সমুদ্রতট থেকে শহরের নদী পর্যন্ত কমছে প্লাস্টিক ব্যাগের আবর্জনা

উত্তরাপথঃ প্লাস্টিক দূষণ আজকের দিনে আমাদের পরিবেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও বাড়তে থাকা হুমকিগুলোর একটি। বন্যপ্রাণীর দেহে আটকে পড়া থেকে শুরু করে আমাদের শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকে পড়ছে—এ দৃশ্যই প্রমাণ করে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের প্রতি আমাদের নির্ভরতাই এখন বড় বিপর্যয়ের কারণ। কিন্তু যখন প্লাস্টিক সর্বত্র, তখন আসলে সমাধানটা কী?এই প্রশ্নের উত্তরে আশার আলো দেখিয়েছে একটি নতুন গবেষণা। ১৯ জুন Science জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি জানাচ্ছে, আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পর প্লাস্টিক ব্যাগের আবর্জনা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সমুদ্রতট, নদী ও হ্রদে।

২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫,০০০টির বেশি উপকূল পরিষ্কার অভিযানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেখানে ব্যাগ নিষেধাজ্ঞা বা ফি আরোপ ছিল, সেখানে ব্যাগ-সম্পর্কিত বর্জ্য ২৫% থেকে ৪৭% পর্যন্ত কমেছে।MIT-এর পরিবেশ অর্থনীতিবিদ ও গবেষণার সহলেখক আনা প্যাপ বলেন, “এই গবেষণার মূল ফলাফল হলো—প্লাস্টিক ব্যাগ নিষেধাজ্ঞা পরিবেশে এর আবর্জনা সীমিত করতে কার্যকর। যদিও পুরোপুরি নির্মূল নয়।”আগেও কিছু গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে নিষেধাজ্ঞা ও কর ভোক্তাদের অভ্যাস বদলায়, ফলে দোকানে কম প্লাস্টিক ব্যাগ বিতরণ হয়। তবে পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে এতদিন পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরে পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণ ছিল না। নতুন এই গবেষণাই প্রথমবার এত বড় আকারে জাতীয় স্তরে এর প্রভাবকে মূল্যায়ন করল।

গবেষণার সহলেখক কিম্বারলি ওরেমাস জানান, এত ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা ও ভৌগলিক বৈচিত্র্যের মধ্যে থেকেও স্পষ্ট ফলাফল পাওয়া বিস্ময়কর। কিছু এলাকায় আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল, যেখানে ভারী প্লাস্টিক ব্যাগ চালু ছিল—সেখানে প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা বা কর আরোপ ছিল সবচেয়ে কার্যকর। রাজ্য-ভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা ছিল শহরভিত্তিক নিষেধাজ্ঞার তুলনায় বেশি প্রভাবশালী।তাঁরা নিয়ন্ত্রণমূলক নানা বিশ্লেষণ চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে, আশেপাশের এলাকায় “স্পিলওভার ইফেক্ট” বা নিষিদ্ধ এলাকার বাইরে অতিরিক্ত ব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতাও ছিল না। এমনকি, কয়েক বছরের ব্যবধানে কোনো “রিবাউন্ড ইফেক্ট” বা ব্যবহারের পুনরুত্থানও দেখা যায়নি।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, যেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল, সেখানে বন্যপ্রাণীর ফাঁসানোর ঘটনাও কম হয়েছে। যদিও পরিসংখ্যান যথেষ্ট নয়, তবে গবেষকরা এটিকে “ইঙ্গিতপূর্ণ ফলাফল” হিসেবে দেখছেন।তবে একটা বড় সতর্কবার্তাও দিচ্ছে গবেষণা—নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বেশিরভাগ এলাকাতেই প্লাস্টিক ব্যাগের দূষণ বেড়েছে, যদিও নিষিদ্ধ এলাকায় এর হার অনেক ধীর। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগই ছিল উপকূলীয় আবর্জনার প্রধান উৎস।

প্যাপ বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞার সুফল থাকলেও সেটা সীমিত। কারণ প্লাস্টিক ব্যাগ সস্তা, সহজলভ্য ও অত্যন্ত সুবিধাজনক। তাই মোট ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা যায় না।”এই প্রবণতা বন্ধ করতে উৎপাদনের স্তর থেকেই হস্তক্ষেপ দরকার। ২০২২ সালে, ১৭৫টি দেশ একটি বৈশ্বিক চুক্তি স্বাক্ষর করে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের জন্য। আগামী ২০২৫ সালের আগস্টে এই চুক্তির চূড়ান্ত রূপ আসবে, যেখানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব রয়েছে।প্যাপ বলেন, “ভোক্তা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের চেয়ে উৎপাদন স্তরে হস্তক্ষেপই সম্ভবত বেশি কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এনে দিতে পারে।”


যদিও প্লাস্টিক ব্যাগ নিষেধাজ্ঞা একা সব সমস্যার সমাধান নয়, কিন্তু এটি যে কার্যকর, নতুন গবেষণা তারই পরিসংখ্যানসমৃদ্ধ প্রমাণ দিয়েছে। এখন দরকার আরও বৃহত্তর ও শিকড়ে হস্তক্ষেপ—প্রোডাকশন স্তর থেকে প্লাস্টিক দূষণ কমানোই হবে পরিবেশ রক্ষার সঠিক পথ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top