গঙ্গা ভাঙনে নাজেহাল দশা মানিকচক ব্লকের প্রায় ৭০ হাজার মানুষের

উত্তরাপথঃ প্রতিবছর বর্ষাকালে গঙ্গা ভাঙন মালদাবাসীর জন্য এক চিরচারিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে,আর এই সমস্যা থেকে  সদ্য মুক্তির কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না । এই বছর গঙ্গার সাঁড়াশি চাপে নাজেহাল দশা মানিকচক ব্লকের প্রায় ৭০ হাজার মানুষের ৷ বাঁধ ভাঙা জলে বিপন্নর সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে কারণ, যেভাবে গঙ্গার জল ভূতনি চরের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে, তাতে সেখানে থাকা তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতই বানভাসি হওয়ার সম্ভাবনা ৷

আশার কথা, মঙ্গলবার সকাল থেকে গঙ্গার জলস্তর স্থিতিশীল হয়েছে ৷ নতুন করে আর জল বাড়েনি ৷ তবে ফের যে কোনও সময় জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে বলে গ্রামের মানুষ আশঙ্কায় রয়েছে ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে জেলা প্রশাসন ৷৷

গঙ্গা আর ফুলহর নদী দিয়ে চারদিক ঘেরা ভূতনি চর ৷ অসমের মাজুলির পর বৃহত্তম নদী ব-দ্বীপ হিসাবে ভূতনির অবস্থান ৷ চরে ৬৩টি গ্রাম রয়েছে ৷ রয়েছে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ লাখ দেড়েক মানুষের বসবাস ৷ ২০১৯ সালের আগে পর্যন্ত চরে যাতায়াতের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা ৷ চরে যাতায়াতের সুবিধের জন্য সেবছর ১.৮ কিলোমিটার লম্বা একটি ব্রিজ চালু করে রাজ্য সরকার ৷ চরের মানুষদের জীবিকা মূলত কৃষি ।

 প্রায় প্রতি বছরই গঙ্গার রোষে পড়ে এই চর ৷ চলে ভাঙন ৷ ভাঙনের কোপে পড়ে নদীবাঁধ ৷ এভাবে গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে সাতটি রিং বাঁধ ৷ স্রোতের টানে খাসমহল ও কেশরপুর কলোনিতে বাঁধের দু’টি অংশ গত পরশু কেটে গিয়েছে ৷ গঙ্গাজল ঢুকে পড়েছে উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত অংশে ৷ বিপন্ন মানুষজন উঁচু জায়গার সন্ধানে ৷ বেশ কিছু পরিবার কাটা বাঁধের উপরেই প্লাস্টিক টাঙিয়ে বসবাস শুরু করেছে ৷ কিন্তু যে গতিতে জল সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকছে, তাতে চরের বাকি দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত, দক্ষিণ চণ্ডীপুর ও হীরানন্দপুরও নিশ্চিতভাবে বানভাসি হতে চলেছে বলে মনে করছেন চরবাসীরা ৷ তাঁদের মতে, পুরো ভূতনি চর বানভাসি হওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷এবার দু’জায়গায় বাঁধ কেটেছে ৷ এই পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে কেউ জানে না ৷ নদীর জল কমে গেলেও চরে ডুবে যাওয়া ঘরবাড়ি থেকে জল নামতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে ৷

চরের বাসিন্দাদের মতে, প্রতি বছরই অল্পবিস্তর নদীর জল সংরক্ষিত এলাকায় ঢোকে ৷ এতদিনে চরে সবচেয়ে বেশি জল হয়েছিল ১৯৯৮ সালে ৷ তবে এবার নদীর যা মতিগতি তাতে আমাদের ধারণা, এবারও ১৯৯৮ সালের মতো বা তার বেশী বন্যা হবে ।গতবার বাঁধের কিছুটা অংশ বাঁধা হয়েছিল ৷ আমরাও একটু শান্তি পেয়েছিলাম ৷ এবার কেউ আসছে না ৷ এবার যদি গোটা চর ভেসে যায়, তবে মানুষ কোথায় যাবে ? বাঁধের উপরেও তো জায়গা নেই ৷ পরিস্থিতি দেখতে এখনও প্রশাসনের কেউ আসেনি।

ভূতনি থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গার জলে বানভাসি মানিকনগরে এক ছাত্র জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে ৷ তার নাম এন্তাজুল আলি ৷ বন্যার জলে খেলতে গিয়ে সে ডুবে যায় ৷ তাকে বাঁচানো যায়নি ৷ কিন্তু কেন বারবার একই জায়গায় গঙ্গা ধাক্কা মারছে? রাজমহল থেকে মালদায় প্রবেশের মুখেই ভূতনি চর ৷ গঙ্গা, কোশি আর পূনর্ভবার মিলিত প্রবাহ সেখান দিয়ে প্রবাহিত হয় ৷ ভূতাত্বিকভাবে ভূতনি চর ভীষণ অস্থির প্রকৃতির ৷ রাজমহল থেকে মালদায় ঢোকার পর গঙ্গার খাত হঠাৎ কমে যাওয়ায় বহন ক্ষমতা অনেকটা হারিয়ে যায় ৷ তাতেই নদীর পলি, নুড়ি দিয়ে এই চর তৈরি হয়েছে৷

বর্ষায় নদীর বিপুল জলরাশি ওই সমস্ত হ্রদের আকৃতির পথ দিয়ে বয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ ওই চর মাটি বালি দিয়ে তৈরি ৷ ফলে যতই বাঁধ দেওয়া হোক না কেন, বিপুল জলরাশির স্রোত আটকাতে পারে না ৷ তার উপর গঙ্গা তার গতিপথ বদল করছে ৷ এর ফলেই প্রতি বছর এখানে ভাঙন ও বন্যা হয় ৷ ভাঙন আটকাতে ড্রেজিং-এর কথা বলা হলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে তার বিপুল খরচ বহন করা কতটা স্বাভাবিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ৷ তবে নমামি গঙ্গে প্রকল্পে এখানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কাজ হলে এই সমস্যা অনেকটা মেটানো যেত ৷মঙ্গলবার সকালে গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৫.০৬ মিটার ৷ সর্বোচ্চ বিপদসীমা ২৫.৩০ মিটার থেকে কিছুটা নীচে থাকলেও বিপদসীমা ২৪.৬৯ মিটার থেকে উপরে ৷এখন দেখার প্রশাসন কতটা উদ্যোগী হচ্ছে এই ভাঙন পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


১ কোটি টাকার মানহানির মামলা প্রাক্তন CJI রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে

উত্তরাপথ: গুয়াহাটির একটি স্থানীয় আদালতে আসাম পাবলিক ওয়ার্কসের (এপিডব্লিউ) সভাপতি অভিজিৎ শর্মার রাজ্যসভার সাংসদ এবং ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ১কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছে।  অভিজিৎ শর্মার অভিযোগ রঞ্জন গগৈ তার আত্মজীবনী জাস্টিস ফর এ জাজে  তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর এবং মানহানিকর বিবৃতি প্রকাশ করেছে । তাই তিনি প্রকাশক গগৈ এবং রুপা পাবলিকেশন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন  এবং কোনও বই প্রকাশ, বিতরণ বা বিক্রি করা থেকে বিরত রাখার জন্য অন্তবর্তী .....বিস্তারিত পড়ুন

টিউমার নির্মূল এর নতুন থেরাপিউটিক যা স্থায়ীভাবে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার দূর করে

উত্তরাপথ: একটি বহু-প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা দল একটি অভিনব ক্যান্সার থেরাপিউটিক তৈরি করেছে, অ্যান্টিবডি টুকরোগুলিকে আণবিকভাবে তৈরি করা ন্যানো পার্টিকেলগুলির সাথে একত্রিত করে, যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে আক্রান্ত ইঁদুরের ক্যান্সারকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করে। "হিট অ্যান্ড রান" ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম, কর্নেল প্রাইম ডটস (সি' ডটস) নামে পরিচিত, এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের জন্য একটি বহুমুখী এবং অভিযোজনযোগ্য চিকিত্সা হিসাবে সম্ভাব্যতা দেখায়, ন্যূনতম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং বিষাক্ততার সাথে। গবেষকদের একটি বহু-প্রাতিষ্ঠানিক দল আবিষ্কার করেছে যে একটি নতুন ক্যান্সার থেরাপিউটি .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top