উত্তরাপথ
ছবি- People
পুরনো কিছু ফিরিয়ে দেয়া আপোষের একটা পথ। অতীতের ভুলকে স্বীকার করে নেবার একটা উপায়। এখন সময় এসেছে ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটেন যা করেছে তা ফিরে দেখা এবং তার যথার্থতা বিবেচনা করে দেখা। প্রায় ১৪৫ বছর আগে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মারা যান ইথিওপিয়ার যুবরাজ প্রিন্স আলেমায়েহু। ইংল্যান্ডের উইন্ডসর কাসেলে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ব্যক্তিগত সমাধিক্ষেত্রে উনবিংশ শতকে কবর দেয়া ইথিওপিয়ার রাজপুত্রের দেহাবশেষ এখন ফেরত পেতে উন্মুখ ইথিওপিয়া। কিন্তু বাকিংহাম প্রাসাদ এই দাবি মানতে নারাজ।
যুবরাজ আলেমায়েহুর এক বংশধর ফাসিল মিনাসের বক্তব্য ইংল্যান্ড তো তার জন্মস্থান নয় তাই আমরা পরিবারের তরফ থেকে এবং ইথিওপিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে তার দেহাবশেষ ফেরত চাই।অন্যদিকে বাকিংহাম প্রাসাদের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে উইন্ডসর প্রাসাদের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল থেকে তার মৃতদেহ খুঁড়ে তোলা যাবে না। তাতে কবরস্থ অন্য মৃতদেহগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এবার আসা যাক ইথিওপিয়ার রাজপুত্র যুবরাজ প্রিন্স আলেমায়েহু জীবনের নাজানা কাহিনিতে।
সালটা ছিল ১৮৬২। যুবরাজের পিতা ইথিওপিয়ার প্রতাপশালী সম্রাট দ্বিতীয় টিওড্রোস তার সাম্রাজ্যের ভিত আরও শক্ত করার প্রয়াসে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়াকে। কিন্তু তার চিঠির কোন উত্তর দেননি রানি ভিক্টোরিয়া। এই নীরবতায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সম্রাট টিওড্রোস। তিনি বেশ কয়েকজন ইউরোপিয়ানকে পণবন্দী করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ইথিওপিয়ায় ব্রিটিশ রাজপ্রতিনিধিও।এর জবাবে শুরু হয় ইথিওপিয়ার সম্রাটের বিরুদ্ধে বিশাল এক সামরিক অভিযান। পণবন্দীদের উদ্ধারে লড়াইয়ে নামে ১৩ হাজার ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনা।: উত্তর ইথিওপিয়ার মাগডালায় পাহাড়ের মাথায় সম্রাট টিওড্রোসের দুর্গ অবরোধ করে এই বাহিনী ১৮৬৮ সালে, এবং মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সম্রাটের প্রতিরোধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তারা।সম্রাট ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হওয়য় বদলে আত্মঘাতী হবার সিদ্ধান্ত নেন। আর সে কারণে ইথিওপিয়ার জনগণের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন একজন বীর নায়ক।
এরপর প্রিন্স আলেমায়েহুকে তার মা এর সাথে যুক্তরাজ্যে আনা হয়। কিন্তু যাত্রা পথে মৃত্যু হয় তার মায়ের এরপর ।অনাথ অবস্থায় যুক্তরাজ্যে পা রাখেন শিশু যুবরাজ।ব্রিটিশদের যুক্তি ছিল তাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবং সম্রাট টিওড্রোসের শত্রুদের হাতে তাদের ধরা পড়া ও সম্ভাব্য হত্যা ঠেকাতে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে যুদ্ধ শেষে, ব্রিটিশ সেনারা সেখান থেকে হাজার হাজার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন লুটপাট করে, যার মধ্যে ছিল সোনার মুকুট, প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, গলার হার এবং রাজকীয় পোশাক পরিচ্ছদ।এত বিপুল ধনসম্পদ ব্রিটিশরা লুট করেছিল যা বহন করে আনতে লেগেছিল কয়েক ডজন হাতি এবং শত শত খচ্চর।এসব পুরাতাত্ত্বিক সম্পদ এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে শোভা পাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন যাদুঘর আর লাইব্রেরিতে, এমনকি এই সব সামগ্রী স্থান পেয়েছিল বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়।
অনাথ বালক আলেমায়েহু ১৮৬৮ সালে ব্রিটেনে পৌঁছনর পর তার দুর্দশা ও অনাথ অবস্থা দেখে সমবেদনা প্রকাশ করেন রানি ভিক্টোরিয়া। ইংল্যান্ডে দক্ষিণ উপকূলের অদূরে আইল অফ ওয়াইটে রানির অবকাশযাপন বাসস্থানে দুজনের সাক্ষাত হয়।রানি জানান তিনি আর্থিকভাবে আলেমায়েহুর দায়িত্ব নেবেন। ইথিওপিয়া থেকে ক্যাপ্টেন ট্রিসট্রাম চার্লস সইয়ার স্পিডি নামে যার সাথে ওই অনাথ বালক ইংল্যান্ডে এসে পৌঁছেছিল, রানি তাকে আলেমায়েহুর অভিভাবক নিযুক্ত করেন।প্রথমদিকে তারা দুজনে থাকতেন আইল অফ ওয়াইটে। পরে ক্যাপ্টেন স্পিডি বালক আলেমায়েহুকে নিয়ে বিশ্বের নানা জায়গায় বাস করেন। তারা দুজনে ভারতেও কিছুদিন ছিলেন।
এরপর যুবরাজের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনে তাকে ফিরিয়ে আনা হয় ব্রিটেনে, ভর্তি করে দেয়া হয় উত্তর ইংল্যান্ডের রাগবি শহরে ব্রিটেনের একটি বেসরকারি স্কুলে। কিন্তু সেখানে যুবরাজের মন বসেনি। পরে তাকে পাঠানো হয় স্যান্ডহার্স্টের সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়াল মিলিটারি কলেজে। সেখানে তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হতো।এইসময় যুবরাজ নিজের দেশে ফিরে যেতে “উৎসুক” হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তার সেই ইচ্ছাকে কোনভাবেই আমল দেয়া হয়নি। অবশেষে যুবরাজ আলেমায়েহুকে লিডস এলাকায় এক সাধারণ বাসায় গৃহশিক্ষক রেখে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যুবরাজ অসুস্থ হয়ে পড়েন- তার সম্ভবত নিউমোনিয়া হয়েছিল।
এক পর্যায়ে তিনি চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তার ধারণা হয়েছিল তার উপর বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে।এক দশক নির্বাসনে জীবন কাটানোর পর রাজপুত্র আলেমায়েহুর অকালমৃত্যু হয় মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৮৭৯ সালে।
আরও পড়ুন
এবার থেকে সংসদের কর্মীরা নতুন ইউনিফর্ম সহ ভারতীয় ঐতিহ্য প্রদর্শন করবে
উত্তরাপথঃ আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদের বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা ৩১ আগস্ট সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহলাদ যোশী করেছিলেন। অধিবেশন চলাকালীন কেন্দ্রের দ্বারা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ভারত রাখার প্রস্তাবও আনা হতে পারে।সংসদের বিশেষ অধিবেশন এগিয়ে আসার সাথে সাথে, কর্মীদের পরের সপ্তাহে নতুন ভবনে যাওয়ার সময় সংসদ কর্মীদের নতুন ইউনিফর্ম পরতে হবে।এই ইউনিফর্মগুলিতে ভারতীয় সংস্কৃতির উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । নেহেরু জ্যাকেট' এবং খাকি রঙের প্যান্ট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নতুন ড্রেস কোড সংসদের উভয় কক্ষে কার্যকর করা হবে।ইউনিফর্মটি তৈরি করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (NIFT)। তবে নতুন সংসদ ভবনে আনুষ্ঠানিক প্রবেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত হয়েছে,সেদিন গণেশ চতুর্থীর একটি ছোট 'পূজা' অনুষ্ঠান হবে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ভোরের শুকতারা
অনসূয়া পাঠকঃ বাস ছাড়তে তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিলো, আমি মা বাবার সাথে বাসের ভেতরে জানালার দিকের সিটটায় বসে আছি। এমন সময় দেখি আমাদের পাশের সিটে বসে একজন রবীন্দ্রনাথের সঞ্জয়িতা পড়ছেন, বইটাকে দেখে আমার চোখের সামনে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা পরা মুখ ভেসে উঠলো, চন্দন স্যারের মুখ। বছর পাঁচেক আগের কথা, আমার বাবা তখন জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের আমলাশুলির পোষ্টমাষ্টার। দু কিমি দূরেই আমার পিসীমার বাড়ি। ওখানেই আমার হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু। আর যে স্যার আমার মননে সদা জাগরুক , বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ বলা যায় যাকে , আমার গল্প যাঁকে নিয়ে সেই চন্দন স্যারকে ওখানেই পাওয়া। ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ক়াঁচা পাকা চুল , সরু গোঁফ চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, .....বিস্তারিত পড়ুন
আগামী ৩ বছরে শূন্য বর্জ্য হওয়ার পথে রাজস্থানের প্রথম গ্রাম
উত্তরাপথঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় আঁধি গ্রামে এই পরিবর্তন করা হচ্ছে।জয়পুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আন্ধি গ্রাম।আগামী তিন বছরে এই গ্রাম শূন্য বর্জ্য হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।আন্ধি গ্রামের এই সম্পূর্ণ রূপান্তরটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের অধীনে করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি সবুজ প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ ব্যবহার করে আন্ধি গ্রামকে জিরো ওয়েস্ট মডেলে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে । এই প্রকল্পটি ২১ মার্চ ২০২২ এ শুরু হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ গ্রামের অবস্থা আগে খুবই খারাপ ছিল।আগে এই গ্রামের লোকেদের কঠিন বর্জ্য আলাদা করার কোনও ধারনা ছিল না । .....বিস্তারিত পড়ুন
তিব্বতে ওজোন স্তরের গর্ত গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে
উত্তরাপথঃ ওজোন স্তর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি অপরিহার্য দিক, যা স্ট্রাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত। এটি সূর্য দ্বারা নির্গত ক্ষতিকারক অতিবেগুনী (UV) বিকিরণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওজোন স্তরের অবক্ষয় , বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর ধরনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে । এরকম একটি পরিণতি হল তিব্বতে ওজোন স্তরের গর্ত যা সেখানকার গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে।তিব্বতকে, প্রায়শই "বিশ্বের ছাদ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।এটি একটি বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র এবং অনন্য আবহাওয়ার নিদর্শন সহ এক বিশাল অঞ্চল। এর বিশাল এলাকা জুড়ে উচ্চ পর্বতমালা, মালভূমি এবং গভীর উপত্যকা রয়েছে । .....বিস্তারিত পড়ুন