

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় টমেটোর উপকারিতা সম্পর্কে এক দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ খবর প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে লাইকোপিন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এমনকি বিষণ্ণতার লক্ষণগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতেও বিশেষ কার্যকরী।প্রসঙ্গত লাইকোপিন হল একটি লাল রঙ্গক যা টমেটো সহ বেশ কিছু ফল এবং সবজিতে পাওয়া যায়।লাইকোপিন মূলত তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, যার অর্থ এটি আমাদের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই নতুন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে লাইকোপিন এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু করতে পারে, বিশেষ করে যখন মস্তিষ্কের কার্যকারিতার কথা আসে।
‘ Food Science & Nutrition ‘ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা গেছে এমন এক ইঁদুরের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর লাইকোপিন কীভাবে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন যে এই ইঁদুরদের হিপোক্যাম্পাসে সমস্যা ছিল, যা মস্তিষ্কের একটি অংশ যা স্মৃতিশক্তি এবং মেজাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যখন হতাশাগ্রস্ত ইঁদুরদের লাইকোপিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল, তখন তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হয়েছিল। এই চিকিৎসা হিপোক্যাম্পাসের দুর্বলতা কমিয়েছে এবং প্রাণীদের আচরণ উন্নত করেছে। এর থেকে বোঝা যায় যে লাইকোপিন মানসিক বিষণ্ণতার সাথে লড়াই করা লোকেদের সম্ভাব্যভাবে সাহায্য করতে পারে।
লাইকোপিন কীভাবে কাজ করে?
গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল যে লাইকোপিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) নামক একটি প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, শেখার এবং স্মৃতিশক্তির জন্য BDNF গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ইঁদুরগুলিতে, BDNF সম্পর্কিত সংকেত পথটি সঠিকভাবে কাজ করছিল না। তবে, লাইকোপিন দিয়ে চিকিৎসার পর, এই পথটিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, যা মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করতে সাহায্য করেছিল।
গবেষকদের বিশ্বাস যে তাদের নতুন আবিস্কার মানসিক বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে কার্যকরী চিকিৎসার জন্য নতুন পথ দেখাবে। তারা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে লাইকোপিন কিভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কার্যক্ষমতাকে উন্নত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই গবেষণাটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার এবং বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি প্রাকৃতিক উপায় হিসাবে লাইকোপিনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কথা তুলে ধরে। যদিও গবেষকদের মতে এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবে এই ক্ষেত্রে প্রাথমিক ফলাফল আশাব্যঞ্জক। আমাদের খাদ্যতালিকায় টমেটো, তরমুজ এবং গোলাপী জাম্বুরার মতো লাইকোপিন সমৃদ্ধ খাবার রাখলে তা কেবল আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক সুস্থতাও বৃদ্ধি করতে পারে।
সূত্রঃ “Lycopene Alleviates Depression-Like Behavior in Chronic Social Defeat Stress-Induced Mice by Promoting Synaptic Plasticity via the BDNF–TrkB Pathway” by Heyan Xu, Yuna Wang, Dandan Geng, Fengming Chen, Yujia Chen, Lisa Cynthia Niwenahisemo, Lei Shi, Ning Du, Ziqiang He, Xiaoming Xu and Li Kuang, 22 January 2025, Food Science & Nutrition.
DOI: 10.1002/fsn3.70003
আরও পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে
উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন