মৈত্রেয়ী চৌধুরী
মৃত্যুর পর কেউ বলে আত্মার অস্তিত্ব থাকে আর কেউ বলে থাকে না। এই বিষয়ে বালক নচিকেতা মৃত্যুর দেবতাকে জিজ্ঞেস করলে যমরাজ কি বলেন? সত্যি কি আত্মা থাকে না ,আত্মা অস্তিত্ব হীন। এইসব প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা পেতেই আজকের আমাদের আলোচনা।
নচিকেতার পিতা বাজশ্রবস ঋষি একদা যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। যজ্ঞের বিধি অনুযায়ী নিজের সর্বস্ব দান করতে হব। এই বিধি অনুযায়ী তিনি কেবল পুরাতন ও অসার বস্তুগুলি দান করছিলেন, পিতার এইসব ত্রুটি নচিকেতা লক্ষ্য করছিলেন, নচিকেতা ভাবলেন পুত্র হিসেবে পিতাকে সতর্ক করে দেওয়া তার কর্তব্য , তাই পিতাকে বললে ঋষি রুষ্ট হন। নচিকেতা বলে পুত্র হিসেবে তিনি নিজেও পিতার সম্পদ, পিতা তাকে কার নিকট দান করবেন। তিনবার একই প্রশ্ন করলে রুষ্ট পিতা বলেন আমি তোমাকে যমকে অর্পণ করলাম। পিতার কথা মতো নচিকেতা যমালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে পিতা বাঁধা দানের চেষ্টা করলে নচিকেতা মনে করিয়ে দেন ব্রাহ্মণ হিসেবে সত্য রক্ষা করা তার কর্তব্য। এই বলে পিতার অনুমতি নিয়ে নচিকেতা গমন করেন যমালয়ে। যমের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর নচিকেতা জানতে চান মৃত্যুর পর মানুষের কি হয়? মৃত্যুর পর আদৌ কি কিছু অবশিষ্ট থাকে? তখন শুরু হয় দুজনের মধ্যে দীর্ঘ কথোপকথন। তার ফলস্বরূপ আমরা জানতে পারি আত্মার স্বরূপ সম্বন্ধে নানা দার্শনিক তত্ত্ব। যম সিদ্ধান্তে জানান যে , আত্মা জন্মমৃত্যু রহিত, অজর, অমর ও অবিনাশী।
বাজশ্রবস ঋষির আর এক নাম ঔদ্দালক। ইনি প্রাচীন ঋষি এবং দানবীর বাজশ্রবার বংশে জন্মগ্রহণ করেন।স্বর্গে প্রভূত পুরুস্কারের আশায় এই বাজশ্রবস বিশ্বজিৎ নামে এক যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। এই যজ্ঞের নিয়ম হলো যজ্ঞকারীকে সর্বস্ব দান করতে হবে। বাজশ্রবসের একটি বালক পুত্র ছিল। তাঁর নাম নচিকেতা। তিনি বয়সে তরুণ হলেও শাস্ত্রে তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ও জ্ঞান ছিল। তিনি দেখলেন পিতা দানস্বরূপ ক্ষীণ,দুর্বল ও বৃদ্ধ গাভীদের দান করছেন । পিতার এই আচরণে গভীর আঘাত পান বালক নচিকেতা, তিনি বুঝতে পারেন পিতা যা দান করছেন তাতে বিশ্বজিৎ যজ্ঞের পুণ্যফল লাভ তো দূরের কথা তিনি মৃত্যুর পর আনন্দহীন, দুঃখবহুল লোকে গমন করবেন। কারণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ শাস্ত্রহীন দানে পুণ্য হওয়া তো দূরের কথা বরং প্রত্যবায় হয়।
নচিকেতা তাঁর পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমাকে কাকে দান করবেন? পিতার কাছে উত্তর না পেয়ে একই প্রশ্ন তিনবার করলেন। অবশেষে পিতা উত্তর দিলেন, তোমাকে আমি মৃত্যুর দেব যমকে দেব।
পিতৃসত্য পালনের বদ্ধ পরিকর হয়ে নচিকেতা যমালয়ে গেলেন। যমপুরীতে যমরাজ অনুপস্থিত। ক্ষুধায় তৃষ্ণা য় কাতর হয়ে নচিকেতা তিনদিন তিনরাত্রি অপেক্ষা করেন। যমরাজ ফিরে এসে বালক হলেও ব্রাহ্মণ জ্ঞানে নচিকেতা কে প্রণাম করেন। জানতে পারেন যমরাজ নচিকেতার উপহাসের কথা, তিনি ক্ষমা চেয়ে তিন রাতের উপাসের পায়শ্চিত্ত স্বরূপ তিনটি বর দিতে চাইলেন।
নচিকেতা বললেন হে মৃত্যু দেব অনুগ্রহ করে আপনি এই বর দিন, আমার পিতা গৌতম যেন দুশ্চিন্তা মুক্ত ও প্রসন্নচিত্ত হন, আমার উপর তাঁর যেন কোনো প্রকার রাগ না থাকে, আপনার কাছ থেকে স্বগৃহে ফিরে গেলে তিনি যেন তৎক্ষণাৎ আমাকে চিনতে পারেন ।পূর্বের মতোই যেন আমাকে সানন্দে গ্রহণ করে নেন। তিনটি বরের মধ্যে একটি।যমরাজ জানান কোনটির জন্য ই নচিকেতার দুশ্চিন্তার কারণ নেই —– একথা বলে যম নচিকেতা কে আশ্বস্ত করলেন।
যমরাজ নচিকেতা কে দ্বিতীয় বর প্রার্থনা করতে বলেন। নচিকেতা এবার স্বর্গলোক তথা ব্রহ্মলোক সম্পর্কে জানতে চান। যদিও তিনি ক্ষনিকের লোক জগতের জন্য আগ্রহী নন।কারণ নচিকেতা লক্ষ্য করেছিলেন, এই দৃশ্যমান জগৎ সংসার চিরস্থায়ী নয়, অনিত্য। নচিকেতা লক্ষ্য করছিলেন মানুষ দুঃখ, কষ্ট,রোগ ব্যাধির মুখোমুখি নিজেকে বড় অসহায় বোধ করে।
এই জগতে মানুষ অল্প সময়ের জন্য সুখভোগ করে বটে কিন্তু অচিরেই তাকে দুঃখের সম্মুখীন হতে হয়। জগতের সবকিছু ই ক্ষণস্থায়ী। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে , মানুষ কি এই শোক- দুঃখ, রোগ ব্যাধিকে অতিক্রম করতে পারে? উপনিষদ বলেন হ্যাঁ পারে। যখন আমরা নিজেদের পরিচয় জানি অর্থাৎ আত্মার প্রকৃত স্বরূপকে উপলব্ধি করি তখন আমরা সকল দুঃখ কষ্টের পারে চলে তাই। উপনিষদ আমাদের আত্মজ্ঞান লাভের শিক্ষাই দিয়ে থাকেন। উপনিষদ ই সেই আত্মার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। নচিকেতার অনুরোধে মম সেই আত্মারই বর্ণনা দেবেন। নচিকেতা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন করেছেন, কেমন করে ব্রহ্মলোক লাভ করা যায়?
ব্রহ্মলোক তথা স্বর্গ লাভের উপায় স্বরূপ যে অগ্নিবিদ্যা আছে, আপনি তা জানেন। অনুগ্রহ করে হে মৃত্যু দেব সেই বিদ্যা আমার কাছে সবিস্তারে বলুন। মৃত্যুর পর যাঁরা স্বর্গলোকে যান, তাঁরা অমৃতত্ব লাভ করেন। আমি স্বর্গলাভের উপায় স্বরূপ এই অগ্নিবিদ্যা ই দ্বিতীয় বর হিসাবে আপনার কাছে প্রার্থনা করছি।
(আগামী সংখ্যায় পরবর্তী অংশ)
আরও পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন