বসন্তবাতাসে

ছবি সৌজন্য – অসীম পাঠক

অসীম পাঠকঃ মন খারাপের এক অলস বসন্ত সন্ধ্যায় শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে অফিস ছুটি করে ফ্ল্যাট বন্দী আমি, মনের গহন গভীরে ফেলে আসা কোন এক নির্জন সন্ধ্যার ছবি। অফিস থেকে একটা কনফারেন্স এটেন্ড করার জন্য আমাকে রূপসার সাথে রাঁচী যেতে হয়েছিলো। ঝাড়খণ্ডের রাঁচী কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ে কৃষি বিপননের উপর আমাদের প্রোজেক্ট কতটা কার্যকরী সেই আলোচনা শেষ করে ফেরার পথে গাড়িতে বসে রূপসা বললো , ” কিছু সাইড সিন দেখালি না, তুই বড্ডো কাজ পাগলা হয়ে যাচ্ছিস”। গুগল সার্চে পেলাম ফেরার রাস্তায় জোনহা ফলস, আদিবাসী গ্রাম ঘেরা দলমা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে জোনহা ফলস। এক অপরূপ মৌন প্রশান্তিতে ছেয়ে আছে আরন্যক নির্জনতা। শীত শেষের শেষ বেলার সূর্য যেনো মায়াবী আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে সবুজ বনাঞ্চল।

মনের আকাশ জুড়ে রিমঝিম বৃষ্টি আর ভালোবাসার রামধনু। আমার হাতে রূপসার হাত। আমাকে ধরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামলো, পাথরের চাঁই এর উপর বসে বিদায়ী সূর্যের অস্তরাগের নীচে সেলফি নিলো রূপসা আমাকে জড়িয়ে। সেটা কি বন্ধুত্বর উষ্ণতা মেশানো জড়ানো … আমি যেনো মন্ত্রমুগ্ধের মতো সম্মোহিত। বলতে গিয়েও বলতে পারিণি, এভাবেই কেটে যাক না কত সহস্র বছর। সময়ের দিনলিপিতে আটকে থাক এই না বলা কথার মুহূর্ত। বলতে পারিণি , তোর গায়ের মিষ্টি গন্ধটা ভীষণ ভালো লাগে রূপসা। সেই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় বলা হয়ে ওঠেনি , তোকে ভালোবাসি , তোকে ছাড়া আর কাওকেই ভালো লাগে না। হঠাৎই এলোমেলো ভাবনায় ছন্দ পতন। কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলে দেখি সহকর্মী শুধু নয় কলেজের বান্ধবী রূপসা। রূপসা প্রায়ই আসে ,আমিও যাই ওদের বাড়ি। বন্ধুত্বটা মন্দ নয়, সেই সাথে একটা অদ্ভুত ভালোলাগা মিশে আছে। সেটা ভালোবাসা কিনা জানিনা। তবে রূপসা র সান্নিধ্য আমাকে ব্যাকুল করে। আর রূপসার ও কি তাই হয় ? অলস মনের ভাবনায় ভাসে কোনো এক নির্জন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে বলি,”ভালো লাগে তোর কথা শুনতে, ভালো লাগে তোর কথা ভাবতে, তোকে দেখতে, ভালোলাগে তোকে ভালোবাসি, কিন্তু বলা আর হয়ে ওঠে না। তো রূপসার আগমনে খুশী হয়ে বলি -“, কি খাবি বল ফুচকা এগরোল মোগলাই চিকেন চাওমিন ” যতগুলো ফাস্ট ফুডের নাম জানি এক নাগাড়ে বলে যাই। রূপসা ধমকে বলে ” কিছু না , ঝালমুড়ি “। আমি একটু খুশী ই হই , আমি নিজে বানাবো। ক্রেডিটটা ওই ফাস্ট ফুড বালা পাবে না। আমার ফ্রিজে টম্যাটো শশা কাঁচালঙ্কা পেঁয়াজ ছোলা ধনেপাতা সব ই রয়েছে। চানাচুরের প্যাকেট টা দেখেনি, ঠিক ই আছে ,হয়ে যাবে। এই রে সবই আছে মুড়ি টাই নেই। রূপসা কে বসতে বলে মুড়ি আনতে বেরোই। “আজ অফিস যাসনি কি হয়েছে রে?” হঠাৎই রূপসার জিজ্ঞাসা । আমি বলি” ঝালমুড়ি খেতে খেতে বলবো”। মুড়ির প্যাকেট আনতে আনতে ভাবি কি গল্প বানাবো, এসে দেখি রূপসা সব কেটে রেডি করেছে। আমি চা বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। রূপসা বলে তোর চা বানানো আর মিথ্যা গল্প বানানো এক ই ব্যাপার। রূপসা যে কি করে সব বোঝে বুঝি না। মেয়েদের কি পঞ্চেন্দ্রিয় বেশী সজাগ? ছেলেদের যেমন ষড়ঋপু। বসন্ত সন্ধ্যায় মন্দ নয় গরম চা এর সাথে ঝাল মুড়ি আর চোখের সামনে তরতাজা সুন্দরী মেয়ে। হঠাৎই কালো মেঘে ছেয়ে যায় চারদিক। আকাশ ঘিরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। মেঘের গর্জন আর অকাল বর্ষনে নাজেহাল ব্যস্ত জনপদ ।আমরা দুজনেই যেনো ঘসা কাঁচের ভেতরে বৃষ্টি ভেজা পৃথিবী। বৃষ্টি কখন থেমেছিলো মনে নেই। কেননা ইঁট কাঠ কংক্রিটের শহর গলি থেকে রাজপথ সব ভিজেছিলো বসন্তের অকাল বর্ষনে ,আর আমি বসন্ত বাতাসে ভিজেছিলাম রূপসা তে। যখন বৃষ্টি থামে তখন নেই কোন আভরণ , আমরা একজন আর একজনকে গভীর ভাবে জড়িয়ে আদিমতার অন্ধকারে মগ্ন। বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার সফেন সমুদ্রে নম্র অবগাহনে ব্যাস্ত মনি মুক্তা কুড়িয়ে নিতে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top