চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট বায়ুদূষণে প্রায় ১২ বছর আয়ু কমছে দিল্লির বাসিন্দাদের

উত্তরাপথঃ বহুদিন ধরেই বায়ুদূষণে জেরবার ভারতের রাজধানী শহর দিল্লি। গত কয়েক দশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির তালিকায় উপরের দিকেই স্থান হয়েছে তার। একটি সাম্প্রতিক গবেষণার দাবি, দিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর গুলির মধ্যে একটি। দূষণের কারণে রাজধানীর বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমছে  প্রায় ১২ বছর!

বর্তমান এই গবেষণাটি করেছে আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Chicago) একদল গবেষক। তাঁদের দাবি, ভারতের ১৩০ কোটি মানুষ হু নির্ধারিত বায়ুর গুণমান সূচক এর নীচে দূষিত এলাকায় বাস করেন। এছাড়াও দেশের ৬৭.৪ শতাংশ মানুষ যে এলাকায় বাস করেন, সেখানে ভারত সরকারের নির্ধারিত বায়ুর গুণমান সুচকের নীচে, গবেষকদের মতে এই পরিস্থিতি বিপজ্জনক।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মনে করছেন, ভয়ংকর দূষণের কারণে দিল্লির দু’কোটি বাসিন্দার আয়ু কমে যাচ্ছে। হু-র গাইডলাইন অনুযায়ী তা গড়ে কমতে পারে প্রায় ১১ বছর ৯ মাস। ভারত সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী তা কমে যেতে পারে গড়ে ৮ বছর ৫ মাস। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই দূষণের জন্য দায়ী দিল্লির বাসিন্দারাই। যানবাহনের দূষিত ধোয়া থেকে নির্মাণকাজ এর ফলেই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে দিল্লি শহর। এছাড়া  শিল্প দূষণ, খোলা বর্জ্য পোড়ানো এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো দিল্লীর  বায়ু দূষণকে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেছে।

দিল্লির বায়ুদূষণে বায়ুর মানের অবনতি এখানকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু কম করার সাথে সাথে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা যেমন হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি করছে। গবেষণায় বায়ু দূষণের দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজার হিসেবে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি সংক্রান্ত সমস্যাকে যুক্ত করা হয়েছে।

বায়ু দূষণ সংকটের তীব্রতা স্বীকার করে, দিল্লি সরকার এই সমস্যাটি মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিজোড়-ইভেন যানবাহনের রেশনিং স্কিমের প্রবর্তন, ডিজেল জেনারেটর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, দূষণকারী শিল্পগুলি বন্ধ করা এবং ক্লিন এনার্জির বিকল্পের প্রযোগ।এর সাথে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ এবং বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে শহরের সবুজ আবরণ বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বায়ুদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা বায়ুর গুণমান উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার, কারপুলিং এবং বর্জ্য কমানোর মতো  অভ্যাসগুলি গ্রহণ করতে নাগরিকদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা, শিক্ষামূলক কর্মসূচির উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। বায়ু দূষণে তাদের অবদানের জন্য ব্যক্তি এবং শিল্প উভয়কেই দায়বদ্ধ রাখার জন্য জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Scroll to Top