ড. জীবনকুমার সরকার


৭ এপ্রিল ২০২৩ প্রয়াত হলেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষ। তাঁর প্রয়াণে দেশ ভারাক্রান্ত। যুক্তিবাদীরা চরম মর্মাহত। আমিও। তাঁর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলাম সে এক ইতিহাস। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পাস করে গাজোল হাইস্কুলে সবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। নতুন বইয়ের মধ্যে ডুবে আছি। আর নিয়মিত ক্লাস করছি। এইভাবে পুজোর ছুটি এসে যায়। পুজোর ছুটির আগের দিন অর্থাৎ যেদিন স্কুল হয়ে এক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে স্কুল, সেইদিন আমি আর রাজেন লাইব্রেরীতে যাই। রাজেন আমার ছাত্রজীবনের সেরা বন্ধু। দুজনে কী বই নেবো, কী ধরনের বই নিয়ে এক মাসের ছুটিতে পড়বো —— এইসব ভাবছি আর বই ঘাটছি।
এমন সময় আমার নজরে আসে অদ্ভুত প্রচ্ছদ চিত্র ওয়ালা একটি বই। যেখানে একটি মরা মাথার খুলি সিগারেট খাচ্ছে। বইটির নাম ’অলৌকিক নয়, লৌকিক’ দ্বিতীয় খণ্ড। লেখক প্রবীর ঘোষ।
রাজেনকে বললাম, শোন, তাহলে এই বইটি লাইব্রেরির কার্ডে তুলে নিই। জানা যাবে ভূতের গল্প কেমন হয়। তার আগে আমি শরৎচন্দ্রের প্রায় একশটি গল্প পড়ে ফেলেছি। অন্যদেরও কিছু কিছু পড়েছি। শরৎচন্দ্রের ’রামের সুমতি’ পড়ে কেঁদে ফেলার ঘটনা আমার আজও অবাক করে। এসবের বাইরে প্রবীর ঘোষের বইটি পড়ে ভূতের গল্প কেমন হয়, ভেবে বইটি তুলে ব্যাগে ভরে স্কুল শেষে বাড়ি ফিরি।
বইটি পড়তে শুরু করেই দেখলাম এটা ভূতের গল্প নয়, ভূত তাড়ানোর গল্প। আর আমাকে পায় কে? জীবনে এমন একটি বইয়ের খুব দরকার ছিলো। ছোটোবেলা থেকে বাবার কাছে ভূত বিরোধী অনেক কথা শুনেছি। বাবা কুসংস্কার মানতেন না কোনোদিন। বিজ্ঞানচেতনামূলক বাবার সেসব কথায় ভূতের ভয় তবু যেতো শৈশবে। কারণ, বাড়ির সবাই ভূত মানত বাবা ছাড়া। বাবা সারাজীবন ছাত্র পড়িয়েছেন। নানা ধরনের বই পড়তেন। বাবা আজও অবিরাম বই পড়েন। আমি বাবার সাথে এই কাজে আজও পারি না কেমন যেনো। বাবার উজ্জ্বল অসাম্প্রায়িক চিন্তাচেতনা আমার কাছে একটা গৌরবের বিষয়। আসলে অসাম্প্রদায়িকতার পাঠ বাবার কাছেই প্রথম পেয়েছিলাম। সেটা পরে ফুলেফলে আরও বিকশিত হয়েছে।
পুজোর ছুটি শেষ হবার অনেক আগেই ’অলৌকিক নয়, লৌকিক দ্বিতীয় খণ্ড’ শেষ করে ফেলি। তারপর খুব আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে বইটি নিয়ে যাই মদনমোহন বিশ্বাসের কাছে। তার কাছে নিয়ে যাবার অর্থ হলো, তিনি কঠোর আম্বেদকরবাদী মানুষ। তাঁর কাছ থেকেই ছোটো ছোটো চটি বই পড়ে আম্বেদকরকে প্রথম জানার সুযোগ হয় আমার। আমার মতো অনেককেই উনি আম্বেদকরের বই পড়তে দিতেন। আমাদের মাশলদিঘি গ্রামে মদনমোহন বিশ্বাস একটা আলো। একটা প্রদীপ। মাশলদিঘি গ্রামে নয় কেবল, গোটা গাজোল জুড়ে আম্বেদকরবাদী হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিলো বেশ। তিনি না থাকলে আমি আম্বেদকর সম্পর্কে ওই বয়সে জানতে পারতাম না এত তাড়াতাড়ি। তাই প্রবীর ঘোষের বইটি নিয়ে তাঁকে দিই, যাতে আম্বেদকর দর্শনের সঙ্গে যুক্তিবাদী আন্দোলনের একটা সমন্বয় গড়ে ওঠে।
মদনমোহন বিশ্বাস বইটি পড়ে নিরঞ্জন মণ্ডলকে পড়তে দিয়েছিলেন। নিরঞ্জন মণ্ডল পড়ে নিয়ে আবার দিয়েছিলেন সুনীলকুমার রায়কে। বইটি তারপর আমাদের গ্রামে কিছুদিন ঘুরতে লাগলো এভাবে। ইতিমধ্যে আমি উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢুকি। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই প্রবীর ঘোষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ’ ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র একটি শাখা সংগঠন খোলার। এই মর্মে প্রবীর ঘোষের সঙ্গে ফোনে কথা বলি এবং চিঠি চালাচালি করি। অবশেষে মাশালদিঘিতে শাখা সংগঠন খোলার অনুমতিপত্র আসে প্রবীর ঘোষের স্বাক্ষর সম্বলিত। সেই দলিলটি আজও অক্ষত আছে। আর কত যে স্মৃতি আছে, তার হিসেব নেই। এত বছর পর লিখতে হচ্ছে বলে সবকিছু মনে পড়ছে না হয়তো।
শাখা সংগঠন খোলার ঐতিহাসিক অনুমতিপত্র তো এলো। সংগঠনও খুললো। আমাকে করা হলো মাশলদিঘি শাখার সম্পাদক। সভাপতি হলেন নিরঞ্জন মণ্ডল। মদনমোহন বিশ্বাস হলেন কোষাধ্যক্ষ। গ্রামে সুনীলকুমার রায়ের প্রভাব আছে বলে আমরা তাকে উপদেষ্টা হিসাবে রাখলাম। আর কয়েকজন ছিলো সদস্য। খুব সম্ভবত প্রথম দিকে আমরা ১০/১২ জনের মতো ছিলাম। পড়ে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২৫/৩০ জনের মতো। সমস্যা হলো, নিরীশ্বরবাদী এমন বিজ্ঞানচেতনা নির্ভর সংগনের কাজ মাশলদিঘির মতো পিছিয়ে পড়া একটি গ্রামে কীভাবে করা সম্ভব? প্রতি পদে পদে সমস্যা আর প্রতিবন্ধকতা। তবু আমরা মাঠে নামলাম সাহস করে। শুরু হলো মাসিক সভা। প্রতি মাসের শেষ রবিবার করে সভা অনুষ্ঠিত করতাম মাশালদিঘি বাজারের মধ্যে। বটতলায়। আমার ছোটো মামার দোকানে। মালদা জেলার অখ্যাত এই গ্রামে সেদিন সূচিত হলো এক ইতিহাস। জেলায় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে মাশিদিঘি গ্রাম যে ভূমিকা নিয়েছিল সেদিন, তা সত্যিই অবাক করে দেবার মতো ঘটনা।
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের কাজ শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই গাজোল থেকে এসে মাশালদিঘি শাখায় যোগ দিলেন সুবোধ সূত্রধর, অনিমেষ দাস, হরষিত বিশ্বাস প্রমুখরা। সদস্য দিন দিন বেড়ে যাবার ফলে আমরা কিছুটা সাহসী ও শক্তিশালী হলাম। এর মধ্যে আর একটি কথা বলে রাখা দরকার, যুক্তিবাদী আন্দোলনে সুবোধ সূত্রধরের কথা সহজে ভোলার নয়। তিনি সাহসী এবং প্রচণ্ড উদ্যোগী। কাজ শুরু করার পর গ্রামে দিনরাত আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালাতে লাগলো ধর্মান্ধ আর অজ্ঞরা। মাশলদিঘি গ্রাম আর আমাদের কথা তখন গাজোলের চতুর্দিকে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষকে মাশলদিঘি এনে ’অলৌকিক নয়, লৌকিক’ নামক অনুষ্ঠানটি করাবো। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাশলদিঘিতে অনুষ্ঠান করতে আসেন প্রবীর ঘোষ। তার আগে মাশলদিঘি শাখার পক্ষে আমি আর পাঁচকড়ি মণ্ডল কলকাতা যাই সশরীরে প্রবীর ঘোষকে আমন্ত্রণ করতে। দেবী নিবাস রোডের বাড়িতে সেদিন তিনি আমাদের দুজনকে নিজের হাতে চা করে খাইয়েছিলেন। সেটা একটা বড়ো পাওয়া ছিলো জীবনে।
১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি দিন ঠিক হলো’ অলৌকিক নয়, লৌকিক’ অনুষ্ঠানের। জায়গা ঠিক করলাম আমরা মাশলদিঘি হাইস্কুল। প্রবীর ঘোষ এলেন। মালদা স্টেশন থেকে সোজা আমাদের গ্রামে। প্রথমেই তাঁকে নিয়ে আমরা একটি বিজ্ঞানচেতনা মূলক ও যুক্তিবাদী রেলি বের করে গোটা গ্রাম ঘুরলাম। তারপর দুপুরে মশালদিঘি হাইস্কুলের একটি ঘরে শুরু হলো ’ অলৌকিক নয়, লৌকিক’ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। কত মানুষ! শিক্ষক, চিকিৎসক সহ নানা পেশার মানুষ এবং এলাকার সাধারণ মানুষ। অনুষ্ঠান চলাকালীন ধর্মান্ধরা নানাভাবে অনুষ্ঠান বানচাল করার চেষ্টা করছিল। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শেষ করে আমরা দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু করেছি কেবল, এমন সময় সুনীলকুমার রায়ের বাড়ি খবর আসে মশালদিঘি বাসস্ট্যান্ডে আমাদের অতিথিদের ওপর হামলা করেছে একদল ধর্মান্ধ দুষ্কৃতি ও সমাজবিরোধী। দুঃখজনক এই সংবাদ শুনে সুনীলকুমার রায় সদলবলে ধর্মান্ধদের প্রতিরোধ করতে যান। বাসস্ট্যান্ডের ওপর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। গাজোল থানার পুলিশ এসে ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তির মাথাকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যান। সেদিনের এই ঘটনায় সুনীলকুমার রায়ের ভূমিকা দেখে আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায় উনার ওপর। নিরঞ্জন মণ্ডলের পরিবারের ভূমিকাও ছিলো বেশ ভালো। তাঁর প্রভাবও কম ছিলো না সেদিন। আমি বরং ভয়ে কুঁকড়ে যাই। আর প্রবীর ঘোষের সম্মান কী করে রক্ষা করা যায়, তাই ভাবতে থাকি। অনেক রাতে থানায় দুপক্ষের মীমাংসা হয়। না হলে ওই মৌলবাদী দুষ্কৃতির জেল নাকি নিশ্চিত ছিলো। প্রবীর ঘোষ ওই দিন রাতেই কলকাতা চলে যান। বিষয়টি নিয়ে পরের দিন খবরের কাগজগুলিতে গুরুত্ব সহকারে খবর প্রকাশিত হয়।
এরপরও আমরা দমে যাইনি। আমাদের সংগঠন লাগাতার কাজ চালিয়ে গেছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ আমাদের মশালদিঘি শাখা সংগঠনটি ২০০২ সালে ভারতের শ্রেষ্ঠ শাখা হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। সর্বভারতীয় এই স্বীকৃত আজও মশালদিঘি মদনমোহন বিশ্বাসের কাছে জমা আছে। এই স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গ্রামের নাম পৌঁছে যায় সারা দেশের যুক্তিবাদীদের কাছে। এরপরের ঘটনা সংগঠন ভাঙনের ঘটনা। উচ্চ শিক্ষার জন্য আমি চলে যাই বাইরে। ফলে মশালদিঘি শাখার সম্পাদক থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করলে সভাপতি নিরঞ্জন মণ্ডল খুব পীড়াপিড়ি করেন অব্যাহতি না নেবার জন্য। ছেড়ে দিতে আমারও কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু কোনো উপায় ছিলো না। আমি ছেড়ে যাবার পর গাজোলের সুবোধ সূত্রধরের নেতৃত্বে গোজোল শাখা সংগঠন গড়ে ওঠে। সেখানেও প্রবীর ঘোষ আসেন। দাপিয়ে অনুষ্ঠান করেন
প্রবীর ঘোষের ’অলৌকিক নয়, লৌকিক’ দ্বিতীয় খণ্ড বইটি আমার জীবনকে আমূল পাল্টে দেয় এবং যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষ নামক এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়। এরপর প্রবীর ঘোষের সব বই আমি সংগ্রহ করি এবং পড়ি। যত পড়েছি তত মুগ্ধ হয়েছি। তবে আমার ভালো লেগেছে ব্যক্তি প্রবীর ঘোষ থেকে যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষকে। ব্যক্তি প্রবীর ঘোষের আচার- ব্যবহার আমার কোনোদিন ভালো লাগেনি তেমন। এই নিয়ে গাজোলের ব্লক কমিউনিটি চত্বরে ধরণীধর সরকার সভা ঘরে একবার প্রবীর ঘোষের সঙ্গে আমার তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। সে স্মৃতি আজও ভুলিনি। তবু প্রবীর ঘোষ আমার প্রণম্য। মাঝে মাঝে কলকাতা বইমেলায় দেখা হতো। কথা হতো। সুতরাং, তিনি চলে গেলেও আমার ভেতরে রয়ে গেছেন। আজ নতুন মোড়কে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্মকে যেভাবে মানুষের মধ্যে ছড়ানো হচ্ছে, তাতে আমরা বিপন্ন বোধ করছি। প্রবীর ঘোষকে আরও বেশি বেশি করে মনে পড়ছে। আমি তাঁর বইয়ের কাছে ছুটছি। বাঁচার জন্য তাঁকে আরও কাছে টানছি।
৭ এপ্রিল ২০২৩ তিনি চলে যান। খবরটি শুনে এত কষ্ট পেলাম, যা ভাবার নয়। ভারতের মতো ধর্মান্ধতায় পরিপূর্ণ নরকভূমিতে প্রবীর ঘোষের মতো যুক্তিবাদী বিজ্ঞানীর চলে যাওয়া মানে বিরাট ক্ষতি। ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতবর্ষে জাতপাত আর ধর্মীয় কুসংস্কারে আজও মানুষ বুঁদ হয়ে আছে। ধর্মান্ধ এদেশে বিজ্ঞান পড়েও লোকে জলপড়া খায়, ওঝার কাছে যায়, ডাক্তার হয়েও জ্যোতিষ শাস্ত্র বিশ্বাস করে, হাতে পাথর ধারণ করে, মাদুলি পরে, শনির কাছে প্রার্থনা করে, মাজারে মোমবাতি জ্বালায়, আরও কত কী যে করে তার ঠিক নেই। হাজার হাজার বছরের পুরনো ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, জাতি বিদ্বেষ, বর্ণঘৃণা, নারী নির্যাতন সবকিছুর মূলে রয়েছে ওই কাল্পনিক ধর্ম আর তার প্রচারকরা। এদের বিরদ্ধে প্রবীর ঘোষ আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মানবতার এত বড়ো যোদ্ধা ভারতে বিরল ছিলো। স্বঘোষিত বহু ধর্মগুরুদের তিনি মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন। আমরা যারা মার্কসবাদ এবং আম্বেদকরবাদ নিয়ে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখি, তাদের কাছে প্রবীর ঘোষের যুক্তিবাদী আন্দোলন বিশল্যকরণী। প্রবীর ঘোষকে হারিয়ে আমার মতো অনেকেই পিতৃহারা হলেন। আসলে প্রবীর ঘোষের মতো যুক্তিবাদী নেতার কোনো মৃত্যু নেই। তিনি আছেন, থাকবেন।
আরও পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন