ইথিওপিয়ান নেকড়েরা ফুলের পরাগায়নে ভূমিকা রাখতে পারে

উত্তরাপথঃবছর ইথিওপিয়ার উঁচু পাহাড়ী অঞ্চলে, যখন বর্ষাকাল শুরু হয়, তখন একটি সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। ইথিওপিয়ান রেড হট পোকার নামক গাছে প্রচুর উজ্জ্বল, টর্চের মতো ফুল দেখা যায় যা আশপাশের এলাকাকে সজীব করে তোলে। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই রঙিন ফুলগুলিতে প্রচুর মিষ্টি মধু পাওয়া যায়। সেই সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং পোকামাকড়গুলি এই ফুলগুলি দেখতে আসে , তবে এদের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত অতিথিরও দেখা মেলে সেটি হল ইথিওপিয়ান নেকড়ে। এই নেকড়ে ফুলের কাছে আসে, এবং সেখান থেকে মধু খেতে থাকে।এটি পান করার সাথে সাথে তার মুখে পরাগ লেগে যায়। এর মানে কি নেকড়ে ফুলের পরাগায়নে সাহায্য করে?

ইথিওপিয়ান নেকড়ে একটি বড় কুকুরের আকারে অনুরূপ।এটিকে শুধুমাত্র ইথিওপিয়ার কয়েকটি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করতে দেখা যায় । ইথিওপিয়ান নেকড়ে আফ্রিকার সবচেয়ে বিপন্ন মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে একটি, বর্তমানে ৫০০ টিরও কম এই প্রজাতির অস্তিত্ব রয়েছে।সম্প্রতি এক গবেষকদের দল সম্প্রতি অমৃত খাওয়া এবং ফুলের পরাগায়নে নেকড়েদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পেরেছে।

সংরক্ষণ কর্মসূচি হিসাবে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইথিওপিয়ান গবেষকদের মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইথিওপিয়ান নেকড়েদের রক্ষা করছে। এই অনুসন্ধান, প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা, ক্লাউডিও সিলেরো, প্রথমবার দেখেছিলেন নেকড়েরা ফুল খেতে। তিনি বলেন, “আমি যখন একটি নেকড়েকে ফুলের মধ্যে দিয়ে চলাফেরা করতে দেখেছিলাম, সেগুলি চাটতে দেখেছিলাম, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সেগুলি মিষ্টি মধুতে পূর্ণ। আমি কখনই ভাবিনি নেকড়েরাও মিষ্টি জিনিস পছন্দ করবে!”দলের অন্যান্য সদস্যরা উল্লেখ করেছেন যে উদ্ভিদটি ইথিওপিয়াতে ঔষধি এছাড়াও এর মধু প্রায়শই কফি এবং ঐতিহ্যবাহী রুটি মিষ্টি করতে ব্যবহৃত হয়।

গবেষক দলের মতে তাদের আবিষ্কারটি বেশ কয়েকটি ঘটনার ফলাফল ছিল। বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার অ্যাড্রিয়েন লেসাফ্রে তাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি একদিন শোনেন নেকড়েরা ফুলের মধু খায়। এরপর অ্যাড্রিয়েন একটি নেকড়ে একটি ফুল চাটছে এই ছবি পেতে পাহাড়ে দুই বছর অনেক ভ্রমণ করে কাটান। তার ক্লোজ-আপ শটে দেখা যায় যে নেকড়েদের মুখে পরাগ, যা একটা সম্ভাবনা তৈরি করে যে তারা ফুলের মধ্যে পরাগ স্থানান্তর করতে সহায়তা করতে পারে।

গবেষক দলটি আরও গবেষণা করে দেখে যে এটি একটি বিরল ঘটনা ছিল না। নেকড়েরা সক্রিয়ভাবে মধু খুঁজে এবং এটি করতে অনেক সময় ব্যয় করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা দেখেন যে একটি মহিলা নেকড়ে একটি ফুলের ক্ষেতে ১.৫ ঘন্টা কাটায়,এই সময়ে সে প্রায় ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন ফুল থেকে মধু খেতে  থাকে। এই সময় দেখা যায় যে নেকড়েরা খাওয়ার সাথে সাথে পরাগ জমা করতে পারে।

যদিও কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিশেষ করে বাদুড়, ফুল থেকে মধু খায়, এবং পরাগায়নে  সাহায্য করে । তবে মাংসাশীদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বিরল। সাধারণত, শুধুমাত্র ছোট প্রাণী যেমন সিভেট বা মঙ্গুস এবং কখনও কখনও ভালুক ফুল থেকে মধু গ্রহণ করে। এ কারণেই ইথিওপিয়ান নেকড়েদের আচরণ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি প্রথম বড় মাংসাশী প্রাণী যা মধু খাওয়ার জন্য পরিচিত।

যদিও একা মধু সম্ভবত নেকড়েদের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে না, এটি তাদের কিছুটা উৎসাহ দিতে পারে। তারা খাবারের পরে জলখাবার বা ডেজার্ট হিসাবে এটি উপভোগ করতে পারে।

সংক্ষেপে, সম্প্রতি গবেষণা দেখায় যে ইথিওপিয়ান নেকড়েরা ফুলের পরাগায়নে ভূমিকা রাখতে পারে, যা এই আশ্চর্যজনক প্রাণীদের একটি আশ্চর্যজনক দিক প্রকাশ করে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top