ইজরায়েলের আকাশে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রের আনাগোনা। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কেন এই যুদ্ধের মেঘ?

এই প্রথম ইরান সরাসরি ইসরাইলকে আক্রমণ করল।এর আগে ইসরায়েল এবং ইরান এক বছরব্যাপী ছায়া যুদ্ধে লিপ্ত ছিল – দায় স্বীকার না করেই একে অপরের সম্পদে হামলা চালিয়েছিল।গত অক্টোবরে কাছাকাছি ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের উপর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পরে গাজায় বর্তমান যুদ্ধের সময় এই আক্রমণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।শনিবার রাত থেকেই ইজরায়েলের আকাশে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রের আনাগোনা। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কেন এই যুদ্ধের মেঘ ঘনাল? হঠাৎ কেন তেল আভিভে আক্রমণ শানাল তেহরান?

রাষ্ট্রসংঘের চার্টারের ৫১ নম্বর ধারার উল্লেখ করে ইরান বলছে, আত্মরক্ষার স্বার্থেই এই আক্রমণ। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইজরায়েল। যেখানে অন্তত ১৩ জন প্রাণ হারান। মৃতদের মধ্যে ছিলেন দুজন ইরানি সেনাকর্তাও। এই হামলার পিছনে ইজরায়েলের ‘হাত’ দেখছে তেহরান। ইজরায়েলি আগ্রাসনের সামনে আত্মরক্ষার্থেই এই হামলা বলে দাবি ইরানের। রাষ্ট্রসংঘে দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইজরায়েল যদি আর একটা ভুল করে তাহলে শাস্তি হবে আরও কঠিন।কূটনৈতিক মহলের একাংশের মত, ব্যাপারটা এতটাও সহজ নয়। ইরানের হামলার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণও।

শুরু থেকেই গাজায় ইজরায়েলের ধ্বংসাত্মক হামলাকে ভালোভাবে নেয়নি ইরান। তেহরানের তরফে বারবার প্যালেস্তিনীয়দের উপর হামলার নিন্দা করা হয়। তবু পিছু হটেনি তেল আভিভ। বরং তারা আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়ায়। ইজরায়েলকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। মদত জোগাচ্ছিল তেহরান। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। তাদের কার্যত ল্যাজেগোবরে করে ছেড়েছে তেল আভিভ। আর তাই রাগে ফুঁসছিল ইরান।

ইজরায়েলকে মার দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইরানের ‘ছায়াযোদ্ধা’ হাউথিও। কিন্তু তারাও সুবিধা করতে পারেনি। এদিকে লেবাননের হেজবোল্লারা চলে ইরানের রাইসি সরকারের ইশারায়। ইরাক-সিরিয়ায় মার্কিন ফৌজকে পালটা মার দিতে মিলিশিয়া গোষ্ঠীতেও টাকা ঢালছে তেহরান। কিন্তু কোনওদিকেই বিশেষ সুবিধা হয়নি। তাই এতদিন ‘জায়নবাদে’র বিরুদ্ধে তারা ‘ছায়াযুদ্ধ’ চালালেও চার দশকের মধ্যে এবারই সরাসরি ইজরায়েলে হামলা করল তারা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছে, ইজরায়েল-আমেরিকাকে বার্তা দিতেই এবার হামলা। কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির ‘প্রধান’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে ইরান। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যদি তারা এগিয়ে এসে পদক্ষেপ না করত, তবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেত। জল যাতে সেদিকে না গড়ায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা। শুধু কি তাই?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইজরায়েলে হামলা করে আমেরিকাকেও বার্তা দিয়ে রাখল ইরান। ওয়াশিংটন যাতে ইজরায়েলের ‘আগ্রাসী’ মনোভাবকে কোনওভাবেই সমর্থন না করে। সমর্থন করলে ‘শেষ না হওয়া এক যুদ্ধে’ জড়িয়ে যাবে আমেরিকাও। কারণ, ইতিমধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে তারা। নতুন করে ‘ফন্ট’ খুললে বিপাকে পড়বে মার্কিন প্রশাসন। একাধিক যুদ্ধে জড়াতে শুরু করলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে বাহিনী সরাতে হবে। সেক্ষেত্রে খোলা মাঠ পেয়ে যাবে চিন। যা আমেরিক জন্য ভালো হবে না।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাজা মহম্মদ ও সি সেল মিউজিয়াম

প্রিয়াঙ্কা দত্তঃ রাজা মহম্মদ, এমন একজন মানুষের নাম, যার ব্যাক্তিগত ইচ্ছার কাছে হেরে যায় সব বাধা। ইচ্ছার চেয়ে বলা ভালো নেশা। সামুদ্রিক প্রাণীদের খোল সংগ্রহের নেশা। যা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই ছুটিয়ে নিয়ে বেরিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর ধরে। আর সেই দীর্ঘ পথের শেষে , তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাক্তিগত সংগ্রহশালা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সি সেল মিউজিয়ামটি বর্তমানে চেন্নাইয়ের মহাবলিপূরম মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। রাজা মহম্মদ ছোট্ট বেলা থেকেই  সমুদ্র তট থেকে সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাংশ। কুড্ডালোর থেকে রামেশ্বরম এর সমুদ্রতট, সেখান থেকে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশে গিয়েছেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। সংগ্রহ করেছেন অসাধারণ সব সামুদ্রিক .....বিস্তারিত পড়ুন

বিক্রম সারাভাই: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার একজন দূরদর্শী পথিকৃৎ

উত্তরাপথঃ ডঃ বিক্রম সারাভাই ছিলেন ভারতের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। তিনি একজন বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, শিল্পপতি এবং স্বপ্নদর্শীর ভূমিকা সমন্বিত, ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক হিসাবে বিখ্যাত।তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ভারত মহাকাশ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এর প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম সেরা সাফল্য। তিনি রাশিয়ান স্পুটনিক উৎক্ষেপণের পর ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য মহাকাশ কর্মসূচির গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারকে সফলভাবে বোঝান।এরপর ডঃ হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা, যিনি ভারতের পারমাণবিক বিজ্ঞান কর্মসূচির জনক হিসাবে পরিচিত, ভারতে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনে ডঃ সারাভাইকে সমর্থন করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

মহারানী পদ্মাবতী এবং জোহরের ঐতিহ্য: সাহস ও আত্মত্যাগের এক গল্প

উত্তরাপথঃ ভারতের ইতিহাসে, এমন অনেক গল্প রয়েছে যা সময়কে অতিক্রম করে আমাদের সম্মিলিত চেতনায় এক অমোঘ চিহ্ন রেখে যায়। তেমনই একটি গল্প মহারানী পদ্মাবতী ও জোহরের ঐতিহ্য। সাহস, সম্মান এবং ত্যাগের এই গল্প প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং আমাদের কল্পনাকে মুগ্ধ করে চলেছে।ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় অত্যন্ত সুন্দরী ও সাহসী মহারানী পদ্মাবতী'র উল্লেখ আছে।  রানী পদ্মাবতী রানী পদ্মিনী নামেও পরিচিত।  রানী পদ্মাবতীর পিতা ছিলেন সিংহল প্রদেশের (শ্রীলঙ্কা) রাজা গন্ধর্বসেন।ইতিহাসে রানী পদ্মিনী তার ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং বীরত্বের জন্য পরিচিত হলেও, তিনি করুণা এবং শক্তির প্রতীক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। দিল্লির শক্তিশালী শাসক আলাউদ্দিন খিলজি তার অতুলনীয় সৌন্দর্যের কথা শুনে তাকে অধিকার করার সংকল্প করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top