অন্য রাজ্যের সাথে মণিপুরের তুলনা করে বিচার করা যায় না- প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের

উত্তরাপথঃ রাজ্যের কথা তুলে মণিপুরের ঘটনাকে বিচার করা যায় না। একটি মামলার শুনানিতে এমনটাই জানালেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। মণিপুরে বিবস্ত্র করে দুই মহিলাকে রাস্তায় হাঁটানোর ঘটনায় দুই নির্যাতিতা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । এই ঘটনায়  শীর্ষ আদালতের তরফে আগেই সিবিআইকে তদন্ত ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।অন্যদিকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে  এই ঘটনার তদন্তপ্রক্রিয়া অন্যত্র সরানোর আর্জি  জানানো হয়,সেই ব্যাপারে আগামী সোমবার আদালতে শুনানি হবে। মণিপুরের  মামলার শুনানিতে এক আইনজীবী পশ্চিমবঙ্গ এবং রাজস্থানের নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। কিন্তু মণিপুরের ঘটনার চরিত্র আলাদা বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।

সোমবারের শুনানিতে দুই নির্যাতিতা আদালতে জানান, সিবিআই তদন্তে তাঁদের আস্থা নেই। উল্টে আদালতের পর্যবেক্ষণে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে ওই ঘটনার তদন্ত করার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। সোমবার দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে সওয়াল জবাব পর্ব চলার সময়ে কেন্দ্র জানায়, আদালতের পর্যবেক্ষণে তদন্ত হলে তাদের আপত্তির কিছু নেই। এদিন মণিপুরের ওই দুই নির্যাতিতা শীর্ষ আদালতে তাদের নাম প্রকাশ না করার আর্জি জানিয়েছে ।

সোমবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, মণিপুরের যৌন নিগ্রহের ঘটনার ওটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবের তরফে পেশ করা হলফনামার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “ওই হলফনামাই বলছে, এই ধরনের বহু ঘটনা সে রাজ্যে ঘটেছে।” অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে তিনি জানতে চান, গত ৩ মে সে রাজ্যে হিংসা ছ়ড়িয়ে পড়ার পর নারী নির্যাতনের কতগুলি অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছে। নির্যাতিতাদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, “সরকারের কাছে এই নিয়ে কোনও তথ্য নেই। তাঁরা যে সিবিআই তদন্ত চান না, তা-ও স্পষ্ট করে দেন সিব্বল। ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা স্পষ্ট যে অপরাধীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে পুলিশ। এর পরেও আমরা রাজ্য সরকারের উপরে কী ভাবে ভরসা রাখব?” তদন্ত যাতে অসমে না যায়, সেই আর্জিও জানান নির্যাতিতারা। কেন্দ্রের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, সরকার অসমে বিষয়টি স্থানান্তর করতে চায়।কিন্তু  আদালত যেখানে বলবে, সেখানেই তদন্ত চলতে পারে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত গত ৪ মে রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপোকপি জেলায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের একটি মাঠে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগে বলা হয়।  এই ঘটনার পর থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল,কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।কিন্তু নির্যাতিতা দুই মহিলার ভিডিয়ো (সেই ভিডিয়োর সত্যতা আমরা যাচাই করেনি ) সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে  দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। মণিপুরের ঘটনার নিন্দায় সরব হয় নানা মহল। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই ঘটনার নিন্দা করেন। তার পরেই একে একে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top