আমেরিকান বিজ্ঞানীরা চুলের মতো পাতলা ব্যাটারি তৈরি করেছেন, যা সহজেই শরীরে বসানো যাবে  

উত্তরাপথঃআমেরিকান বিজ্ঞানীদের এক যুগান্তকারী কৃতিত্ব, তাদের একটি দল সফলভাবে নতুন ব্যাটারি তৈরি করেছে , যা মাত্র ১ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য এবং ০.১ মিলিমিটার ব্যাস, মোটামুটি একটি মানুষের চুলের আকার। এই কমপ্যাক্ট ডিজাইনের ডিভাইসটিকে একটি ছোট ছেদের মাধ্যমে সহজেই শরীরে ঢোকানো যায়, এটি পেসমেকার, ইনসুলিন পাম্প এবং নিউরোস্টিমুলেটরগুলির মতো ইমপ্লান্টযোগ্য ডিভাইসগুলিকে পাওয়ার  দেওয়ার জন্য একটি আদর্শ সমাধান ।

ব্যাটারিটি “গ্রাফিন” নামক একটি বিশেষ উপাদান দিয়ে তৈরি যা অবিশ্বাস্যভাবে পাতলা এবং হালকা ওজনের, এটি শরীরের কোনো উল্লেখযোগ্য অস্বস্তি বা ক্ষতি না করেই স্থাপন করা যায়। গ্রাফিন উপাদানটিও জৈব সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার অর্থ এটি নিরাপদে পার্শ্ববর্তী টিস্যুর সাথে যোগাযোগ করতে পারে।মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর মাইকেল ম্যাকঅ্যাল্পাইনের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের দল কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্পে কাজ করছেন। তারা সফলভাবে পশুরদেহের উপর এই মডেলটি পরীক্ষা করেছেন।এখন তারা মানুষের উপর ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সাথে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।চিকিৎসকদের আশা এই প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটাবে।

এখন প্রশ্ন এটা কিভাবে কাজ করে? চুলের আকারের ব্যাটারি শক্তি উৎপন্ন করতে উপকরণের একটি অনন্য সমন্বয় ব্যবহার করে। গ্রাফিন উপাদান ইলেক্ট্রোড হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যখন “সোডিয়াম অ্যাসিটেট” নামক একটি বিশেষ ধরনের লবণ ইলেক্ট্রোলাইট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যখন দুটি উপকরণ একত্রিত হয়, তারা একটি ছোট বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি করে যা চিকিৎসা ডিভাইসগুলিকে শক্তি দিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্যাটারিটি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যার অর্থ এটি শরীরের প্রাকৃতিক শক্তির উৎস ব্যবহার করে নিজেকে রিচার্জ করতে পারে। এটি বহিরাগত চার্জিং ডিভাইসের প্রয়োজনীয়তা দূর করে, যা এটিকে রোগীদের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক এবং ব্যবহারিক করে তোলে।

এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশনগুলি বিশাল। উদাহরণস্বরূপ, যে সব ব্যক্তি পেসমেকার ব্যবহার করে তাদের ডিভাইসগুলি একটি ছোট ইমপ্লান্টযোগ্য ব্যাটারি দ্বারা চালিত হতে পারে, যা ঘন ঘন প্রতিস্থাপনের সার্জারির প্রয়োজনীয়তা দূর করে। একইভাবে, ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন পাম্প একটি ক্ষুদ্র ব্যাটারি দ্বারা চালিত হতে পারে যা তাদের শরীরে স্থাপন করা যেতে পারে।মেডিকেল ডিভাইস ছাড়াও, এই প্রযুক্তিটি অন্যান্য ইমপ্লান্টযোগ্য ডিভাইস যেমন কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট, রেটিনাল ইমপ্লান্ট এবং এমনকি মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেসগুলিকে শক্তি দিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

যদিও এই প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি চিকিৎসা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে।তবে,আগামী দিনে এই প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের কোথায় নিয়ে যায় তা নিয়ে চিকিৎসকরা উত্তেজিত।”

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top