অনসূয়া পাঠক


রাই চৌধুরী ভারতের জনপ্রিয় লেখিকা দের মধ্যে অন্যতম একজন। তার প্রতিটি গল্পের মধ্যে ই যাদুর ছোঁয়া। একদিন এক প্রেস কনফারেন্সে এক সাংবাদিক তাঁর কাছে জানতে চান ,তাঁর বিখ্যাত গল্প দ্যা মুনস ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে। লেখিকা বেশ খোশ মেজাজে উত্তর দেন , ওটা তাঁর জীবনের গল্প । খুব একটা আত্মপ্রচারে বিশ্বাসী নন রাই চৌধুরী। সাংবাদিকদের এড়িয়েই চলেন। সেদিন কিভাবে ক্যামেরা র সামনে অকপট তিনি । প্রেস কনফারেন্সে ই গল্প শুরু করেণ তিনি। রাই চৌধুরীর নিজের মুখে সেই গল্প যারা শুনেছে , সবাই শিহরিত হয়েছে …. ” আমার বয়স তখন দশ বছর । মা বাবার সাথে সিমলায় থাকতাম । বাবা ওখানের একটি কলেজে পড়াতেন। সিমলাতে আমাদের পাশের বাংলোয় থাকতেন ড্যাভিড আংকেল । উনি একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন । নাম করা জার্ণালে ওঁর তোলা সব ছবি বেরুতো । দেশ বিদেশ নানা জায়গায় ঘুরতেন । একবার আমার জন্ম দিনে একবাক্স চকোলেটের সাথে উনি একটা বই গিফট করেছিলেন ঊনার ই লেখা , দ্যা মুনস ওয়ার্ল্ড । ছোটো থেকেই আমার গল্পের বই এ ভীষণ নেশা । তাই বার্থডে পার্টি শেষ হতে না হতেই বই টা পড়তে শুরু করলাম। রুদ্ধ শ্বাস পড়ে গেলাম । অসাধারণ লেখা। চাঁদেও আছে পৃথিবী থেকে উন্নত এক ধরনের জীব। আমরা যাদের দেখতে পাই না। আছে উন্নত ডিজিটাল সভ্যতা । ইমাজিনেশন পাওয়ারে যারা সব কিছু করতে পারে । টেকনোলজি তাদের এতো উন্নত , তারা না চাইলে কেও তাদের সন্ধান পাবে না। এক বিশেষ ব্রাহ্ম মুহূর্তে তারা একটা উৎসব করে । সবাই এক জায়গায় মিলিত হলে তাতে যে গ্র্যাভিটেশন পাওয়ার তৈরী হয় , সেই চৌম্বক শক্তি দিয়ে তারা যে কাওকে সম্মোহিত করতে পারে। কল্প বিজ্ঞানের গল্পটা পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি , খেয়াল ছিলো না। ঘুমের ভেতরে এক স্বপ্নের জগতে আমি যেন চলে যাচ্ছিলাম। কেমন একটা আচ্ছন্ন ভাব । আমি যেনো এক কল্পনার জগতে । যেখানে গাছের পাতা লাল । মাটির রং নীল । ঘাস গুলো সব কালো । জনমানবহীন সেই জায়গা য় আমার ভয় করতে শুরু করলো । আমি দিশেহারা হয়ে হাঁটতে শুরু করলাম । একটা টিলার উপরে উঠে দেখি হলুদ আকাশের বুক চিরে নীল রংয়ের পৃথিবী টাকে স্পষ্ট দেখাচ্ছে । আমি চমকে গেলাম , তাহলে কি আমি পৃথিবীর বাইরে ? কোথায় আমি ? হঠাৎ দেখি এক বুড়ি মা একটা পাতার তৈরী বড়ো ঝুড়িতে করে রং বেরঙের ফল নিয়ে আমার দিকে আসছে। বেঁটে , মাছের মতো ছোট ছোট চোখ ধবধবে সাদা সেই বুড়ি মা কে দেখে আমি কাঁদতে শুরু করলাম। বুড়ি মা বললো , মা তুমি চাঁদের অতিথি । ভয় করোণা – আমি আছি । এই বলে তিনি আমার হাত ধরে চাঁদের বাজারে নিয়ে এলেন ।দেখছি প্রচুর লোক। সবাই খুব বেঁটে। কুকুরের মতো অদ্ভুত এক ধরনের জন্তু সবার পাশে হাঁটছে। যাদের ছটি করে পা। বাজারে প্রচুর প্রজাপতির মতো দেখতে অনেক বড়ো গোরুর মতো , তারা মাথার উপরে উড়ে বেড়াচ্ছে। আপেলের মতো দেখতে কালো রঙের এক ধরনের ফল বিক্রি হচ্ছে । তরমুজের মতো দেখতে হলুদ রঙের মিষ্টি সবাই কিনছে। আর ফুটবলের মতো দেখতে বাদামী রঙের অনেক গুলো বল হাওয়ায় ভাসমান। এক জায়গায় দেখি নুড়ি পাথরের মতো দেখতে লাল রঙের অসংখ্য পাথরের স্তূপ। বুড়ি মা তার ই একটা পাথর তুলে আমার হাতে দিলেন। তারপর একটা সাদা মার্বেল পাথরের প্রাসাদে সাদা বিছানায় আমাকে শুইয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন , ঘুমিয়ে পড় বাছা। হঠাৎই এক নাগাড়ে কলিং বেলের শব্দ , মা এর চিৎকার শুনেতে পাচ্ছি যেনো । রাই উঠে পড় সোনা । এতো দেরী কেন হচ্ছে , কখন থেকে ডেকে চলেছি। কি ব্যাপার রে। আমি চমকে গেলাম। সব কেমন যেনো রহস্যে মোড়া। বিছানা ছেড়ে ওঠার সময় দেখি আমার হাতের মুঠোয় সেই স্বপ্নের চাঁদের লাল পাথর টা । এ কি করে সম্ভব। আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। ড্রইং রুমে এসে দেখি বাবার ভীষণ মন খারাপ । বাবা বললো , দেখ রাই তোর জন্মদিনে র অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে তোর ড্যাভিড আংকেল হঠাৎই ব্রেন স্ট্রোক এ মারা গেছে । আমি খবর টা শুনেই জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সব ই কি এতোটাই কাকতালীয় ………. ড্যাভিড আংকেল এর সেই গিফট আর আমার স্বপ্ন , আর লাল পাথর ….. এ সব ই কি এক সূতোয় বাঁধা । আমাদের জীবনে অনেক কিছু ই ঘটে যার বাখ্যা মেলে না “।
আজ ও রাই চৌধুরীর অসংখ্য পুরষ্কারে ভর্তি কাঁচের শো কেসে সাহিত্য একাদেমী পুরষ্কারের পাশে জ্বলজ্বল করছে সেই লাল পাথর টি ।।
আরও পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন