হোয়াইট বোতাম মাশরুম অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে

উত্তরাপথঃ হোয়াইট বোতাম মাশরুম, সাধারণভাবে বাজারে বিক্রি হওয়া একটি সাধারণ মাশরুম। সাধারণভাবে লোকে এর পুষ্টিগত গুণাগুন বিবেচনা করে এটিকে খাওয়া্র জন্য ব্যবহার করে। সাম্প্রতি  পেন স্টেট কলেজ অফ এগ্রিকালচারল সাইন্সেজের বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপ সাদা বোতাম মশরুমে  একটি নতুন যৌগের উপর আলোকপাত করেছে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এরগোথিওনিন, একটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিড, এটিকে সাদা বোতাম মাশরুমে পাওয়া মূল যৌগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা তাদের সম্ভাব্য অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক অবদান রাখে। এই যৌগটি মানব দেহে উৎপাদিত হয় না, তবে মাশরুমের মতো খাদ্য থেকে এটি পাওয়া যেতে পারে।

এরগোথিওনিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এই বৈশিষ্ট্যগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ থেকে অন্ত্রের আস্তরণকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।

অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা, আমাদের পরিপাকতন্ত্রে বসবাসকারী অণুজীবের একটি জটিল সম্প্রদায়, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে এরগোথিওনিন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার একটি স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। এটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধিকে বাধা দেওয়ার সাথে সাথে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে আরও বাড়াতে সাহায্য করে।

একটি সুস্থ অন্ত্র একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এরগোথিওনিনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে, সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।

প্রাথমিক গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ergothioneine ক্যান্সার-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে।কিন্তু এই বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে  স্থাপনের জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবে এই গবেষণার ফলাফলগুলি আমাদের  ঈঙ্গিত দেয় যে হোয়াইট বোতাম মাশরুম খাওয়া কিছু ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের সাথে সম্পর্কিত ক্যান্সারে।

হোয়াইট বোতাম মাশরুমের সম্ভাব্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে, একটি সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের খাবারে এই হোয়াইট বোতাম মাশরুমগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার কয়েকটি সহজ উপায় হল;-

 সাদা বোতামের মাশরুমগুলিকে স্লাইস বা ডাইস করুন এবং এটিকে সালাদে যোগ করুন।

ভাজা মাশরুমগুলি পাস্তা, ভাত বা অন্য খাবারে যোগ করে এটিকে আরও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর করে তুলুন।

সাদা বোতাম মাশরুমগুলিকে দিয়ে পিউরি তৈরি করুন । এখাড়াও অধিক স্বাদ এবং পুষ্টির জন্য এটিকে স্যুপ, সস বা স্টুতে যুক্ত করুন৷

সাদা বোতাম মাশরুমের একটি মূল যৌগ হিসাবে এরগোথিওনিনের আবিষ্কার আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে বিশেষ ভাবে করে। এই মাশরুমটিকে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা যেমন অন্ত্রকে স্বাস্থ্যকর রাখতে পারি তেমনি এটি আমাদের, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে পারে এবং সম্ভাব্য কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top