

উত্তরাপথঃ চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল ব্রোঞ্জ যুগের পনিরের নমুনা থেকে প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে। গবেষণাটি ইউরেশিয়ায় দুধের গাঁজনের ইতিহাস এবং বিবর্তন প্রকাশ করে, যা এই প্রক্রিয়াটি গঠনে মানুষ সহ অন্যান্য অণুজীবের ভূমিকা তুলে ধরে।
গবেষকরা চীনের জিনজিয়াংয়ের জিয়াওহে কবরস্থান থেকে পাওয়া তিনটি প্রাচীন পনিরের নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন, যা প্রায় ৩,৫০০ বছর আগের। তারা গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে পনিরটি ল্যাক্টোব্যাসিলাস কেফিরানোফেসিয়েন্স ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল।প্রসঙ্গত ল্যাক্টোব্যাসিলাস কেফিরানোফেসিয়েন্স এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত গাঁজানো দুগ্ধজাত পণ্যগুলিতে পাওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং সময়ের সাথে এগুলি আবার বিবর্তিত হয়েছে। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে পনির তৈরির জন্য ব্যবহৃত দুধটি ছাগলের একটি গ্রুপ থেকে এসেছে যা পোস্ট-নিওলিথিক ইউরেশিয়ায় ব্যাপকভাবে পাওয়া যেত , যা অভ্যন্তরীণ পূর্ব এশিয়ার সমসাময়িক গৃহপালিত ছাগল থেকে আলাদা।
বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা পরামর্শ দেয় যে তারিম বেসিনের প্রাচীন লোকেরা সম্ভবত ইউরেশীয় স্টেপ্পে জনগণের কাছ থেকে কেফির উৎপাদনের কৌশল শিখেছিল। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে প্রাচীন এল. কেফিরানোফেসিয়েন্স শত শত বছরের মানুষের মিথস্ক্রিয়া দ্বারা অভিযোজিত হয়েছিল, যার ফলে এর বিবর্তন ঘটে।
গবেষকরা আরও আবিষ্কার করেছেন যে গাঁজনে ব্যবহৃত এল. কেফিরানোফেসিয়েন্স দুটি ক্লেড নিয়ে গঠিত, একটি প্রধানত ইউরোপ এবং এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায় এবং অন্যটি মূলত পূর্ব এশিয়ার অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি প্রযুক্তি-সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে জিনজিয়াং থেকে অভ্যন্তরীণ পূর্ব এশিয়ায় কেফির উৎপাদন প্রযুক্তির বিস্তারের একটি অতিরিক্ত পথের নির্দেশ দেয়।
গবেষণাটি প্রাচীন মানুষের দৈনন্দিন জীবন গঠনে মানব-মাইক্রোবিয়াল মিথস্ক্রিয়া এবং অণুজীবের গাঁজন করার ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে। অনুসন্ধানগুলি অতীতের মানব সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া পরীক্ষা করার জন্য প্রাচীন ডিএনএ ব্যবহার করার জন্য একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে।
:সূত্র “Bronze Age cheese reveals human-Lactobacillus interactions over evolutionary history” by Yichen Liu, Bo Miao, Wenying Li, Xingjun Hu, Fan Bai, Yidilisi Abuduresule, Yalin Liu, Zequan Zheng, Wenjun Wang, Zehui Chen, Shilun Zhu, Xiaotian Feng, Peng Cao, Wanjing Ping, Ruowei Yang, Qingyan Dai, Feng Liu, Chan Tian, Yimin Yang and Qiaomei Fu, 25 September 2024, Cell.
DOI: 10.1016/j.cell.2024.08.008
The research was supported by the National Natural Science Foundation of China, the Chinese Academy of Sciences, the Peak Biomedical Fund, and the Fundamental Research Operating Expense Fund of the Central Universities.
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন