

উত্তরাপথঃ ফল এবং সবজি খাওয়ার সুবিধাজনক এবং স্বাস্থ্যকর উপায় হিসাবে স্মুদি বর্তমানে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি সাধারণ উপাদান যা অনেক লোক তাদের স্মুদিতে যোগ করে তা হল কলা। সম্প্রতি রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির জার্নাল ফুড অ্যান্ড ফাংশনে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে স্মুদিতে কলা যোগ করা যতটা আমাদের উপকারী মনে হয় বাস্তবে ততটা উপকারী নাও হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) এর গবেষকদের একটি দল দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্মুদিতে একটি কলা যোগ করলে এর চিনির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। কলা প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি এবং এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, প্রাথমিকভাবে ফ্রুক্টোজ আকারে। ফ্রুক্টোজ হল একটি প্রাকৃতিক চিনি যা ফলের মধ্যে পাওয়া যায়, এটির অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে তা আমাদের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক স্বাস্থ্যের প্রভাব ফেলতে পারে।
এই গবেষণায় গবেষকরা দেখিয়েছেন যে একটি স্মুদিতে মাত্র একটি মাঝারি আকারের কলা যোগ করলে এর চিনির পরিমাণ গড়ে ১৪ গ্রাম বৃদ্ধি পায়। যা এটি প্রায় তিন চা চামচ চিনি খাওয়ার সমান। নিয়মিত অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্থূলতা, টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
স্মুদিতে কলা যোগ করা সেরা পছন্দ না হওয়ার আরেকটি কারণ হ’ল পানীয়ের গ্লাইসেমিক সূচক (জিআই) এর উপর এর প্রভাব। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল একটি খাদ্য কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় তার পরিমাপ। উচ্চ জিআইযুক্ত খাবারগুলি রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়, যার ফলে এগুলি খাওয়ার পরে আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত বোধ করি।
কলায় চিনির পরিমাণের কারণে এর জি আই তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী। তারফলে এটি যখন একটি স্মুদিতে মিশ্রিত করা হয় তখন কলার শর্করা আরও দ্রুত নিঃসৃত হয়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি বিশেষত ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য বা যারা তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
তদুপরি, অন্যান্য ফলের তুলনায় কলায় তুলনামূলকভাবে বেশি ক্যালোরি থাকে। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ১০০ – ১২০ ক্যালোরি থাকে। আপনি যদি আপনার ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেন, সেক্ষেত্রে আপনার স্মুদিতে একটি কলা যোগ করলে সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে,যা আপনার ওজন হ্রাস বা নিয়ন্ত্রন করার ইচ্ছাকে বাঁধা দিতে পারে।
তবে এটাও ঠিক যে কলা আমাদের শরীরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির যোগান দেয়। কলা পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ডায়েটারি ফাইবারের একটি ভাল উৎস। অতএব, আপনি পরিমিতভাবে স্মুদিতে কলা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
আবার আপনার স্মুদিগুলিকে স্বাস্থ্যকর রাখতে কলার বিকল্প হিসাবে, কম চিনিযুক্ত ফল যেমন বেরি দিয়ে কলাকে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করা যেতে পারে, কারণ বেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে এর কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে। পালং শাক বা ব্রকলির মতো শাক-সব্জী যোগ করলে তা চিনি বা ক্যালোরির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়িয়েও স্মুদির পুষ্টির মান বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যদিও কলা স্মুদিতে একটি জনপ্রিয় উপাদান, কিন্তু নতুন গবেষণা যে বিষয়টি আমাদের সামনে তুলে ধরছে তা হল কলা পুষ্টি সমৃদ্ধ হলেও তারা সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কারণ স্মুদিতে একটি কলা যোগ করা হলে এর চিনির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় যা রক্তে শর্করার মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি যোগ করতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিমিতভাবে কলার ব্যবহার এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানগুলির সাথে ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে এক স্বাস্থ্য সম্মত ডায়েট গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন