

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কিছু গাছপালা, যেমন রসুন এবং জলপাই, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। এই গাছগুলো এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো অবস্থার চিকিৎসায় সেইসাথে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে গবেষকদের ধারনা।
হৃদরোগ বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ।এক্ষেত্রে জলপাই, আঙ্গুর, রসুন, রোজমেরি এবং জাফরানের নির্যাস, যার মধ্যে উপকারী যৌগ রয়েছে,এগুলি আগামী দিনে নতুন ওষুধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারনা বিজ্ঞানীদের। তবে এই উপাদানগুলি প্রায়শই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং ভালভাবে পরিচালিত গবেষণা থেকে সীমিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়।তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা থেকে শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের কারণে এর ব্যবহার প্রায়ই সীমিত।
২০২৩- ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে, জীববিজ্ঞানী Mateu Anguera Tejedor Universitat Autònoma de Barcelona (UAB)-এ তার চূড়ান্ত জীববিজ্ঞান প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করেন। ফুড বায়োসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে কীভাবে নির্দিষ্ট ভূমধ্যসাগরীয় উদ্ভিদের যৌগগুলি হৃদরোগের স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
মূল গাছপালা এবং তাদের উপকারিতা
গবেষণায় ছয়টি মূল উদ্ভিদ এবং তাদের উপকারী যৌগ পরীক্ষা করা হয়েছে:
রসুন: ডায়ালাইল ট্রাইসালফাইড, অ্যালিসিন এবং এস-অ্যালিল সিস্টাইন রয়েছে।
হথর্ন(Hawthorn): কোয়ারসেটিন, এপিজেনিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড সরবরাহ করে।
জাফরান: ক্রোসিন এবং সাফরানাল অন্তর্ভুক্ত।
অলিভ: অলিক অ্যাসিড, অলিউরোপেইন, হাইড্রোক্সিটাইরোসল এবং ওলেসিন সমৃদ্ধ।
রোজমেরি: রোজমারিনিক অ্যাসিড এবং কার্নোসিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ।
আঙ্গুর: রেসভেরাট্রোলের জন্য পরিচিত।
অর্থাৎ এই গাছগুলিতে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে এবং চর্বি বিপাক নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এই কারণে এই গাছগুলিকে হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করা হয়।
যদিও অধ্যয়নটি আমাদের বর্তমানে গবেষণার ফাঁকগুলিকে তুলে ধরে ,সেইসাথে এটি ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য দিকনির্দেশের পরামর্শ দেয়। এই বিষয়ে গবেষণা করার জন্য মূল ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে:
১। এই প্রাকৃতিক যৌগগুলির দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা
২। ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যের অংশ হলে তাদের সম্মিলিত প্রভাব
৩। ক্লিনিকাল ক্ষেত্রে মানসম্মত পরীক্ষার পদ্ধতি
এই সব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে গবেষক দলের কাজ হল বৈজ্ঞানিক ভিত্তি শক্তিশালী করা, সেই সাথে সম্ভাব্য নতুন হার্ট-স্বাস্থ্যকর ওষুধ তৈরির দিকে গবেষণাকে পরিচালিত করা। সেইসাথে, দলটি মানুষের মধ্যে এই প্রাকৃতিক পণ্যগুলির সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার উপর পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়নের গুরুত্বের উপর জোর দেয়, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে “প্রাকৃতিক” মানে সবসময় নিরাপদ নয়। ঐতিহ্যগত ওষুধের তুলনায় জলপাই, আঙ্গুর, রসুন, রোজমেরি এবং জাফরানের নির্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশদ গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য।
Reference: “Exploring the therapeutic potential of bioactive compounds from selected plant extracts of Mediterranean diet constituents for cardiovascular diseases: A review of mechanisms of action, clinical evidence, and adverse effects” by Mateu Anguera-Tejedor, Gabino Garrido, Bárbara B. Garrido-Suárez, Alejandro Ardiles-Rivera, Àngel Bistué-Rovira, Francesc Jiménez-Altayó and René Delgado-Hernández, 17 November 2024, Food Bioscience.
DOI: 10.1016/j.fbio.2024.105487
আরও পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন