সম্পাদকীয়- শহরে প্রায় অর্ধেক বয়স্ক জনসংখ্যা সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছে না

সম্প্রতি একটি নতুন সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে যা ভারত জুড়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের উপর করা হয়েছে।সমীক্ষায়  একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা উঠে এসেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে আমাদের শহরে, প্রায় অর্ধেক বয়স্ক জনসংখ্যা সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতে অক্ষম।এক্ষেত্রে বিভিন্ন বয়স্ক ব্যক্তি ডাক্তারের কাছে যেতে অক্ষম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল আর্থিক সীমাবদ্ধতা, কারণ অনেক বয়স্ক ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট আয়ে জীবনযাপন করেন এক্ষেত্রে চিকিৎসায় অতিরিক্ত ব্যায় তাদের উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ তৈরি করে, সেইসাথে যাতায়াতের জন্য পরিবহনের সমস্যা সহ শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছে।

বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এজওয়েল মোট ১০,০০০ জন ব্যক্তির উপর তাদের সমীক্ষা করেন।তারা তাদের সমীক্ষায় প্রাপ্ত কিছু মানুষের মতামত প্রকাশ করেছেন।তারা তুলে ধরেছেন, আগ্রার বাসিন্দা প্রভাকর শর্মার কথা, যিনি এক দশক ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, তিনি নিয়মিত হাসপাতালে চেক-আপের জন্য যাওয়াকে বিরক্তিকর এবং সমস্যাজনক বলে মনে করেন, সেই কারণে প্রায়শই তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা স্থগিত করতে বাধ্য হন।

সমীক্ষা অনুসারে, লুধিয়ানার ৭২ বছর বয়সী রাজেশ কুমার ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।  গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উচ্চ খরচ কুমারের জন্য একটি সমস্যা যিনি সম্পূর্ণরূপে তার অবসরকালীন পেনশনের উপর নির্ভর করে।  সমীক্ষা প্রতিবেদনে রাজেশকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে , যদি তার কোনও স্বাস্থ্য বীমা থাকত… সে তাহলে আরও ভাল চিকিৎসা পরিষেবা   নিতে পারত।

এনজিওটি বলেছে যে সমীক্ষায় শহরাঞ্চলে ৪৮.৬ শতাংশ বয়স্ক মানুষ বলেছেন যে তারা আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং পরিবহন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের কারণে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না এবং গ্রামীণ এলাকায় এই সংখ্যা ছিল ৬২.৪ শতাংশ। শহরাঞ্চলে, ৩৬.১ শতাংশ বয়স্ক উত্তরদাতারা দাবি করেছেন যে তারা প্রয়োজনে হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের কাছে যান।সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৪ শতাংশ একা থাকেন যা তাদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সহ স্বাস্থ্য উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

এনজিওটি বলেছে যে ২০২৪ সালের এপ্রিলে পরিচালিত সমীক্ষাটি ভারতের ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের দ্বারা মোট ১০,০০০ উত্তরদাতাদের উপর করা হয়। এর মধ্যে ৪,৭৪১ জন গ্রামীণ এবং ৫,২৫৯ জন শহরাঞ্চলের।এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।  স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সামাজিক জীবনে বয়স্ক ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে দাঁড়ায়, আর্থিক সীমাবদ্ধতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

আমাদের দেশের সমস্ত বয়স্ক জনসংখ্যা’র কাছে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার সুযোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এই ক্ষেত্রে এমন প্রোগ্রামগুলির জন্য তহবিল বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে যা নিম্ন আয়ের বয়স্ক ব্যক্তিদের আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবায় সহায়তা প্রদান করবে। সেইসাথে, সরকারকে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য পরিবহন বিকল্পগুলি উন্নত করতে এবং বাড়িতে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিকে যাতে পৌঁছে দেওয়া যায় সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


পোল্ট্রি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে নতুন জিন প্রযুক্তি

উত্তরাপথ - পোল্ট্রি শিল্পে পুরুষ ছানা মারার অভ্যাস দীর্ঘকাল ধরে নৈতিক উদ্বেগের বিষয়।পরিসংখ্যানে প্রকাশ প্রতি বছর পোলট্রিগুলিতে ৭ বিলিয়ন পুরুষ ছানাকে হত্যা করা হয়।কারণ পুরুষ ছানারা ডিম দিতে পারে না সেই সাথে তারা  মাংসের জন্যও উপযুক্ত না হওয়ার কারণে,তারা অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক বলে বিবেচিত হয় । সেই কারণে ডিম ফোটার পরপরই তাদের euthanized করা হয়।এবার এই সমস্যা সমাধানে মধ্য ইস্রায়েলের Yuval Cinnamon এর গবেষণাগারে এক নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হয় যার দ্বারা সমস্ত ছানাই মহিলা হবে।এক্ষেত্রে পুরুষ ছানাগুলিকে সম্পূর্ণভাবে ডিম থেকে বেরোনোর আগেই তাদের বাঁধা দেওয়া হবে। এই নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার মুর্গীর পুরুষ ছানাগুলিকে প্রায়শই ম্যাসারেশন বা গ্যাসিং পদ্ধতির মাধ্যমে হত্যা করার মত অমানবিক কাজ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ভোরের শুকতারা

অনসূয়া পাঠকঃ বাস ছাড়তে তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিলো, আমি মা বাবার সাথে বাসের ভেতরে জানালার দিকের সিটটায় বসে আছি। এমন সময় দেখি আমাদের পাশের সিটে বসে একজন রবীন্দ্রনাথের সঞ্জয়িতা পড়ছেন, বইটাকে দেখে আমার চোখের সামনে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা পরা মুখ ভেসে উঠলো, চন্দন স্যারের মুখ। বছর পাঁচেক আগের কথা, আমার বাবা তখন জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের আমলাশুলির পোষ্টমাষ্টার। দু কিমি দূরেই আমার পিসীমার বাড়ি। ওখানেই আমার হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু। আর যে স্যার আমার মননে সদা জাগরুক , বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ বলা যায় যাকে , আমার গল্প যাঁকে নিয়ে সেই চন্দন স্যারকে ওখানেই পাওয়া। ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ক়াঁচা পাকা চুল , সরু গোঁফ চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, .....বিস্তারিত পড়ুন

WORLD CUP 2023: আফগানিস্তান  ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করল,অধিনায়কত্ব করবেন হশমতুল্লাহ শাহিদি   

উত্তরাপথঃ আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ২০২৩-এর জন্য একটি শক্তিশালী ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে,এই দলে ফিরেছেন নবীন-উল-হক। ৫ অক্টোবর থেকে ভারতে শুরু হতে চলেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ,চলবে১৯ নভেম্বর পর্যন্ত।  এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের দলে ফিরেছেন নবীন-উল-হক, যিনি এশিয়া কাপে দলের অংশ ছিলেন না।১৫ সদস্যের আফগান দলের অধিনায়কত্ব করবেন হশমতুল্লাহ শাহিদি ।একই সময়ে, ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আজমতুল্লাহ ওমরজাই, যিনি এশিয়া কাপের দলে ছিলেন না, তিনিও বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

ধানের সাধ ভক্ষণ : জিহুড়

ড.  নিমাইকৃষ্ণ মাহাত: আশ্বিন সংক্রান্তিতে কৃষক সমাজের মধ্যে জিহুড় পার্বণ পালিত হয়। কৃষক সাধারণের মধ্যে জিহুড় পার্বণের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জিহুড় অর্থাৎ আশ্বিন সংক্রান্তির সময় বহাল জমিতে লাগানো ধান বা বড়ান ধানে থোড় আসতে শুরু করে। সুতরাং ধান গাছ গর্ভাবস্থায় থাকে। মানুষের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের আচার-সংস্কার পালন করা হয়। এই সংস্কারগুলির অন্যতম হলো " ন' মাসি " অর্থাৎ গর্ভাবস্থার নবম মাসে যে আচার -অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এর কিছুদিন পরেই সন্তানজন্মগ্রহণ করে। মানব- সমাজের গর্ভাবস্থাজনিত এই ধরনের আচার সংস্কারের সঙ্গে ধান গাছের গর্ভাবস্থার কারণে পালনীয় অনুষ্ঠান জিহুড়ের সাদৃশ্য থাকে দেখা যায়। সেই জন্য অনেকে জিহুড় অনুষ্ঠানকে ধান গাছের 'সাধভক্ষণ'  বলে থাকেন। জিহুড়-এ ধান গাছ .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top