

অসীম পাঠকঃ জীবনের প্রয়োজনে যুগের পরিবর্তন যেমন সত্য তেমনি যুগের প্রয়োজনে জীবনের আবির্ভাব অমোঘ। এই বাস্তব সত্যটিকে আরও গভীর ভাবে উপলব্ধি করার কাল এসেছে। তারই অভ্যাস অনুরণিত হচ্ছে দিকে দিকে। সর্বত্র আলোড়ন উঠেছে বিদ্রোহী কবির জীবন দর্শন নিয়ে, তাঁর আগুন ঝরা কবিতা নিয়ে।
সর্বহারার কবি নজরুল ইসলাম। যারা বঞ্চিত অবহেলিত, নিপীড়ন আর শোষণের জ্বালা যাদের বুকে ধিকি ধিকি জ্বলে বুকেই জুড়িয়ে যাচ্ছিল দাহ, তাদের মূক বেদনার ভাষা দিয়েছিলেন নজরুল। পদদলিত পরাধীন জাতির বুকে স্বাধীনতার তৃষ্ণা জাগিয়েই তিনি শান্ত থাকেননি, দেশের সমাজের বুক থেকে মানুষে মানুষে বিভেদ ব্যাবধান দূর করবার ব্রত ও গ্রহন করেছিলেন। তিনিই প্রথম কবি যিনি সমাজের সমাজপতি দের ছলনার মুখোশ দেখিয়ে দিয়েছিলেন সকলের চোখে আঙুল দিয়ে। সেই সঙ্গে জলমন্দ্র স্বরে বঞ্চিতের বেদনা আর অধিকারের দাবী ঘোষণা করেছিলেন।
সর্বহারাদের কাল এসেছে – ভাষাহীন মূক বঞ্চিত মানবের মুখে অধিকারের প্রত্যাশার বানী উচ্চারিত হচ্ছে। দেশ ও সমাজ মানুষের বিভেদের কালিমা মোচনের ব্রত গ্রহন করেছে। নজরুল কে স্মরণ করবার জানবার এই তো উপযুক্ত কাল । তাঁর কন্ঠস্বর সকলের কন্ঠে ধ্বনিত হবে, তাঁর দাবী সকলের দাবী হয়ে দিকে দিকে অনুরণিত হতে থাকবে, এটাই এ যুগের দাবী। এভাবেই সার্থক হবে মানব প্রেমিক বিদ্রোহী কবির স্বপ্ন ও সাধ।
নজরুলের জীবন বহুমুখী। একের মধ্যে বহুর যে সার্থক সমন্বয়, নজরুলের জীবন তার ই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জীবনের নিঃসীম মানবতায় তিনি ভালোবেসেছিলেন মানুষকে।
নজরুল ধাপে ধাপে পরিশ্রম করে সাহিত্যের যশোর মন্দিরে এসে উপস্থিত হয়নি। যেদিন এলো, সেদিনই সে বিজয়ীর মতো এলো ….. কালবৈশাখীর অকস্মাৎ ঝড় যেমন হঠাৎ আসে অরণ্য উত্তাল করে, পথঘূর্ণী তুলে .. পথিকদের সচকিত সন্ত্রস্ত করে, গৃহস্থের টিনের চাল উড়িয়ে দিয়ে, ঝঞ্ঝা র মঞ্জির বাজিয়ে। বাংলার সমসাময়িক সাহিত্য ও সমাজে নজরুল প্রবেশ করেছেন ঝড়ের মতন, বিজয়ী র মতন, তাকে খুঁজে নিতে হয়নি তার আসন, সে এসে মহা অভ্যাগতের মতন যেখানে বসেছে, সেখানেই তার আসন রচিত হয়েছে। সাহিত্য জগতে তার এই প্রবেশের সঙ্গে তার সমগ্র সাহিত্যিক জীবনের বিবর্তন এক সুর ও ছন্দে গাঁথা। নজরুল কে আমার ব্যাক্তিগত জীবনে যখন প্রথম আবিষ্কার করি তখন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হইনি। অপরিণত বালক মনে রূপকথার মতো স্বপ্ন ঘনিয়ে এসেছিলো দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি তে লেখা আগুন ঝরা কবিতা গুলো। ছোটবেলায় পড়েছি অগ্নিবীণা। কিছু বুঝেছি আবার অনেক কিছুই বুঝিনি …
বয়সের অনুপাতে একটু বেশী রকমের পরিপক্ক হয়েছিলাম, অন্তত কবিতা পড়ার ব্যাপারে। অর্থবোধের বালাই বোধহয় ছিলো না, কথার ঝংকারই ঢেউ এর মতো দুলিয়ে দিতো মনকে। তখন সে সবের একটা বিশেষ অর্থ নিজের মনের সঙ্গে রং মিশিয়ে একটা কোন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ স্বাদ পেতাম কিনা আজ তা স্মৃতির সমুদ্র ঢাকা পড়ে গেছে। তবে এটা মনে আছে সাত আট বছর বয়সে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেছি। আর মাঝে মাঝে সেই বিপ্লবের কবিতা গুলো নিজের মনে এলোমেলো গুনগুন করতে বড়ো ভালো লাগতো। রোমান্টিক ছেলেবেলায় যেমনটা হয়ে থাকে। অতীত নষ্টালজিয়া, ওর দিকে ফিরে তাকানো মানেই শুধু ক্লান্তি আর অপরিতৃপ্তি … এই ভেবে আমরা সবাই এগিয়ে চলেছি ভবিষ্যতে র দিকে। দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্ব কর্তব্য আর গ্লানির মাঝখানে পুরাণো দিনের স্মৃতি মাথা তুলে দাঁড়াবার অবকাশ পায়না। কিন্তু যখনই নির্জনে অতীতের কথা ভাবি তখনই এক বিচিত্র আত্মতৃপ্তি লাভ করি। আমার জীবনে আমি নজরুল কে যেভাবে চিনেছি তাঁর কবিতা র মধ্যে, তাঁর জীবনী পড়ে, তাতে মনে হয়েছে নজরুল ইসলাম নিজেই এক ইতিহাস।
রুক্ষ কঠিন কঠোর বাস্তবে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে, মনে হয় কবিতার রোমান্স মৃত্যুর রোমান্সে রূপান্তরিত। এই চূড়ান্ত সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের যুগে আমাদের বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড়ো রোমান্স। কৈশোরে যখন নজরুলকে নিয়ে কাব্য চর্চা করেছি, বৃটিশ শাসকদের নৃশংস অত্যাচারের কাহিনী পড়ে রোমাঞ্চিত হয়েছি তখনই জ্বলন্ত কবিতা বিপ্লবের আগুন জ্বলেছে মনের গভীরে…
“আমি যুগে যুগে আসি , আসিয়াছি পুনঃ বিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু “।
শুধু চমক নয় স্তম্ভিত করে দিয়েছিলো, আজ জীবনের বিয়াল্লিশ বছর ধরে যে জনজাগরণের স্বপ্ন দেখি, নজরুলের কবিতায় তারই বাস্তব রূপ প্রত্যক্ষ করেছি, কবিতার মধ্যে দেখেছি আশাতীত অগ্নিগর্জন।
“মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেইদিন হবো শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপান ভীম রণভূমে রণিবে না” …
যে কবিতা পড়ি আর জীবনের যে পথ দিয়ে চলছি, তার মধ্যে যেনো সাদৃশ্য অনুভূত হয় না .. একটা ফাঁক আর ফাঁকি অনুভূত হয়। চিন্তায় জীবনে, অথবা আরও স্পষ্ট ভাষায় গতি আর পথের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য খুঁজে হিমসিম খেয়ে উঠি মাঝে মাঝে। হয়তো খানিকটা অবচেতন মনেই এমন কবিতার সন্ধান করি যা মনকে ভোলাবে না, মনকে জ্বালাবে। নজরুলের কবিতা ই একমাত্র সেই ফাঁককে পূরণ করে দেয় আজ থেকে পঁচিশ তিরিশ বছর আগেও প্রবীন সংস্কৃতি বান শিক্ষা জগতের স্মরণীয় ব্যাক্তিত্বদের বলতে শুনেছি, কবি বলতে গেলে নজরুল, বাকি সব জোলো। সত্যিই কি আশ্চর্য সহ মর্মিতা পাওয়া যায় নজরুলের কবিতায়। আমাদের সমস্ত অনুভূতি সমস্ত আগ্নেয় যন্ত্রণা যেনো নজরুলের লেখায়, কবিতা র পংক্তি তে দীপ্যমান হয়ে ওঠে বারে বারে। নজরুলের কবিতা আমাদের কাছে বেদমন্ত্র। আজও স্বপ্ন দেখি আমাদের দুঃখের যাত্রায় নজরুল চলেছেন অগ্রগামী যাত্রিক, হাতে তাঁর উদ্বিগ্ন জ্বলন্ত মশাল। যাদের গলায় কোনো কালেই কিছু মাত্র সুর নেই তারাও যেনো নজরুলের গানে কবিতায় উদ্দীপ্ত হয়ে রাস্তা চলতে চলতে গেয়ে ওঠে …
” মোদের আঁধার রাতে বাধার পথে যাত্রা নাঙা পায়
মোরা শক্ত মাটি রক্তে রাঙাই
বিষম চলার ঘায় “।
সর্বহারা জিঞ্জির ফনীমনসা, পরাধীন ভারতে সকলের লুকিয়ে পড়া বাজেয়াপ্ত বিষের বাঁশী, তারপর সঞ্চিতা। বুকের আগুনকে অনির্বাণ জ্বালিয়ে রাখার ইন্ধন পেয়ে গেছি আমরা। সত্যিই আমরা ভাগ্যবান, নজরুলের কবিতা পড়ার সুযোগ পেয়ে।
শুধু একটা জিনিস মনের মধ্যে খটকা লাগায়, এমন অগ্নিক্ষরা যাঁর কন্ঠ, বেদনার কালীদহে জন্ম নিয়ে যিনি দেখা দিলেন কালীয় নাগের মতো। কবি কল্পনার কুসুম মাল্য নয়, যিনি রচনা করলেন বিষদিগ্ধ কাঁটার মালা, তিনি কেমন করে লিখলেন ” বাগিচায় বুলবুলি তুই ” গজল ? যাঁর আকাশে মহাকাল ধূমকেতুর প্রসারিত পুচ্ছে জেগে থাকতো যুগান্তরের প্রলয় শিখা তিনি কেমন করে সেই আকাশেই দেখতে পেলেন, “কাতর ঘুমে চাঁদিমা রাকা ভোর গগনের দরদালানে “?
এখন সেই ছেলে মানুষী বিচার বোধ গুলোও হারিয়ে গেছে। জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে চলতে চলতে অনুভব করি, মহৎ প্রতিভার ধর্ম ই হলো বৃহৎ ব্যাপ্তি। মেসোপটেমিয়ার রণপ্রান্তর থেকে আমাদের আনন্দ ভালোবাসা আর বেদনা দিয়ে গড়া ছোট ঘরখানি পর্যন্ত নজরুলের অবাধ উন্মুক্ত বিচরণ।
তাছাড়া বিদ্রোহী কবিকে গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য গ্রামোফোন কোম্পানির কাছে নিজের জ্বলন্ত প্রতিভাকে করুণ ভাবে বিক্রি করতে হয়েছিলো, এ সত্য টা জেনেছিলাম অনেক পরে।
বিদ্রোহী হওয়া এ সংসারে সহজ কাজ নয়। মানুষ পারতপক্ষে কাওকে বলতে চায়না যে সে অন্যায় করেছে। কিন্তু নজরুল ছিলো স্বভাব বিদ্রোহী, Born reble… কাজীর বিদ্রোহ ছিলো অগ্নিময়, ঘরোয়া তীব্র। নজরুল মহা বিপ্লবের পুরোহিত। প্রবল ভাবে ঘৃণা করা বা ভালোবাসার কাল হলো যৌবন। যৌবনের মূর্ত প্রতীক নজরুল। তাঁর কবিতা য় ফুটিয়ে তুলেছেন কখনো ভালোবাসার রাগিনী।
” তুমি আমায় ভালোবাসো, তাইতো আমি কবি, আমার এ রূপ সেযে তোমার ভালোবাসার ছবি”।
আবার নজরুল কখনও শব্দের ঝংকারে ধ্বনি তুলেছেন প্রতিবাদের …
” আমি দুর্দম, আমি দুর্বিনীত
আমি নৃশংস, মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন আমি ধ্বংস”।
কখনো মনে হয় নজরুল যতোটা ইমোশনাল ততটা লজিক্যাল নন। রচনার পরিমিতি বোধ সম্পর্কে তিনি অনেকটাই অসতর্ক, শিল্পীর স্বভাবসুলভ মাত্রা বজায় রেখে অনুভূতির বিকিরণের চাইতে তার উন্মত্ত বিদীর্ণতাটাই তিনি পছন্দ করতেন বেশী।
কিন্তু সেখানেই তো নজরুলের পরিচয়। তা যদি না হতো তাহলে ছন্দে ভাবে ভাষায় পরিপূর্ণ বিদ্রোহ এনে তিনি ওই বিপুলাকার অগ্নিগর্ভ “বিদ্রোহী ” লিখতে পারতেন না …. হ্যাঁ লিখতেন রবীন্দ্রনাথের মতো সংযত পরিমিত নিখুঁত নিপুণ স্বচ্ছন্দ যতি একটি ভাবগর্ভ চতুর্দশপদী কবিতা … ” আঘাত সংঘাত মাঝে দাঁড়াইনু আসি “,… কিন্তু নজরুল তা লেখেননি।
আমি কাওকে ছোট কাওকে বড়ো করে কোনো মূল্যায়নে যাচ্ছি না। সে স্পর্ধা আমার নেই, আমি শুধু সাহিত্য রস বিশ্লেষনেই সীমাবদ্ধ।
রবীন্দ্রনাথ যুগোত্তর, আর নজরুল একটা পরিপূর্ণ যুগ। মনে রাখতে হবে সেই যুগ যখন বাংলার যুবশক্তি আবেগোদ্বেলপ্রায় দক্ষিণ পন্থী কংগ্রেসী নীতির নরম ও মোলায়েম প্রায় নিয়মতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ আক্রোশে গর্জন করে উঠেছে। বাংলার অগ্নিপুরুষ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন গড়ে তুলেছেন তাঁর স্বরাজ দল। আর দেশবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তাঁর পরম পার্শ্বচর যুদ্ধ ফেরত নজরুল তাঁর সঙ্গে সভা সমিতিতে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। সে যুগে বাংলার প্রাণের মধ্যে বহ্নিবন্যা বয়ে যাচ্ছিলো। দিকে দিকে প্রশমিত হচ্ছিল বিপ্লব আন্দোলনের জ্বালামুখ। মহাত্মাজীর অহিংস নেতৃত্ব বাঙালির প্রাণে কখনও সাড়া জাগায়নি, এ কথা আমরা বলতে পারিনা। যদি বলি তাহলে জাতির জনকের প্রতি অবিচার করা হবে। কিন্তু ধিক্কারের বানী আমরা শুনেছি নজরুলের মুখে ….
” সূতা দিয়ে মোরা স্বাধীনতা চাই , বসে বসে কাল গুনি
জাগোরে জোয়ান বাত ধরে গেলো মিথ্যার তাঁত বুনি “
সে যুগে হিসাব ছিলো না, বিচার ও ছিলো না। অসন্তোষ আর বিক্ষোভের ধারা প্রতিবাদের চারদিক থেকে এসে আছড়ে পড়ছিলো।স্বাধীনতা র একটা অস্ফুট এবং প্রায় নিরর্থক স্বপ্ন ছাড়া দেশের যুবশক্তির মধ্যে যে তুফান ব ইছিলো তাকে আ্যানার্কি বললে অন্যায় হয় না।
অতৃপ্তি এসেছে, অসন্তোষ এসেছে, অস্বীকৃতি এসেছে।একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আমরা প্রায় কিছুই চাইনা, আবার সবকিছুই চাই …. প্রায় সব কিছুই আমাদের জ্ঞান কর্ম আর গতিপথে দাঁড়িয়ে আছে বাধার একটা উত্তুঙ্গ প্রাচীর তুলে। এদের ভাঙতে হবে, চুরমার করতে হবে …. মুছে দিতে হবে এদের অস্তিত্ব … দূর করতে হবে নারীর অমর্যাদা, ধনতান্ত্রিক অসাম্য, পরজীবী বৈদেশিকদের শোষণ, আর ধর্মগুরু দের ভন্ডামি। তাই নজরুল সমুচ্চ কন্ঠে ধ্বংসের দেবতা কেই ডাক দিয়েছিলেন … একদিকে যেমন ধর্ম সংস্থাপক সব্যসাচী কে আহ্বান জানাতে তাঁর বাধেনি, তার ই পাশাপাশি যুগে যুগে কলংকিত তৈমূর চেঙ্গিস নাদির শাহ কালাপাহাড়ের মতো মানবতার ঐকান্তিক শত্রু কেও তিনি অসংকোচে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একদিকে তিনি সাম্যবাদে একান্ত বিশ্বাসী, অন্যদিকে এমন নেতা র বন্দনা করেছেন যাঁর সঙ্গে সাম্যবাদ অহি নকুল সম্পর্কে সম্পর্কিত। এরই নাম আ্যানার্কিজম … জীবন সম্পর্কে ক্ষিপ্ত ক্ষুব্ধ নেতিবাদ। আমাদের গালে কেও একটা চড় দিলে আমরা একটা গাল পেতে দি … তবু প্রত্যাঘাত কিছুতেই নয়, তা করতে গেলে আমরা যে গোটা বিশ্বের কাছে আদর্শভ্রষ্ট হবো। নজরুলের নীতি ছিলো ঠিক তার বিপরীত। নজরুল দেশের জন্য মরতে মারতে জানতো … বুকের পাঁজরে পূজার হোমানল জ্বেলে সাহিত্যের মধ্যে যে বিপ্লবের শিখা প্রজ্বলিত করেছেন কবি তাকে অস্বীকারের সাধ্য কোথায় ???
ওয়ার্ডসওয়াথ এককালে বলেছিলেন, কবিতায় থাকবে ‘Emotion Recollected in tranquility’ আবেগ প্রশান্ত স্মৃতির মধ্যদিয়ে ধরা পড়বে কবিতায়৷ নজরুল এ তত্ত্ব মানেন না। তাঁর কবিতায় Tranquility কোথাও নেই। Emotion তাঁর তত্ত্বরপেই প্রতিভাত এবং নজরুলের কাছে ওয়ার্ডসওয়ার্থের সিদ্ধান্ত কবিতা সম্পর্কে চূড়ান্ত তত্ত্ব নয়। নজরুলের কবিতাকে এক দিক থেকে যুগ মানসের নীহারিকা বলা যায়। তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার সমস্ত ব্যথা যন্ত্রনা যেন একটা বিরাট অগ্নিপিন্ডের বুকে কতক গুলো বিচিত্রবর্ণ ধাতব শিখার মতো জ্বলছে , তাদের মধ্যে সবআছে- ——
কিন্তু আপাতত অসহ দাহন ছাড়া তাদের আর কোন স্পষ্ট নির্দিষ্ট রুপ পাওয়া যাচ্ছে না। যখন সেই সামগ্রিক অগ্নিপিন্ড থেকে তারা কয়েকটি গ্রহ রুপে ছড়িয়ে পড়বে আবর্তনের ছন্দে দিনের পর দিন শীতল সংহত হয়ে সুস্পষ্ট সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে দেখা দেবে, সেকাল তখনো অনাগত।
“ ওই নূতনের কেতন ওড়ে কাল বৈশাখীর ঝড় ’
নজরুলের পক্ষে এই টুকুই যথেষ্ট। তাঁর শেষ কথা
“পরোয়া করিনা , বাঁচি বা না বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে, মাথার উপরে জ্বলিছেন রবি,
রয়েছে সোনার মত ছেলে।
“প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস
যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখার
তাদের সর্বনাশ”…
বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে নজরুলের প্রত্যক্ষ কোন যোগাযোগ যাই হোক তাঁর মর্ম সংযোগের সত্য অত্যন্ত স্পষ্টোচ্চারিত৷ অহিংস সত্যাগ্রহকে ভারতের মুক্তিদাতা বলে তিনি কখনো বিশ্বাস করেন নি। তাঁর প্রীতি
“ উদিবে সে রবি আমাদেরই খুনে রাঙিয়া পুণর্বার”
ফাঁসির মঞ্চে যে জীবনের জয়গান তিনি শুনতে পান তার প্রতি অহিংস বাদীদের কোথাও কোন অনুমোদন নেই। কিন্তু এই রক্তাক্ত বিপ্লববাদী ভাবনার ওপরে তখন আর একটি ছায়া পড়েছে।
“ লাঙ্গল ” পত্রিকা মুজফ্ফর আমাদের সান্নিধ্য, রুশ বিপ্লবের তাৎপর্য্য, সোস্যালিজমের দিগন্ত রেখা – বাংলা দেশের মধ্যবিত্ত বিপ্লবীর স্থানিকতা অতিক্রম করে বিশ্ব বিপ্লবের বাণী আসছে। নজরুলের সর্বহারা বইটির নামকরণেই লুকিয়ে আছে সেই প্রেরনাটিঃ পৃথিবীর সর্বহারাদের শৃংখল ছাড়া আর কিছু হারাবার নেই। তাঁর সাম্যবাদী যেন‘ কম্যুনিস্ট ম্যানিফেষ্টো কে সামনে রেখেই রচনা করা হয়েছে –
“কালের চরকা ঘোর দেড়শত কোটি মানুষের ঘাড়ে চরে দেড়শত চোর।
‘ইন্টার ন্যাশনাল গীত’ ‘কৃষানের গান,’ ‘শ্রমিকের গান, ‘কিংবা ধীবরের গান এই সাম্যবাদী চিন্তাধারার ফল
নজরুল আশার কবি- শুধু বৈষয়িক ক্ষেত্রে নয় প্রেমের ক্ষেত্রেও !
নজরুলের প্রেমিকা হচ্ছেন এক শশ্বত প্রতীক্ষ মানা অনন্ত সুন্দরী। নজরুলের কবিতা খুবই স্পষ্ট, যেমন স্পষ্ট জননীর ভালোবাসা, য়েমন স্পষ্ট ক্ষুধার্ত মানুষের কান্না। একজন কবির অমরত্ব বলতে যা বোঝায়, নজরুল সেই দুর্লভ অমরত্ব অর্জন করেছেন। নজরুলের কবিতায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর সাহিত্যিক গভীরতা সম্পর্কে । সাম্যবাদী ভাবনাকে বিজ্ঞান নিষ্ঠ ভাবে, যুক্তির মাধ্যমে ও সংগঠনমূলক কর্মধারায় গ্রহণ করা সম্ভবত নজরুলের নীহারিকা ধর্মী আগ্নেয় মননের পথে সম্পূর্ণ সম্ভব ছিল না। সোস্যালিজম আবেগের তরণীকে ঝড়ের সমুদ্রে ভাসায় না। তার সংযত সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি চলে, প্রয়োজন হলে এক পা অগ্রসর হতে হয় । নজরুলের ব্যক্তিত্বে এবং স্বভাবত শিল্পে ও সে ধৈর্য্য কোথাও ছিল না। বিশুদ্ধ আবেগজীবী নজরুল অত্যাচরিদের প্রতি সমর্থনে, শোষক সাম্প্রদায়ের প্রতি মহৎ ঘৃণায় এবং সর্বমানবিক কল্যাণ বোধের আমন্ত্রণে সাম্যবদের কাছে এসেছেন, কিন্তু তার ধীর স্থির অনুশীলনে, প্রাচীন বিশ্বস ও সংস্কারের ক্রমাপসরনে‘ সিজ নড় টিম্বারে’ র সহিষ্ণুতায় দিনে দিনে প্রস্তুত হয়ে ওঠা এই সম্পূর্ণতা অর্জন তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গত মনে পড়ে রুশ বিপ্লবের জাতীয় কবি মায়াকোড়স্কির কেও এই আবেগ জীবিতার জন্যেই বহুদিন পর্যন্ত লেনিন বিশ্বাস করতে পারেন নি, অনেক দিন ধরে মায়াকোড়স্কির সাম্যবাদী কবিতা সততার পরীক্ষা দিয়েছে। তাই মোটের উপর বিদ্রোহী নজরুল কে যদি অ্যানার্কিস্ট বলে চিহ্নিত করা যায়, তা হলে অন্যায় সিদ্ধান্ত হয়না ….
কিন্তু একথা সর্বোত ভাবে সত্য যে মধ্যবিত্তের পরম বিতৃষ্ণা ও বিদ্রোহবোধ প্রথমে এই অ্যানার্ফিজম কেই আশ্রয় করে এরই ভিত্তিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ওঠে উত্তরকালের পূর্ণতর রাষ্ট্র চেতনা। নিহিলজম না এলে বোলশেভিজম আসতে পারত না এই কথা ঐতিহাসিক সত্য। সেদিনের সংগ্রামী বাংলার বিদ্রোহ – তরঙ্গিত ঐতিহ্য থেকেই পরবর্তী সামগ্রিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা এসেছে। নেতিবাদী যুগে আতিশয্যটা স্বভাবধর্ম, তার প্রকৃতিসিদ্ধ। ভালো – মন্দ সব কিছুর বিরুদ্ধে তার অসংযত উত্তাল প্রতিবাদ। বিপ্লবের পক্ত শিশুর সে দুঃসহ জন্ম যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণাকে যেমন যুক্তি দিয়ে সংযত করা যায় না, বেদনার্তের আর্তনাদ কে যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বিচার ও শিল্প বোধের মানদণ্ড দিয়ে, নজরুল সম্পর্কে এই কথাটিই সত্য। তাঁর কবিকণ্ঠে সমগ্র বাংলাদেশের কণ্ঠ আমরা শুনতে পাই, তাঁর অসংযত, বেহিসাবী ক্ষিপ্ত বিদ্রোহবাদ সে যুগে বিদ্রোহী বাঙালীর মর্ম বাসী। প্রতীতি তাই নজরুলের কবিতা শুধু কবিতা নয়, তা একটা যুগ, তার শিল্প মূল্যের চেয়ে ঢের দামী তার সত্যমূল্য। সমসাময়িক রাজনৈতিক ইতিহাসের ভাবগীতি বলা উচিত তাঁর কবিতাকে- তাঁর কবিতা সে যুগের মানস ইতিহাস। আর সে ইতিহাসের কাছে এযুগের ধার্য অপরিসীম। তাঁর কবিতার প্রটোজন আমাদের ফুরিয়ে যায়নি। তাঁর সাম্যবাদীর আমরা নিঃসংশয় উত্তরাধিকারী….
সেই কৈশোরের প্রথম লগ্নে নজরুলের বিপ্লবী বিদ্রোহী কবিতাগুলি পড়তে গিয়ে গান না জানা লোকের কেমন বেসুরো লাগত- তাই মনে হত আমাদের ‘জন গণ মন অধিনায়ক’ কবির চিন্তা চেতনার সঙ্গে যেন তারা একাত্ম নয়। কিন্তু আজ জানি রবীন্দ্রনাথ এবং অতুল প্রসাদ ছাড়া আধুনিক কালের শ্রেষ্ঠ গীতিকার নজরুল। সংখ্যার দিক থেকে রবীন্দ্রনাথের পরেই তাঁর স্থান। আধুনিক বাংলা গান কেবল সুর নির্ভর নয়, কথা যে তার অন্যতম প্রধান উপকরণ নজরুল সে সত্য প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। গানের একটা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ভাবের উদ্দমতাকে সংহত ফেননিবদ্ধ করে নজরুলের শিল্প কলা অনেক খানি পূর্ণাঙ্গ হতে পেরেছে। অনেক বেশী উপভোগ্য।
“ আধারের এলোচুলে দুহাতে জড়ায়ে যেতে যেতে নিশীহিনী কাঁদে বনছায়ে ”
কিংবা
“ তোমার আঁখি কাজলা কালো অকারণে লাগল ভালো লাগল ভালো পথিক আমার পথ ভুলাল সেই নয়নের জলে”
রাজনৈতিক কবিতায় বাংলা সাহিত্যে অন্তত ঐতিহাসিক গৌরব দাবী করবেন নজরুল আর তাঁর গান নিঃসন্দেহে তাঁকে সাহিত্যিক মহিমার দিক থেকে স্মরণীয় করবে। যতোদিন এই পৃথিবীর বুকে থাকবে ধনিকের শোষণ মহাজন আর মুনাফা শিকারীদের উৎপীড়ন, যতোদিন থাকবে এক্সপ্লয়টেশন আর শ্রেণী সংগ্রাম, যতোদিন কুকুরের মুখ থেকে একমুঠো উচ্ছিষ্ট ভাত কেড়ে খাবে ডাস্টবিনের ধারে নিঃস্ব, অসহায় ক্লিষ্ট মানষ- ততোদিন নজরুলের মৃত্যু নেই। তিনি চির শাশ্বত চির অম্লান ।
আরও পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন