

উত্তরাপথঃ আজও আমাদের বেশীরভাগ রান্নাঘরে সকালের জলখাবার থেকে রাতের ভাত—সবই রান্না হয় গ্যাসের চুলার ওপর। কিন্তু আধুনিক শহুরে জীবন বদলে দিচ্ছে সেই অভ্যাস। একের পর এক মানুষ গ্যাস ছেড়ে ইন্ডাকশন কুকটপকে বেছে নিচ্ছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে—কেন এই পরিবর্তন? কেবল খরচ বাঁচানো নয়, এর পেছনে রয়েছে রান্নার অভিজ্ঞতা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা এবং নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত।
রাতের ক্লান্তি কাটতে না কাটতে সকাল সকাল রান্না — তাই রান্নায় সময় বাঁচানো এখন সবারই চাওয়া। গবেষণা বলছে, ইন্ডাকশন কুকটপে জল ফুটতে গ্যাসের তুলনায় ২০–৪০ শতাংশ দ্রুত হয় । তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণও এতটাই দ্রুত যে মনে হয় যেন চুলার নিচে অদৃশ্য জাদুকাঠি কাজ করছে। আর রান্না শেষ হলেই ইন্ডাকশনের গায়ে হাত দেওয়া যায়, কারণ এর পৃষ্ঠ কখনোই তপ্ত হয় না।


গ্যাসে রান্নার সময় শক্তির বড় অংশ অপচয় হয়ে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গ্যাস চুলার কার্যকারিতা মাত্র ৩২%, অর্থাৎ প্রায় ৭০% শক্তি নষ্ট হয় বাতাসে তাপ হয়ে। ইন্ডাকশন সেখানে কার্যকর ৮৫% পর্যন্ত—ফলে খরচ কমে, ঘরও গরম হয় না। গ্রীষ্মকালে ঘরে এসি চলা অবস্থাতেও রান্না করা যায়, যা একটি বাড়তি স্বস্তি দেয়।
গ্যাস জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে বের হয় নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, এমনকি বেঞ্জিনের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী গ্যাস। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র গ্যাস চুলার দূষণেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ হাজার শিশুর হাঁপানি বেড়েছে। অথচ ইন্ডাকশন কুকটপ ব্যবহার করলে এসব ঝুঁকি একেবারেই নেই।
গ্যাস মানেই শিখা, লিকেজ, বিস্ফোরণের ভয়। ইন্ডাকশনে হাঁড়ি না থাকলে কোনো তাপই তৈরি হয় না। এমনকি ভুলে চুলা চালু রেখে দিলেও কোনো বিপদ নেই। ফলে বয়স্ক বা ছোট বাচ্চা থাকা পরিবারে এটি আরও নিরাপদ সমাধান।
তবে এটির সীমাবদ্ধতা হল এটি প্রথম ব্যবহারের সময় নতুন হাঁড়ি-পাতিল কিনতে হতে পারে, কাচের প্যানেলে আঁচড়ের ঝুঁকি থাকে, দামও তুলনামূলক বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ—সবকিছু মিলিয়ে ইন্ডাকশন দ্রুতই শহুরে রান্নাঘরের নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠছে।
রান্না শুধু খাদ্য প্রস্তুতি নয়, পরিবারের স্বাস্থ্যও এর সঙ্গেও জড়িত। গ্যাসের আগুন ও দূষণ থেকে মুক্তি দিয়ে ইন্ডাকশন দিচ্ছে এক নতুন নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং স্মার্ট অভিজ্ঞতা।
তাই পুরোনো প্রবাদ বদলে আজকের প্রবাদ হওয়া উচিত—
“এখন আর রান্না গ্যাসে নয়, রান্না হচ্ছে চুম্বকের জাদুতে।”
আরও পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন