ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী, টোকিও, জাপান


কেল্লা বা দুর্গ এই নাম শুনলেই কল্পনায় ঐতিহাসিক ঘটনায় মোড়া রোমাঞ্চকর এক ভ্রমণক্ষেত্রের দৃশ্য ভেসে ওঠে। জাপানে এমন শতাধিক দুর্গ আছে যার সৌন্দর্য আজও যেমন বিমুগ্ধকর ঠিক তেমনি তার অতীতের সাদা কালো দিনের গল্প দর্শনার্থীকে অবাক করে। প্রাচীনকাল থেকেই জাপানে দুর্গ তৈরি হয়ে আসছে, তবে ইতিহাস বলছে দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েন ও গৃহ যুদ্ধের কারণে ১৫ শতকের গোড়া থেকে দুর্গের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়। সামন্ত যুগে, জাপান বেশ কিছু ছোট ছোট স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল, যারা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রায়ই যুদ্ধ ঘোষণা করত এবং প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে পাহাড়ের চূড়ায় দুর্গ তৈরি করত। আর একারনেই এখানকার প্রায় সব প্রিফেকচারেই দুর্গ দেখতে পাওয়া যায়, যার মধ্যে কিছু ভীষণ জনপ্রিয় আর কিছু অল্প পরিচিত কিংবা অপরিচিত।
ওসাকা ক্যাসেল, বা জাপানিদের কাছে খুব পরিচিত “ওসাকা-জো” হচ্ছে জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণস্থল, এই পাঁচতলবিশিষ্ট দুর্গটি তৈরি হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে! আধুনিক গগনচুম্বী অট্টালিকার মাঝে মাথা উঁচু করে আজও দাঁড়িয়ে এই দুর্গটি ওসাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলির মধ্যে একটি।


জাপানের খুব পরিচিত ওসাকা শহরের মধ্যমণি এই ক্যাসেলটি দেখতে সারা বিশ্ব থেকে বাৎসরিকভাবে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ভিড় করে। এই দুর্গ থেকে সম্পূর্ণ শহরের প্যানোরামিক ভিউ দৃশ্যমান। জাপানি সংস্কৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, আর বলা বাহুল্য যে সেই ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে লেখা আছে এই দুর্গের কথা।


১৫৮৩ সালে হোঙ্গাঞ্জি মন্দির প্রাঙ্গনে হিদেয়োশি তোয়োতোমি প্রথম নির্মাণ করেন ওসাকা দুর্গে। তার নিপুণ রণকৌশল ও শাসনক্ষমতার জন্য তাঁকে জাপানের নেপলিয়ান পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। হিদেয়োশি দুর্গটিকে তার একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসাবে ধরে রেখেছিল, এবং একের পর এক যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে দেশের বিচ্ছিনতার অনেকটাই অবসান ঘটিয়ে এনেছিলেন, যার ফলে দেশে সাময়িকভাবে শান্তি স্থাপন হয়েছিল।
ইতিহাস যেমন বারবার দেখিয়েছে, শান্তি চিরকাল স্থায়ী হয়না, তোয়োতোমির মৃত্যুর পর, রাজনৈতিক উত্থান ও পতনের সাথে সাথেই ওসাকা ক্যাসেলের ভাগ্যের চাকাও নানান দিকে ঘুরেছে, বেশ কয়েকবার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল একে এবং আবারও পুনর্নির্মিত হয়েছে। মেইজি সময়কালের পরে,দুর্গটি কিছু সময় সেনাবাহিনী ব্যবহার করেছিল। ১৯৩১ সালে, জনসাধারণের প্রচেষ্টায় মূল টাওয়ারটি পুনর্নির্মিত হয় এবং ১৯৯৭ সালে জাপানের সাংস্কৃতিক সম্পত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


বর্তমানে দুর্গের ভিতরে একটি যাদুঘর তৈরি করা হয়েছে এবং জনসাধারনের সেখানে প্রবেশ অবাধ। দুর্গের অভ্যন্তরে প্রতিটি তলে ওসাকা শহর এবং দুর্গের বিস্তারিত বিবরণসহ বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক নথি ও বস্তু রাখা আছে, যেগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে যেন সেই অতীতকে কিছু সময়ের জন্য ছুঁয়ে ফেলা যায়।
দুর্গটি ১০৬ হেক্টর পার্ক দ্বারা বেষ্টিত, যার জন্য শহরের মাঝে হয়েও শহুরে ক্লান্তি দূর করার এক আশ্চর্য ঠিকানা এই ক্যাসেল পার্কটি। বসন্ত কালে এই ওসাকা ক্যাসেল ও পার্কের সৌন্দর্য বহু গুন বেড়ে যায় কারন পার্কে থাকা কয়েকশো চেরিব্লসম গাছ একসাথে ফুলে ভরে ওঠে আর সেই সময়ে জাপানিরা গাছের তলায় স্বপরিবার বা স্ববান্ধবে হানামি (এক জাপানি ঐতিহ্যবাহী রীতি যা বসন্তে ফুলের ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য উপভোগ করার মাধ্যমে স্বপরিবারে সময় কাটানো) করে থাকে।


ঐতিহাসিক দুর্গ তার আশেপাশের সবুজে ঘেরা পার্ক এবং তাদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নানান কাহিনী কিভাবে একটা শহরের অস্তিত্বের অংশ হয়ে ওঠে সেটা ওসাকা ক্যাসেল ঘুরে দেখলে বোঝা সম্ভব।
আরও পড়ুন
বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোট গঠনের বৈঠকে অংশ নিতে পারে ৩২টি দল
উত্তরাপথ: আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিরোধী জোট গঠনের জন্য বেঙ্গালুরুতে আগামী ১৭-১৮ জুলাই বিরোধী দলগুলির সমাবেশ হতে চলেছে। এই বৈঠকে ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, এবার বিরোধী দলে যোগ দিতে যাচ্ছে আরও নতুন ৮টি দল। এই দলগুলি হল, মারুমালারচি দ্রাবিড় মুনেন্দ্র কাজগাম, কঙ্গু দেস মক্কাল কাচ্চি, বিদুথালা চিরুথাইগাল কাচ্চি, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দল, অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ, কেরালা কংগ্রেস জোসেফ, কেরালা কংগ্রেস মানি ।তবে বিরোধী জোটে যদি সব গুলি দল .....বিস্তারিত পড়ুন
Sustainable Energy: সূর্যের আলো এবং বায়ু,থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড-ব্রেকিং বৃদ্ধি
উত্তরাপথ: সম্প্রতি একটি রিপোর্ট সামনে এসেছে তাতে সূর্যের আলো এবং বায়ু,থেকে সারা বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড-ব্রেকিং বৃদ্ধি ১২% উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এই পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদের ব্যবহার আমাদের অ নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের বিকল্পের দিকে ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করছে। সৌর এবং বায়ু শক্তির ব্যবহারের দ্রুত বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণ দ্বারা চালিত হয়েছে। প্রথমত, প্রযুক্তির অগ্রগতি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ এবং সাশ্রয়ী করে তুলেছে। সৌর প্যানেল এবং বায়ু টারবাইনগুলি এখন আগের চেয়ে আরও দক্ষতার সাথে সূর্য এবং বায়ু থেকে শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম, যার ফলে বিশ্বব্যাপী পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎপাদন বৃদ্ধি .....বিস্তারিত পড়ুন
Life in Saturn: শনিতে কি প্রাণের "ছোঁয়া"?
ড. সায়ন বসু: গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী গায়া (Gaia) এবং উরেনাস (Urenus)-এর সন্তান এঙ্কেলাডাস (Enceladus) ছিলেন একজন দৈত্য | দেবতা এবং দৈত্যদের যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন যুদ্ধ এবং জ্ঞানের দেবী এথেনার (Athena) বিপক্ষে | এমনও মনে করা হয় যে এঙ্কেলাডাসকে ইতালির সিসিলিতে অবস্থিত এতেনা (Etena) পর্বতের নীচে সমাধি দেওয়া হয় | বলা হয়ে থাকে ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাতের জন্যে নাকি তার নিঃশ্বাস দায়ী | ঠিক তেমনই শনির একটি ছোট উপগ্রহ যার নামও এঙ্কেলাডাস তা থেকেও প্রচুর পরিমানে ফসফরাসের হদিশ পাওয়া গেছে যা কিনা বৈজ্ঞানিকদের .....বিস্তারিত পড়ুন
মরশুমের প্রথম ইলিশ ( Hilsa) এল দিঘায়
উত্তরাপথ: মরশুমের প্রথম ইলিশ এল দিঘায় (Digha)। জানা গেছে, সাত থেকে দশদিন আগে ট্রলারগুলি সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল। মৎস্যজীবীরা জানান, মাঝসমুদ্রে ইলশেগুড়ি বৃষ্টি পেয়েছেন। পুবের হাওয়াও ছিল। এটাই ইলিশের পক্ষে অনুকূল আবহাওয়া। তাই ইলিশের দেখা মিলেছে। বেশ কিছু ট্রলার ইতিমধ্যে দিঘায় এসে ঠেকেছে। তাঁরা বলেন, “আরও ট্রলার সমুদ্রে আছে সেগুলো ফিরছে খুব শীঘ্রই । ট্রলারগুলি ফিরে আসায় দিঘার বাজারে আমদানি হল মরশুমের প্রথম ইলিশ যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টন ইলিশ। .....বিস্তারিত পড়ুন