তরুণ ভারত কি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে?

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ ২০২৪ সালের তরুণ ভারত কি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে? তরুণ জনসংখ্যা দেশের ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য শতাংশ তৈরি করে, এবার ১.৮ কোটি ১৮-১৯ বছর বয়সী নতুন ভোটার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চলেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ এবং নিযুক্তি ভারতের ভবিষ্যত গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দীর্ঘদিন ধরে, ভারতের তরুণদের রাজনীতি এবং নির্বাচনের প্রতি উদাসীন হিসাবে দেখা হয়েছে। তাদের প্রায়ই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অনাগ্রহী এবং বিচ্ছিন্ন হিসাবে চিত্রিত করা হয়।কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই প্রবণতায় একটি লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ভারতের যুবকরা রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি সচেতন এবং সক্রিয় হয়ে উঠছে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উত্থান তাদেরকে বর্তমানে চলতে থাকা রাজনৈতিক সমস্যাগুলির সাথে পরিচিত করে তুলছে সেইসাথে তাদের নিজস্ব সমস্যা তাদেরকে আরও বেশী করে রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।

নির্বাচনের প্রতি তরুণ ভারতের আগ্রহ বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এমন একটি কারণগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল  দেশে চলতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি। অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে শুরু করে সামাজিক ন্যায়বিচারের ইস্যুতে, তরুণরা আরও সোচ্চার হয়ে উঠছে। তারা আর সুদিনের অপেক্ষায় বসে থাকতে রাজি নয়,তারা তাদের অধিকারের দাবিতে এবং সরকারকে জবাবদিহি করার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন ও বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।কানহাইয়া কুমার, অলকা লাম্বা সহ বিভিন্ন রাজ্যে তরুণ নেতাদের  রাজনীতিতে উত্থানের সাথে, যুবকরা তাদের প্রতিনিধিত্ব খুঁজে পাচ্ছে যে তাদের উদ্বেগ এবং আকাঙ্ক্ষার কথা বলে। এই নেতারা তরুণদের সাথে আরও ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ করতে সক্ষম যা রাজনীতিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলছে।

এছাড়াও তরুণ ভারতের রাজনৈতিক মতামত গঠনে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবকে ছোট করা যাবে না। টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি তরুণদের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক করার, তথ্য শেয়ার করার এবং তাদের  জন্য সমর্থন জোগাড় করার জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তা সে চন্দ্রযানের অনুসন্ধান, স্বচ্ছ ভারত, মেক ইন ইন্ডিয়া, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব সহ বিভিন্ন বিষয়ে বেশিরভাগ তরুণ প্রজন্ম সচেতন হচ্ছে  সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে।২০১৪ সালে, যে বছর মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, সেই বছর ভারতে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২১৩ মিলিয়ন।২০২৩ সালের মধ্যে, এই সংখ্যা এসে পৌঁছেছে ৮২০ মিলিয়নে।একই ভাবে ২০১৩-১৪ সালে, ১৮-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১২.৯%, এবং  স্নাতক ডিগ্রীধারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ছিল ২৮%, সরকারী তথ্য অনুসারে। ২০২১-২২ সালেও, যুব বেকারত্ব একই স্তরে ছিল, ১২.৫% , কিন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে  ২৫ বছরের কম বয়সী স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪২% হয়েছে।

আজকের তরুণ যারা রাজনীতিকে সামাজিক সমস্যা এবং সামাজিক পরিবর্তনের একটি উপায় হিসাবে দেখছে। তারা সামাজিক সমস্যাগুলির সাথে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে  বিশ্বকে পরিবর্তন করে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চাইছে।এবারের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বেশ কিছু তরুণ ভোটারদের সাথে কথা বলি। তবে এবারের প্রথমবারের ভোটারদের আগের প্রথমবারের ভোটারদের থেকে যা তাদের আলাদা করে তা হল তারা সকলেই নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে বড় হয়েছে। তারা বেশিরভাগই ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারকে গত ১০ বছর ধরে দেখেছেন।   তাদের মতে তরুণ প্রজন্মের হাতে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরও সরকারি চাকরির সুযোগ খুব সীমিত এবং দেশে মাত্র কয়েকজন মানুষ ধনী হয়েছে। বর্তমানে একটি সাধারণ পরিবারের মেধাবী ছাত্র নামী কলেজে যেতে পারে না।এই সময়ে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে কিন্তু শিক্ষিতদের জন্য বেকারত্বের হার একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।

এটা স্পষ্ট যে তরুণ ভারত ২০২৪ সালের আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে চিন্তা করে। তাদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সচেতনতা, সক্রিয়তা এবং ব্যস্ততার সাথে, তরুণরা দেশের ভবিষ্যত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। তারা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে যে পৃথিবী দেখে এবং এর বাইরে তারা যে বাস্তবতা দেখে তার মধ্যে ব্যবধান করতে শিখেছে।এই “মোদী প্রজন্ম”, যেমন একজন নতুন ভোটার সেই সাথে একজন ভালো পর্যবেক্ষক ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top