

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস
উত্তরাপথঃ সুইডিশ নোবেল কমিটি ২০২২ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন, তারা ২০২২ সালের নোবেল প্রাপকদের নাম প্রকাশ করার পাশাপাশি ১৯৭২ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য যাদের নাম মনোনীত করা হয়েছিল সেই তালিকা প্রকাশ করেন।আর সেই তালিকাতেই দেখা যাচ্ছে নোবেল পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকায় নাম ছিল সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদি সেই সময় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পদকের জন্য মনোনীত হতেন তাহলে এই সাহিত্যিকের হাত ধরেই ভারতে আসতে পারতো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর সাহিত্যের দ্বিতীয় নোবেল। তবে তালিকায় মনোনয়ন পাওয়াটাও আমাদের কাছে সম্মানের।
১৯১৩ সালে যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়,সেইসময় ব্রিটিশ লেখক টমাস হার্ডি সহ মোট ৩৭ জন মনোনয়ন পেয়েছিলেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্রিটিশ লেখক টমাস স্টার্জ মুর মনোনীত করেছিলেন এবং হার্ডিকে রয়্যাল সোসাইটি অফ লিটারেচারের ৯৭ জন সদস্য মনোনীত করেছিলেন। এর প্রায় ৫৮ বছর পর ১৯৭১ সালে আর এক বাঙালি ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।সেই সময় সাহিত্য একাডেমির তৎকালীন সম্পাদক কৃষ্ণ কৃপালনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য নোবেল কমিটির কাছে তার নাম প্রস্তাব হিসাবে পাঠিয়েছিলেন ।
সেইবার অবশ্য কবি পাবলো নেরুদা ১৩৭ জন মনোনীতদের তালিকার মধ্য থেকে এই বিভাগে পুরস্কার জিতেছিলেন।১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকায় ছিলেন গুন্টার গ্রাস, এজরা পাউন্ড, আর্থার মিলার, আলবার্তো মোরাভিয়া এবং ভ্লাদিমির নাবোকভ। নোবেল কর্তৃপক্ষ তার ওয়েবসাইটে বলেছে যে নোবেল ফাউন্ডেশনের নিয়ম আনুসারে ৫০ বছরের জন্য, প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে, মনোনয়ন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে পারে না।তাই ৫১ বছর পর তারা এই তথ্য প্রকাশ্যে আনল। আর সেই তালিকা থেকেই প্রকাশ পেল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তবে নোবেল পদক না পেলেও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমি, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ সহ জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কথাসাহিত্যিক হিসাবেই পরিচিত। এই সাহিত্যিকের ঝুলিতে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি ছোটগল্প, ১২টি নাটক, চারটি প্রবন্ধ। এছাড়াও তিনি তার কলমের ছোঁয়ায় বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন বিভিন্ন স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী, কাব্যগ্রন্থের মধ্য দিয়ে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রখ্যাত উপন্যাস ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’র সেই হাঁসুলি বাঁক আজও লাভপুরের বুকে চিরন্তন হয়ে রয়েছে। এই হাঁসুলি বাঁকের টানে আজও দূর দূরান্ত থেকে পর্যটক লাভপুর আসেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৮ সালে বীরভূম জেলার লাভপুরে একটি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার উপন্যাসে তিনি নিজস্ব অভিজ্ঞতায় দেশের প্রান্তিক মানুষ, মাটি, চাষাবাদ, রাজস্ব, কর, কৃষি ঋণ, ফসলের ব্যর্থতা, দুর্ভিক্ষ, সম্পর্কে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীগুলির মধ্যে বিশাল অর্থনৈতিক বৈষম্যের বহু তথ্য তুলে ধরেছেন। বীরভূমের শুষ্ক, লাল মাটি এবং উত্তাল কোপাই নদী লেখকের রচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গণদেবতা এবং হাঁসুলি ব্যাঙ্কার উপকথার মতো তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলি সেই সময়ের গ্রামীণ সমাজের জীবন্ত ছবি আজও আমাদের সামনে তুলে ধরে। এই বাস্তববাদী মহান সাহিত্যিক ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার এক মাস আগে মারা যান।
আরও পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন