শিশুদের নিয়মিত চিনাবাদাম খাওয়ানোর ফলে অ্যালার্জির হার ৭১% কম হয়ে যায়

উত্তরাপথঃ পশ্চিমের দেশগুলিতে বেশ কিছু বছর ধরে চিনাবাদামের অ্যালার্জি বাড়ছে। উত্তর আমেরিকা, ব্রিটেন, পশ্চিম ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার ছোট বাচ্চাদের চিনাবাদামের অ্যালার্জির প্রবণতা প্রায় ২%।কিছু লোকের জন্য, এমনকি অল্প পরিমাণে চিনাবাদামও প্রাণঘাতী অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।এই কারণে অনেক পিতামাতা শিশুদের খাদ্যতালিকায় চিনাবাদাম অন্তর্ভুক্ত করতে ভয় পান।

 সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশব থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের নিয়মিত চিনাবাদাম খাওয়ানোর ফলে বয়ঃসন্ধিকালে অ্যালার্জির হার ৭১% কম হয়ে যায়।এনইজেএম এভিডেন্স (NEJM Evidence) জার্নালে এই সপ্তাহে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে যে প্রথম দিকে নিয়মিত চিনাবাদাম সেবন শিশুদের মধ্যে “স্থায়ী সহনশীলতা” তৈরি করছে, এমনকি অনেক অংশগ্রহণকারী যারা পরে চিনাবাদাম খাওয়া বন্ধ করেও দিয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও অ্যালার্জির হার স্থায়ী ভাবে কম হয়ে গেছে।

নতুন গবেষণার ফলাফল LEAP-Trio গবেষণা থেকে পাওয়া লার্নিং আর্লি অ্যাবাউট পিনাট অ্যালার্জি (LEAP) ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।গবেষকরা গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেককে শৈশব থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত চিনাবাদাম খেতে বলেন,  বাকি অর্ধেককে এই সময়ের মধ্যে চিনাবাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন।

গবেষকরা দেখেছেন যে শিশুদের জীবনের প্রথম দিকে চিনাবাদাম খাওয়ানো হয়েছিল ৫ বছর বয়সের পর তাদের  চিনাবাদামের অ্যালার্জির ঝুঁকি ৮১% পর্যন্ত কম হয়ে গেছে। তদন্তকারীরা ৬ বছর থেকে ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের উভয় গ্রুপের  অর্থাৎ চিনা বাদাম খাওয়া এবং না খাওয়া উভয় গ্রুপের অধ্যয়ন করে গবেষকরা দেখেছে যে গ্রুপের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অ্যালার্জির হার ১৫.৪% যারা শৈশবে চিনাবাদাম এড়িয়ে চলেছিল এবং শৈশবে চিনাবাদাম খাওয়া গ্রুপের অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে অ্যালার্জির হার ৪.৪% ।এই ফলাফলগুলি দেখায় যে নিয়মিত, প্রাথমিক চিনাবাদাম সেবন প্রাথমিক চিনাবাদাম পরিহারের তুলনায় বয়ঃসন্ধিকালে চিনাবাদামের অ্যালার্জির ঝুঁকি ৭১% কমিয়ে দেয়।

কিংস কলেজ লন্ডনের সহ-প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক জর্জ ডু টয়েট বলেছেন: “এটি একটি নিরাপদ এবং অত্যন্ত কার্যকরী দুধের বিকল্প যা ৪ মাস বয়স থেকে শুরু করা উচিত।

গবেষকরা আরও দেখেছেন যে যদিও LEAP চিনাবাদাম-ভোগ গ্রুপের অংশগ্রহণকারীরা তাদের শৈশবে অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় বেশি চিনাবাদাম খেয়েছিল, তবে চিনাবাদাম খাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি  , পরিমাণে এবং তারা কতটা সময় খাননি তার মধ্যে দুটি গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ছিল। গবেষকদের মতে শৈশব থেকে চিনাবাদাম খাওয়ার প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব শৈশব এবং কৈশোর জুড়ে অব্যাহত ছিল এমনকি চিনাবাদাম পণ্যগুলি ধারাবাহিকভাবে খাওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই।

 নতুন গবেষণা পরামর্শ দেয় যে অল্প বয়সে শিশুদের চিনাবাদাম পরিচয় করিয়ে দেওয়া পরবর্তী জীবনে চিনাবাদামের অ্যালার্জির বিকাশ রোধ করতে সহায়তা করতে পারে।নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বাচ্চারা যারা চিনাবাদাম এড়িয়ে চলে তাদের তুলনায় চিনাবাদামের অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি খুব কম ছিল।

গবেষণাটি ৬০০ টিরও বেশি শিশুকে অনুসরণ করে দেখায় যারা চিনাবাদামের অ্যালার্জির জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল তাদের গুরুতর একজিমা, ডিমের অ্যালার্জি বা উভয়ই ছিল। অর্ধেক শিশুকে ৪-১১ মাস বয়স থেকে নিয়মিত চিনাবাদামের পণ্য দেওয়া হয়েছিল, বাকি অর্ধেক সম্পূর্ণরূপে চিনাবাদাম এড়িয়ে গিয়েছিল।পাঁচ বছর পর, গবেষকরা দেখেছেন যে চিনাবাদামের সংস্পর্শে আসা শিশুদের মধ্যে মাত্র ৩.২%চিনাবাদাম এলার্জি তৈরি করেছিল। অন্যদিকে যারা চিনাবাদাম এড়িয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে এই অ্যালার্জির হার ১৭.২%। সুরতাং গবেষণা পরামর্শ দেয় যে চিনাবাদামের সাথে তাড়াতাড়ি এক্সপোজার সহনশীলতা তৈরি করতে এবং অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে পিতামাতাদের তাদের শিশুদের চিনাবাদাম খায়ানো শুরু করার আগে তাদের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত, বিশেষ করে যদি অ্যালার্জির পারিবারিক ইতিহাস থাকে। অল্প পরিমাণে চিনাবাদামের দ্রব্য দিয়ে শুরু করা এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যেমন আমবাত, বমি বা শ্বাসকষ্টের কোনো লক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।অ্যালার্জি যেকোন বয়সে বিকশিত হতে পারে, তাই সতর্ক থাকা এবং প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top