দোল উৎসব/হোলি

মৈত্রেয়ী আগরওয়ালা, মালদা

এই দোল উৎসব অর্থাৎ রঙের উৎসব দিয়ে আমাদের মনে একটা আনন্দ, একটা রঙের রঙবাহারের হিল্লোল অনুভূত হয়।মনে একটা প্রশ্নও আসে কবে ও কোথায় এর সূচনা? আমাদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শিখ মহারাজ রঞ্জিত সিংহের সময় থেকে হোলি খেলা শুরু , সেই উৎসবের সংস্কৃতি ভারত ও পাকিস্তানের উত্তর অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। দোলযাত্রা একটি সনাতন হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব। বহির্বঙ্গে পালিত হোলি উৎসবের সঙ্গে দোল যাত্রা একই অঙ্গে অঙ্গীকার। এটির উদ্ভব ভারতীয় উপমহাদেশে তবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসীদের মাধ্যমে এশিয়া এবং পশ্চিম বিশ্বের কিছু অংশে বসন্ত উৎসব নামে ছড়িয়ে পড়েছে এই দোল উৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা  তিথিতে পালিত হয় এই উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপী গণের সঙ্গে রঙ খেলায় মেতেছিলেন, সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম হয় বলে একে গৌর পূর্ণিমা ও বলা হয়।

দোলের পূর্ব দিন খড়, কাঠ, বাঁশ জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ণ্যুৎসব হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া নামে পরিচিত। এই হোলিকা দহনের প্রসঙ্গে স্কন্দ পুরাণ গ্রন্থের ফাল্গুন মাহাত্ম্য অংশে পৌরাণিক গাঁথাটি মনে পড়ে গেল। এই হোলিকা ছিলেন অসুররাজ হিরণ্যকশিপু র বোন এবং বিষ্ণুভক্ত হিরণ্যকশিপু র পুত্র প্রহ্লাদের পিসি। ভগবৎ পুরাণের সপ্তম অধ্যায়ে এর বিশদ বিবরণ রয়েছে। অসুর রাজ হিরণ্যকশিপু অমর হতে চান। এইজন্য ব্রহ্মার নিকট হতে অমরত্বের বরপ্রাপ্তির জন্য কঠোর তপস্যায় নিমজ্জিত হন। তিনি পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন পরোক্ষভাবে অমরত্ব লাভ করেন।মানুষ, প্রাণী দ্বারা অবধ্য, ঘরে, বাইরে এবং দিন আর রাতে হত্যা করা যাবে না। আবার জল, স্থল এবং অন্তরীক্ষে কোথাও হত্যা করা যাবে না। এই বরে অহংকারী হিরণ্যকশিপু নিজেকে দেবতা জ্ঞানে রাজ্যবাসীদের পুজা করার আদেশ দেন। প্রহ্লাদ বিষ্ণুভক্ত হওয়ায় ভগিনীর শরণাপন্ন হন হিরণ্যকশিপু।  ভগিনী হোলিকা অগ্নির দ্বারা অদাহ্য এই বরপ্রাপ্ত থাকায় তিনি প্রহ্লাদকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করেন কিন্তু অন্যায়কর্মে লিপ্ত হওয়ায় এই বর কার্যকারী হয় না। ফলস্বরূপ প্রহ্লাদ অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে, অগ্নিদগ্ধ হন হোলিকা।  ফাল্গুনী পূর্ণিমার প্রাক্ কালে এই ঘটনা , তাই এই বহ্ণ্যুৎসব  হোলিকা দহন নামে পরিচিত।

“আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এতো বাঁশি বাজে“—-এই গান শুনলেই আমাদের বঙ্গবাসীদের মন ছুটে যায়।

 শান্তিনিকেতন ও তার ঐতিহ্যের দিকে।  শান্তিনিকেতনের দোল উৎসবের যে আকার আমরা দেখতে পাই পূর্বে একদমই ছিল না। শান্তিদেব ঘোষ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ১৯৩১ সালে এক আসরে বসন্তের গানের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ত নেচে ওঠেন তিনি, সঙ্গে ছিলেন কলাভবনের ছাত্র বনবিহারী ঘোষ। তাদের সেই নাচের সুখ্যাতি গিয়ে পৌঁছয় রবীন্দ্রনাথের কানে। শান্তিদেব ঘোষের বয়ান অনুযায়ী আগের দোল উৎসবে ছিল নানা রকম নোংরামি, মানে কাদা দিয়ে দিল একে অপরের গায়ে, ছেলেরা দুষ্টুমি করে কালি দিয়ে দিত এই রকম। রবীন্দ্রনাথ এর বিরোধিতা করে বসন্ত উৎসবকে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ উৎসবের আকার দেন। এরপর থেকেই ১৯৩৪ সালে বিধিবদ্ধ উৎসব করা ঠিক করলেন। আর সেই সালেই সকালবেলা অনুষ্ঠান শুরু শোভাযাত্রা দিয়ে। শোভাযাত্রায় গানের সাথে জুড়ে গেল নাচ এই নাচের পরিকল্পনা ছিল শান্তিদেবী ঘোষের। বর্তমানে জেলাভিত্তিক শোভাযাত্রা দোল উৎসবের দিন দেখা যায় ।

বসন্ত জাগ্রত দ্বারে (ছবি: মৈত্রেয়ী আগরওয়ালা)

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top