কৃত্রিম মিষ্টি (সুক্রলোজ ও স্যাকারিন) কি মানসিক হতাশার কারণ ?

উত্তরাপথঃ টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন গবেষণায় কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়ার এবং হতাশার বর্ধিত ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্ভাব্য সংযোগ পাওয়া গেছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ৫,০০০ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণ করেন তাদের বিষণ্ণতার লক্ষণগুলির পরিমাণ বেশি ছিল।

কৃত্রিম মিষ্টি, যেমন অ্যাসপার্টাম, সুক্রলোজ এবং স্যাকারিন, সাধারণত বিভিন্ন খাবার এবং পানীয়গুলিতে চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চিনির একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে এগুলি বাজারজাত করা হলেও, এই মিষ্টিগুলির নিয়মিত সেবনের ফলে এর কোনও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আমাদের শরীরে পরছে কিনা তা এখনও পুরোপুরি বোঝা যায় নি।

সমীক্ষায়, অংশগ্রহণকারীদের তাদের কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি মূল্যায়ন করার জন্য একটি প্রশ্নপত্রও তৈরি করা হয়েছিল। গবেষকরা দেখেছেন যে যারা কৃত্রিম মিষ্টি খেয়েছেন তাদের ঘুমের ধরণ, ক্ষুধা, এবং বিষন্নতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তির মাত্রার পরিবর্তন অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি ছিল।

যদিও গবেষকরা কৃত্রিম মিষ্টি এবং বিষন্নতার মধ্যে কোনও কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করেননি,তবে ফলাফলগুলি পরামর্শ দেয় যে উভয়ের মধ্যে একটি লিঙ্ক থাকতে পারে। গবেষণার প্রধান গবেষক ডঃ হংলেই চেন উল্লেখ করেছেন, “আমাদের ফলাফলগুলি থেকে বোঝা যায় যে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কৃত্রিম মিষ্টি চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে না।”

কৃত্রিম মিষ্টি এবং বিষন্নতার মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগ জনস্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিষণ্নতা একটি সাধারণ এবং গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থা যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। বিষণ্ণতার জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণগুলি সনাক্ত করা, যেমন কৃত্রিম সুইটনার, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য নতুন কৌশলের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই অধ্যয়নটি ধাঁধার একটি অংশ মাত্র, এবং কৃত্রিম মিষ্টি এবং বিষণ্নতার মধ্যে সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে, ব্যক্তিরা তাদের কৃত্রিম মিষ্টির ব্যবহার সীমিত করার এবং মধু বা স্টেভিয়ার মতো প্রাকৃতিক বিকল্পগুলি বেছে নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।

সামগ্রিকভাবে, এই গবেষণার ফলাফলগুলি স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে। যদিও কৃত্রিম সুইটনারগুলি চিনির তুলনায় কম-ক্যালোরি গ্রহণের বিকল্প প্রস্তাব করতে পারে, তবে এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অনিচ্ছাকৃত প্রভাব ফেলতে পারে।যেহেতু এই ক্ষেত্রে গবেষণা এখনও অব্যাহত রয়েছে, তাই ব্যক্তিদের সচেতন থাকা সেই সঙ্গে তাদের খাদ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কে অবগত থাকা অপরিহার্য।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top