উচ্চ মাত্রায় এই প্রোটিন মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়

উত্তরাপথঃ এক যুগান্তকারী আবিষ্কারে, বিজ্ঞানীরা ট্রপোনিন নামক নির্দিষ্ট প্রোটিন এর উচ্চ মাত্রায় আমাদের শরীরে উপস্থিতি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধির মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক চিহ্নিত করেছেন। আমাদের দেহে ট্রোপোনিনের বৃদ্ধি মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধির জন্য একটি অন্যতম কারণ।

এবার আসা যাক ট্রপোনিন কি ?এটি হ’ল কার্ডিয়াক পেশী কোষে পাওয়া একটি প্রোটিন যা হৃদরোগ সংক্রান্ত অবস্থার পর্যবেক্ষণের জন্য প্রধান চিহ্নিতকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ট্রপোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি মৃত্যুর ঝুঁকির সাথে ঘনিষ্ট ভাবে যুক্ত।

ট্রপোনিন হৃৎপিণ্ডের পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে জড়িত একটি মূল প্রোটিন। যখন কার্ডিয়াক পেশী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা চাপ পড়ে, তখন ট্রপোনিন রক্ত ​​​​প্রবাহের সাথে বেরিয়ে যায়।ট্রপোনিনের উচ্চ মাত্রা হার্টের পেশীতে আঘাত বা চাপ সৃষ্টি করে, যা সাধারণত হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর বা মায়োকার্ডাইটিসের মতো অবস্থার সাথে যুক্ত।

বিভিন্ন গবেষণায় ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছে যে ট্রপোনিন নামক নির্দিষ্ট প্রোটিন এর মাত্রা বৃদ্ধি মৃত্যুর ঝুঁকির সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। উচ্চতর ট্রপোনিনের মাত্রা গুরুতর কার্ডিয়াক আঘাত বা স্ট্রোক এর সম্ভাবনা সৃষ্টি করে, যা আমাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হতে পারে।

একজন ব্যক্তির কার্ডিয়াক সমস্যা সনাক্ত করার জন্য তার ট্রপোনিন স্তর সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রুটিন ট্রপোনিন পরীক্ষা, বিশেষ করে জরুরী বিভাগে, হৃদরোগের প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে এবং উপযুক্ত চিকিৎসার কৌশল নির্দেশ করতে পারে।এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশ অবস্থার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করতে পারে এবং মৃত্যুর হার কমাতে পারে।

যদিও ট্রপোনিন উচ্চতা সাধারণত কার্ডিয়াক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত,তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি এটিকে অ-কার্ডিয়াক অসুস্থতার সাথে যুক্ত করেছে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হিসাবে দায়ী করেছেন । সেপসিস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ এবং পালমোনারি এমবোলিজম সহ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মধ্যে উচ্চতর ট্রপোনিনের মাত্রা লক্ষ্য করা গেছে। পর্যবেক্ষণ থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে  ট্রপোনিন আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুর ঝুঁকির জন্য একটি মূল্যবান প্রগনোস্টিক মার্কার হিসাবে কাজ করে।

উচ্চ মাত্রায় ট্রপোনিনের উপস্থিতির তারতম্যের কারণে তীব্র কার্ডিয়াক ইভেন্ট, ক্রনিক কার্ডিয়াক কন্ডিশন এবং নন-কার্ডিয়াক অবস্থাগুলি যুক্ত। এক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা, যেমন ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং ইমেজিং স্টাডি, কার্ডিয়াক ফাংশন মূল্যায়ন করতে এবং অন্তর্নিহিত প্যাথলজি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

ট্রপোনিন উচ্চতা এবং বর্ধিত মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে সম্পর্ক জনস্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয় , বিশেষ করে যাদের কার্ডিয়াক সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য। তবে ট্রপোনিনের উচ্চতার প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও মূল্যায়ন,এর প্রতিকূল ফলাফলের সম্ভাবনা হ্রাস করে সামগ্রিক জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

যদিও ট্রপোনিন উচ্চতা অন্তর্নিহিত কার্ডিয়াক আঘাত বা স্ট্রোকের ইঙ্গিত দেয়, যা একজন ব্যক্তির জীবনধারা পরিবর্তনের জন্য একটি বিশেষ সতর্কতা বলা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, একটি সুষম খাদ্য, ধূমপান ত্যাগ এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সহ একটি হার্ট-স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা কার্ডিয়াক ইভেন্ট এবং মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। ট্রপোনিন উচ্চতা ব্যক্তিদের তাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন করতে এবং তাদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে পরামর্শ দেয় ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


জানুন ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক ডঃ শীলা অসোপা'র কথা

ত্তরাপথঃ ডঃ শীলা অসোপা, সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শ্যাম সদন, যোধপুরের অধ্যক্ষা, তিনি ১৭ বছর ধরে স্কুলের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন।তাঁকে শিশুদের শেখানোর নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, স্কুলের অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং উদ্ভাবনের জন্য ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষক পুরস্কারে পুরুস্কৃত করা হয়।  ডঃ অসোপাকে, যোধপুরে শ্যাম সদন, সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, ১০ মাস আগে বদলি করা হয় । সেই সময় দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে মাত্র দুটি কক্ষ ছিল।মেয়েরা টিনের চালা দিয়ে তৈরি ঘরে পড়াশোনা করত।  ঘর কম থাকায় গাছের নিচেও ক্লাস হত । তার কথায় ,সেই সময়টা বাচ্চাদের পড়াশুনা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় কেটেছে । এরপর টিনের চালা দিয়ে তৈরি কক্ষে কাঠের পার্টিশন দিয়ে ৬টি কক্ষ তৈরি করা হয়। .....বিস্তারিত পড়ুন

রবি কিরণে “আদিত্য”

ড. সায়ন বসুঃ বীর "বিক্রমে" চাঁদের মাটিতে পা রাখার পর এবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র (ISRO)-এর লক্ষ্য সূর্য | আমাদের ৮টি গ্রহ (প্লুটো এখন বামন গ্রহের তালিকায়) যাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেই সূর্যের দিকে পাড়ি দিয়েছে "আদিত্য" ২রা সেপ্টেম্বর| চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের ১০ দিনের মাথায় আদিত্যকে সূর্যের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে ISRO বাকি বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলির কাছে যে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছে তা বলাই বাহুল্য| আদিত্য মিশনের সূচনা ২০০৮ সালের জানুয়ারী মাসে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত একটি উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে|প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয় যে একটি ছোট এবং কম ওজনের (৪০০ কেজি) কৃত্রিম উপগ্রহকে low Earth orbit (LEO ;লিও) যে কক্ষপথের উচ্চতা ১,২০০ কিলোমিটারের থেকে কম সেখানে পাঠানো হবে এবং তার কাজ হবে সূর্যের একদম যে বাইরের স্তর যাকে আমরা সৌর-করোনা বলি তার সম্বন্ধে তথ্য পাঠানো। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে কিছু মাছের প্রজাতি সঙ্কুচিত হচ্ছে

উত্তরাপথঃ আমাদের গ্রহে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা আমাদের পরিবেশের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করছে।সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে কিছু মাছের প্রজাতি সঙ্কুচিত হচ্ছে এর প্রভাবে। বিজ্ঞানীদের করা এই গবেষণাটি আমাদের মহাসাগরের উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ পরিণতি বলে মনে করা হচ্ছে। গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল দ্বারা পরিচালিা সাম্প্রতিক এই গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছের জনসংখ্যা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে কড এবং হ্যাডকের মতো বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সহ অসংখ্য প্রজাতির আকার গত কয়েক দশক ধরে হ্রাস পাচ্ছে। আকারের এই হ্রাস সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং মৎস শিল্প উভয় ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে উদ্বেগের কারণ হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

বৈধ নথি ছাড়া প্লেনে ওঠার চেষ্টা এটি কি নিছক কৌতুহল মেটানো

উত্তরাপথঃ এটি কি নিছক কৌতুহল না কি কিশোর দুস্ক্রিয়তা। সম্প্রতি বাংলাদেশ এর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট, টিকিট বা বোর্ডিং পাশ কোনও কিছু ছাড়াই জুনায়েদ নামের ১২ বছরের এক শিশু বৈধ নথি ছাড়া বিনা বাধায় কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও প্লেনে চড়তে ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। এবার কৌশল পালটে বিমানবন্দরে ঢোকে শিশুটি। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি বিভাগের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শাতে বলা  হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। যে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে, সেই কুয়েত এয়ারলাইন্সকেও শোকজ করা হয়েছে।  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, ছেলেটি ব্রোকেন ফ্যামেলি .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top