদের রাজ্যে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজির পর ইতিহাসের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্রের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।খবরে প্রকাশ তিনজন প্রার্থীকে পুরো পরীক্ষার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে এবং দুই দিনে ১৪ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি, ঝাড়খণ্ড স্টাফ সিলেকশন কমিশন দ্বারা পরিচালিত সম্মিলিত স্নাতক স্তরের পরীক্ষার তৃতীয় পত্র ফাঁস হয়। এরপর সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষা বাতিল করে কমিশন।তবে ঝাড়খণ্ডে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। গত বছরও কমিশনের ডিপ্লোমা প্রতিযোগিতা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। তদন্ত করা হলে উঠে আসে, শুধুমাত্র পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থার লোকজন জড়িত ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিলের দিকে গিয়েছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৭- ২৩ সাল পর্যন্ত সাত বছরে, বিভিন্ন রাজ্যে ৭০ টিরও বেশি পেপার ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে এবং ১.৫ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এই সাত বছরে বিহার বোর্ডের দশম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে ৬ বার।পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ১০ বার রাজ্য বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।তামিলনাড়ুতে ২০২২ সালের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল।রাজস্থানে, ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সরকারি চাকরির জন্য ১২ টি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই গুজরাটও। সাত বছরে এখানে প্রশ্ন ফাঁসের ১৪টি ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশে প্রশ্ন ফাঁসের অন্তত আটটি ঘটনা দেখা গেছে। এছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, বিহার এবং হরিয়ানায়ও অনুরূপ প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এই রাজ্যগুলিতে প্রশ্ন ফাঁসের ক্রমাগত ঘটনাগুলি কেবল দুর্নীতির দিকেই ইঙ্গিত করে না,আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলিও তুলে ধরে।
আমাদের বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলি প্রশ্ন ফাঁস এবং নকলের জন্য দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করেছে। রাজস্থানে এই অপরাধে সর্বনিম্ন শাস্তি ১০ বছর এবং সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া কমপক্ষে ১০ লাখ থেকে ১০ কোটি টাকা জরিমানার কথাও বলা হয়েছে,এক্ষেত্রে অপরাধী জরিমানা না দিলে তাকে আরও দুই বছর জেল খাটতে হবে।উত্তরাখণ্ডেও প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকলের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ,সেইসাথে ন্যূনতর ১০ বছরের জেল এবং ১০ লক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
গুজরাটে, প্রশ্ন ফাঁসের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ৩ থেকে ১০ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। সেইসাথে ১ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার আইন রয়েছে।এমনকি কেউ যদি প্রশ্নপত্র অন্যের থেকে কিনেন তারও ২ থেকে ১০ বছরের সাজা হতে পারে।এখানে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে অভিযুক্তরা জামিন পান না। হরিয়ানাতেও, অপরাধীদের সাত থেকে দশ বছরের জেল এবং ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার আইন রয়েছে।শুধু তাই নয়, তাদের সম্পত্তি নিলাম করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রয়েছে। জালিয়াতি ধরা পড়লে ছাত্রদের ৫,০০০ টাকা জরিমানা এবং ২ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে।
এবার প্রশ্নপত্র ফাঁস সমস্যার মোকাবিলায় আইন আনল কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন এই বিলে, প্রশ্ন ফাঁসের জন্য দোষী সাব্যস্তদের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল এবং সর্বনিম্ন ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এই বিলের নাম পাবলিক এক্সামিনেশনস (প্রিভেনশন অফ ফেয়ার মিন্স) বিল ২০২৪। বিশেষ বিষয় হলো নতুন এই বিলে কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো শাস্তি বা জরিমানার বিধান নেই। বরং শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যায়ভাবে প্রশ্ন বিক্রয়কারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কঠোর করার কথা বলা হয়েছে।আশা করা যাচ্ছে এই আইনের ফলে সরকারী চাকরী চাওয়া লাখ লাখ যোগ্য শিক্ষার্থীর পরিশ্রম আর নষ্ট হবে না,তারা অন্তত তাদের যোগ্যতা প্রমানের সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন