

উত্তরাপথঃ একটি যুগান্তকারী গবেষণায়, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ৪ জুন বায়োসেন্সর এবং বায়োইলেক্ট্রনিক্সে রিপোর্ট করেছেন যে তারা একটি সিন্থেটিক মানুষের শ্বাস তৈরি করেছেন যা ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাসের সংস্পর্শে আসার পর ফুসফুসের ক্যান্সারের গন্ধকে অনুকরণ করে মৌমাছির মস্তিষ্কে পরিবর্তন দেখা দেবে ।গবেষকদের ধারণা এই পদ্ধতি সফল হলে আগামী দিনে ডাক্তাররা রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণের জন্য জীবন্ত সেন্সর হিসাবে ক্যান্সার ক্লিনিকগুলিতে মৌমাছি ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমএসইউ-এর ইনস্টিটিউট ফর কোয়ান্টিটেটিভ হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক দেবজিৎ সাহা বলেন, “পোকামাকড়ের ঘ্রাণশক্তি কুকুরের মতোই আশ্চর্যজনক।সাহার দল ছয়টি যৌগের বিভিন্ন স্তর ব্যবহার করে সিন্থেটিক শ্বাসের মিশ্রণের জন্য একটি “রেসিপি” তৈরি করেছে। একটি সংস্করণ একটি সুস্থ মানুষের শ্বাস তৈরি করেছে, এবং অন্যটি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসের রাসায়নিক মেকআপ তৈরি করেছে। মন্টপেলিয়ারে ফরাসি ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের রাসায়নিক পরিবেশবিদ ফ্লোরা গজরাহ বলেছেন, গন্ধ অনেক কীটপতঙ্গের প্রজাতির যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের জন্য, “এটি একটি ভাষা,” ।
প্রাণীদের ইন্দ্রিয় রোগের গন্ধ শনাক্ত করতে পারে এমন ধারণা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে কুকুর মানুষের ঘামের গন্ধের মাধ্যমে কোবিদ ১৯ কেস সনাক্ত করতে সক্ষম।এছাড়াও অনেক পোকামাকড়েরও রোগ শনাক্ত করার ক্ষমতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পিঁপড়াদের ল্যাবের খাবারে জন্মানো ক্যান্সার কোষের গন্ধ চিনতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলে যেতে পারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত, মৌমাছির ক্ষমতা এতটা স্পষ্ট ছিল না।পোকামাকড়ের নিউরন সরাসরি পরীক্ষা করার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা সরাসরি আচরণগত প্রশিক্ষণ ছাড়াও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, সন্দেহজনক কিছু গন্ধ পেলে কুকুরকে বসতে শেখাতে কয়েক সপ্তাহ সময় নেওয়ার পরিবর্তে, দলটি সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে এর উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করেন।
গবেষকরা মৌমাছির মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেছেন, গন্ধ প্রক্রিয়া করার জায়গায় তারের সাথে সংযুক্ত করেছেন। একটি ডিভাইস পোকামাকড়ের অ্যান্টেনায় বাতাসের পাফ সরবরাহ করে, যেমন একজন সেলসম্যান পারফিউম কাউন্টারে সুগন্ধ স্প্রে করেন।প্রতিটি পাফে মিশ্র গন্ধের পরিবেশ থাকতে পারে, যেমন স্বাস্থ্যকর মানুষদের দ্বারা উৎপন্ন নিঃশ্বাসের গন্ধ এবং আরেকটি মিশ্রণ ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগীদের শ্বাসের অস্পষ্ট গন্ধের অনুকরণ করে, একটি স্বতন্ত্র গন্ধ যা মানুষের নাকে সম্পূর্ণরূপে সনাক্ত করা যায় না। মৌমাছির মস্তিষ্ক থেকে পড়া বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহার করে, গবেষকরা কমপক্ষে ৯৩ শতাংশ সময় দুই ধরনের সিন্থেটিক শ্বাসের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষণার ফলাফলগুলি দেখিয়েছে যে মৌমাছির মস্তিষ্ক ফুসফুসের ক্যান্সারের শ্বাসের নমুনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের স্বতন্ত্র নিদর্শন প্রদর্শন করে,যা দেখায় যে মৌমাছিরা রোগের উপস্থিতি সনাক্ত করতে সক্ষম। এই আবিষ্কার মৌমাছির অনন্য ঘ্রাণ ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে সেন্সর সহ একটি শ্বাস আবিষ্কারক যন্ত্রের বিকাশের পথ তৈরি করতে পারে।
গবেষণা দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল একটি অ-আক্রমণকারী এবং সাশ্রয়ী শ্বাস আবিষ্কারক তৈরি করা যা সঠিকভাবে এবং দ্রুত ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করতে পারে। গন্ধের মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করার জন্য মৌমাছির প্রাকৃতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে, এই অভিনব পদ্ধতিটি ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে । বর্তমানে, ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সিটি স্ক্যান এবং বায়োপসির মতো ইমেজিং কৌশল, সেইসাথে রক্তে বায়োমার্কার সনাক্তকরণ। এই পদ্ধতিগুলি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। শেষ পর্যন্ত রোগীর রোগ নির্ণয় কারার ক্ষেত্রে এই নতুন পদ্ধতির আবিষ্কার এতদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতির ফলাফলকে আরও উন্নত করতে পারে।
সিন্থেটিক মানুষের শ্বাসের সূত্রকে পরিমার্জন করতে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবহারের জন্য মৌমাছির মস্তিষ্ক সেন্সর প্রযুক্তিকে অপ্টিমাইজ করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যান্সার সনাক্তকরণের সম্ভাবনা শীঘ্রই বাস্তবে পরিণত হবে, যা রোগীদের এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য একইভাবে নতুন আশার আলো দেখাবে।
আরও পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন