

প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ
উত্তরাপথঃ প্রায়াত পরমাণু বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ, তার প্রয়াণে শোকের ছায়া বিজ্ঞানী মহলে। বিকাশ সিংহ বিজ্ঞানের জগতে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন ।শুক্রবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তবে সূত্রের খবর দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন,তবে শেষ কিছুদিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বারাবর একজন স্পষ্টবাদী বক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বিজ্ঞান চর্চার বাইরে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে তার মুল্যবান মতামত দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল ধানকরের করা একটি মন্তব্য ,(Arjun’s arrows had “nuclear power”) ”অর্জুনের ধনুকে পারমানবিক শক্তি ছিল “। এই মন্তব্যের বিরূদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন। তিনি বিজ্ঞানকে মাতৃভাষার মাধ্যমে গণমুখী করতে চেয়েছিলেন।
বিকাশ সিংহের জন্ম মুর্শিদাবাদের কান্দির রাজপরিবারে ১৯৪৫ সালে। বিকাশের বাবার নাম বৃন্দাবনচন্দ্র সিংহ এবং জ্যাঠতুতো দাদা অতীশ সিংহ ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী। বিকাশ সিংহ তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন, তারপর তিনি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন কেমব্রিজের কিংস কলেজ থেকে। সেখান থেকে ফিরে ১৯৭৬ সালে যোগ দেন মুম্বইয়ের ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে। পরবর্তী সময়ে কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এবং ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের ডিরেক্টর হিসাবেও কাজ করেছেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির ফেলো হিসাবে তিনি সম্মানিত হন ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৪-এ বিজ্ঞানাচার্য সত্যন্দ্রনাথ বসুর জন্ম শতবর্ষ সম্মানের প্রাপকও ছিলেন বিকাশ সিংহ।
তিনি মনমোহন সিংহের আমলে অর্থাৎ২০০৫ এ প্রধানমন্ত্রীর সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন। ২০০৯-এ একই পদে তাঁকে পুনর্নিয়োগ করা হয়। আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির পর (২০০৮)মনমোহন সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল বামেরা। সেই সময় সরকারকে আস্থা ভোটের মুখে পড়তে হয়। পরমাণু চুক্তি নিয়ে দেশ জুড়ে যে মহাবিতর্ক তৈরি হয়, সেই বিতর্কে কেন্দ্রের সমর্থনে সক্রিয় ভাবে কেন্দ্র সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিকাশ সিংহ।
বিজ্ঞান-গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করা হয় এবং ২০১০ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয়। বাঙালি এই বিজ্ঞানীকে সিলেবাস কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। ২০০২ সাল থেকে তিনি বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ২০০৫ সালে তাঁকে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ কলকাতা’-র চেয়ারম্যান পদে তাঁকে নিয়োগ করে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। এছাড়াও গবেষণায় তাঁর অবদানের জন্য একাধিক সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে এই গবেষককে। ২০২২ সালে তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করন রাজ্য সরকার ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০২৩-এ খড়্গপুর আইআইটি-র একটি ক্যালেন্ডারে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানকে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান ভাবনার থেকে ধার করা বলে দেখানো হলে তিনি তার বিরোধিতা করেন।তিনি সব কিছুকেই প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ‘শ্রেষ্ঠত্বের’ আলোয় দেখার প্রবণতার বরাবর বিরোধী ছিলেন । আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সংক্রান্ত ভাবনার পিছনেও প্রাচীন ভারতীয় প্রেরণা কাজ করেনি বলে তার বক্তব্য ছিল। তার মতে এই তত্ত্ব কোনও মতেই ভারতীয় সভ্যতার ধার করা ছিল না।
তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির শিকড়কে বিকাশ কখনওই অস্বীকার করেননি।তার মতে এই মহাবিশ্বে মানবের জন্ম এক আকস্মিক ঘটনা। সৃষ্টি ও ধ্বংসের নিরন্তর পালাবদলের প্রতীক হিসাবে তিনি দেখেছিলেন নটরাজ মূর্তিকে।
এই বিজ্ঞানীর প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অনেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে তাদের শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন