স্বাধীনতা সংগ্রামের অচেনা নায়িকা: ভবানী মাহাতো

উত্তরাপথঃ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সাহস এবং আত্মত্যাগের অসংখ্য কাহিনী রয়েছে যা দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে এক সাফল্যের রূপ দিয়েছে। এমনই একজন অমিমাংসিত ব্যক্তিত্ব হলেন ভোবানী মাহাতো। স্বাধীনতা সংগ্রামী ভবানী মাহাতো ৩০ আগস্ট, ২০২৪-এর মধ্যরাতে ঘুমের মধ্যেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৬ বছর। তার মৃত্যুর সাথে সাথে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি হল।

ভবানী মাহাতোর গল্প ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেইসব হৃদয়বাণ মানুষদের অজানা গল্প , যারা দেশের ভাগ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই মানুষগুলি কখনও গুলি বোমা ছোড়েননি, রক্তক্ষয়ি কোনও সংগ্রামে অংশ নেয়নি , জেলে যাননি কিন্তু আড়াল থেকে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে অক্সিজেন জুগিয়ে গিয়েছেন। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।অথচ স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে এই মানুষগুলো কোনও সরকারি স্বীকৃতি পাননি।পুরুলিয়ার মানবাজার ১ নং ব্লকের চেপুয়া গ্রামের বাসিন্দা ভবানী মাহাতো তেমনই একজন ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’।

কুড়মি সম্প্রদায়ের মেয়ে ভবানীদেবী। মাত্র ন’বছর বয়সে বিয়ে হয় বৈদ্যনাথ মাহাতোর সঙ্গে। ওই ছোট্ট বয়সেই ঘরকন্না, চাষের কাজ সবই একাহাতে করতে হত ভবানীদেবীকে। তার স্বামী যুক্ত ছিলেন বিপ্লবী কাজকর্মের সঙ্গে। ১৯৪২ সালের ৮ অগাস্ট মহাত্মা গাঁধী ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনে’র ডাক দিলেও, চেপুয়া গ্রামে সেই খবর এসে পৌঁছয় ৩০ সেপ্টেম্বর। গাঁধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শুনে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাংলার মানুষও। বৈদ্যনাথও যোগ দেন আন্দোলনে, জেল হয় ১৩ মাসের। স্বামীর অনুপস্থিতিতে পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পরে ভবানী দেবীর উপর। ফসল কাটা, তা বাড়িতে তুলে আনা, মজুত করা থেকে শুরু করে   সংসারের রান্নাবান্না একাহাতেই সব সামলে ছিলেন,সেই সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামী যারা দেশের কাজ করার জন্য বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায়  আত্মগোপন করে ছিলেন তাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিঃশব্দে নিজের কাঁধে তুলেনিয়েছিলেন।

ভাবনী দেবীর বা তাঁর মত সেই সব মহিলাদের আক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ সেই সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেছেন যারা দেশের কাজ করার জন্য নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এসেছিলেন। এই সব মহিয়সী রমণীদের কথা হয়ত ইতিহাসের কোনও বইয়ে লেখা হবে না, এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন তারা সকলেই সরকারি অনুদান পেয়েছেন । কিন্তু বিপ্লবের পেছনে এই মানুষগুলোর অবদান কম নয়, তাসত্বেও তারা সরকারি কোনও অনুদান পাননি। ভবানী মাহাতোর আত্মত্যাগ দেশের ভাগ্য গঠনের জন্য যারা নীরবে পর্দার আড়ালে কাজ করে চলেছিলেন সেইসব অগণিত নারীর প্রমাণ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top