ফ্লোরিডার সৈকতে ৩১ মিলিয়ন টন শেওলার দুর্গন্ধ!

উত্তরাপথঃ সতর্কতা! এই গ্রীষ্মে ফ্লোরিডার সৈকতগুলো হতে পারে একেবারে দুর্গন্ধময়। কারণ ফিরে এসেছে সেই কুখ্যাত সর্গাসাম শেওলা – আর এবার এসেছে রেকর্ড পরিমাণে, প্রায় ৩১ মিলিয়ন টন!

সর্গাসাম কি জিনিস?

সর্গাসাম হলো এক ধরনের বাদামি রঙের বড় শেওলা, যা ভেসে থাকে সাগরের জলে। এটি অন্যান্য শেওলার মতো তলায় নয়, বরং জলের ওপরে দ্বীপের মতো ভেসে বেড়ায়। এর পাতার মতো অংশ, শাখা-প্রশাখা এবং ছোট গোলাকার ফোলানো গাঁঠ থাকে, যেগুলো গ্যাসে ভরা থাকে। এগুলোই শেওলাকে জলের ওপর ভেসে থাকতে সাহায্য করে, অনেকটা লাইফ জ্যাকেটের মতো।

এই শেওলা কিন্তু সব সময় খারাপ নয়। এটি বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য খাবার ও আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, সামুদ্রিক কচ্ছপ—এদের অনেকেই সর্গাসামকে ঘিরেই জীবন কাটায়। এমনকি কিছু মাছ সারাজীবন এই শেওলার ভেসে থাকা বলয়ের আশপাশেই থাকে।

মানুষের জন্য কতটা বিপজ্জনক?

সমস্যা শুরু হয় যখন এই শেওলা সৈকতে এসে পচতে শুরু করে। তখন এটি থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস বের হয়—যার গন্ধ একেবারে পচা ডিমের মতো।

সাধারণভাবে, খোলা জায়গায় এই গন্ধে বড় কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু বদ্ধ জায়গায় শ্বাস নিলে চোখ, নাক, গলা জ্বালা করতে পারে। যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি বেশ বিপজ্জনক হতে পারে।

এছাড়া, এই পচা শেওলার মধ্যে জেলিফিশ ও বিভিন্ন অর্গানিজমও থাকতে পারে, যেগুলোতে গায়ে র‍্যাশ বা চুলকানি হতে পারে। যারা সর্গাসাম পরিষ্কার করার কাজ করছেন, তাদের গ্লাভস, বুটস এবং গ্যাস ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

২০২৫ সালে শ্যাওলার পরিমাণ কেন এত বড়?

এই বছর সর্গাসাম শেওলার পরিমাণ এত বেশি হওয়ার পেছনে বড় কারণ হলো সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া—অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন। তাপমাত্রা বেশি হলে শেওলা দ্রুত বাড়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাইট্রোজেনের অতিরিক্ত উপস্থিতি, যা আসে জ্বালানি পোড়ানো বা সাহারার ধুলা থেকে।

এখনকার হিসাব অনুযায়ী, এই শেওলার বিশাল পরিমাণটি ৫,৫০০ মাইল সমুদ্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকা থেকে শুরু করে ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত—ওজন ৩১ মিলিয়ন টনেরও বেশি!

ফ্লোরিডায় এর প্রভাব কেমন হবে?

ফ্লোরিডা ও ক্যারিবিয়ানে সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সর্গাসাম মৌসুম চলে। জুন-জুলাই হলো সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। কিন্তু এবছর মার্চ থেকেই এটি সৈকতে দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপগ্রহের মাধ্যমে এই শেওলার গতিবিধি ট্র্যাক করা যায় এবং আগাম সতর্কতাও নেওয়া সম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত সর্গাসামের বিশাল অংশ পুয়ের্তো রিকোর পূর্ব দিকে রয়েছে—তবে ইতিমধ্যেই ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূলে এর উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top