বিজ্ঞানীরা পাখিদের  ভিন্ন ভিন্ন আওয়াজের কারণ আবিষ্কার করলেন

উত্তরাপথঃ পাখিরা বিভিন্ন যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ধরণের শব্দ করে, যার মধ্যে রয়েছে সঙ্গীদের আকর্ষণ করা, শিকারীদের ভয় দেখানোর জন্য, অথবা শুধুমাত্র মজা করার জন্যও এটি করে। পাখির কণ্ঠস্বরের ব্যাপক বৈচিত্র্য বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই বৈচিত্র্যের অন্তর্নিহিত প্রভাব সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা হয়েছে।

উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই শব্দগুলিকে কী প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী গবেষণা করেছেন। তারা বিশ্বব্যাপী বিপুল সংখ্যক পাখি প্রজাতির ১,০০,০০০ এরও বেশি অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করেন, যার মধ্যে প্রায় ৭৭% পরিচিত প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। অনুসন্ধানগুলি পাখির কণ্ঠস্বর গঠনের জন্য বেশ কয়েকটি মূল কারণ প্রকাশ করে:

পূর্বে, পাখিদের বসবাসের জায়গা, তাদের আকার এবং তাদের ঠোঁটের আকৃতি তাদের শব্দকে কীভাবে প্রভাবিত করে তার উপর গবেষণাগুলি কেন্দ্রীভূত ছিল, তবে এই গবেষণাগুলি প্রায়শই ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। অধ্যাপক জুজানা বুরিভালোভার সাথে কাজ করা এইচ.এস. সত্য চন্দ্র সাগর বিশ্বব্যাপী এই ধারণাগুলি অন্বেষণ করতে চেয়েছিলেন।

অনুসন্ধানগুলি পাখির কণ্ঠস্বর গঠনের জন্য বেশ কয়েকটি মূল কারণ তুলে ধরে:

১. বাসস্থানের প্রভাব: গবেষণায় দেখা গেছে যে পাখির প্রজাতি যে আবাসস্থলে বাস করে তা তাদের শব্দের ফ্রিকোয়েন্সিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রচুর প্রবাহমান জলের পরিবেশে,  কম-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ থাকে। যা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি পাখির ডাককে প্রভাবিত করে। যে পাখিরা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ উৎপন্ন করে তারা এই ধরনের পরিবেশে অসুবিধাগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে কম ফ্রিকোয়েন্সির জন্য তাদের বিবর্তনীয় পছন্দ তৈরি হতে পারে।

২. ভৌগোলিক ধরণ: একই অক্ষাংশে বসবাসকারী পাখিরা একই রকম শব্দ উৎপন্ন করে, যা ভৌগোলিক অবস্থার সাথে বিবর্তনীয় অভিযোজনকে প্রতিফলিত করতে পারে। এই পর্যবেক্ষণটি ভূগোলের সাথে যুক্ত পরিবেশগত কারণগুলি কীভাবে পাখির প্রজাতির মধ্যে কণ্ঠস্বর বৈশিষ্ট্যগুলিকে গঠন করতে পারে সে সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

৩. গঠনগত কারণ: পাখির ঠোঁটের আকৃতি এবং তার শরীরের ভর তাদের শব্দ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে ছোট পাখি সাধারণত উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ উৎপন্ন করে, এবং বড় পাখিরা কম-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ উৎপন্ন করে। ছোট পাখির প্রজাতিগুলি সম্ভাব্য বেঁচে থাকার কৌশল হিসাবে বিস্তৃত ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ করে। তাদের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করার ক্ষমতা প্রজাতির যোগাযোগ এবং শিকারীদের কাছ থেকে ছদ্মবেশে সহায়তা করতে পারে। এই গবেষণাটি এই ধারণাটিকে নিশ্চিত করেছে যে শব্দের সাথে ঠোঁটের আকৃতি এবং শরীরের আকার কীভাবে সম্পর্কিত তা প্রকাশ করেছে।

৪। ছোট পাখিদের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: গবেষণাটি সাউন্ডস্কেপের ধারণাতেও অবদান রাখে, ছোট পাখিরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য বিস্তৃত শব্দ উৎপন্ন করতে পারে। তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারে এবং শিকারীদের থেকে নিজেদের ছদ্মবেশ ধারণ করার জন্য কম ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারে, যার ফলে তাদের বড় এবং আরও বিপজ্জনক বলে মনে হয়।

এইচ.এস. সত্য চন্দ্র সাগরের মতো গবেষকরা শব্দ-পূর্ণ ভূদৃশ্যের প্রতিক্রিয়ায় সময়ের সাথে সাথে পাখিরা কীভাবে তাদের কণ্ঠস্বরকে অভিযোজিত করে তা মূল্যায়ন করেছেন এবং পাখির যোগাযোগ সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতা বৃদ্ধিতে নাগরিক বিজ্ঞানীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করেছেন।আগামীদিনে সাউন্ডস্কেপ আরও অন্বেষণ করে, এই গবেষণা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং বাস্তুতন্ত্রের গতিশীলতা বোঝার জন্য নতুন পথ খুলে দেবে।

সূত্র: “Global analysis of acoustic frequency characteristics in birds” by H. S. Sathya Chandra Sagar, Akash Anand, Maia E. Persche, Anna M. Pidgeon, Benjamin Zuckerberg, Çağan H. Şekercioğlu and Zuzana Buřivalová, 31 October 2024, Proceedings B.
DOI: 10.1098/rspb.2024.1908

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সম্পাদকীয়

এ যেন বহুদিন পর বিজেপির চেনা ছন্দের পতন। হিমাচল প্রদেশের পর কর্ণাটক কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির বিজয়রথকে থামিয়ে দিল ।২০১৮ পর থেকে লাগাতার হারতে থাকা একটি দল আবার ২০২৪ সাধারণ নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক হয়ে গেল । ২২৪ সদস্যের কর্ণাটক বিধানসভায় সরকার গঠন করতে গেলে প্রয়োজন ১১৩টি আসন সেখানে কংগ্রেস একাই পেয়েছে ১৩৬টি আসন, বিজেপি পেয়েছে ৬৫ টি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার জেডিএস পেয়েছে ১৯টি এবং অন্যান্য ৪ টি আসন পেয়েছে। যা গতবারের তুলনায় বিজেপির ৩৯ টি আসন কমেছে এবং কংগ্রেসের বেড়েছে ৫৭টি আসন এবং জেডিএসের কমেছে ১৮ টি আসন।   কর্ণাটকে কংগ্রেসের এই সাফল্য কি রাজ্যে কংগ্রেসের শক্তিশালী সংগঠনের ফল না কি কর্ণাটকের আগের ক্ষমতাশীল বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ । কর্ণাটকে কংগ্রেসে অনেক বড় নেতা রয়েছে।  প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শিবকুমার দক্ষ সংগঠক। আগের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার ব্যাপক জনভিত্তি রয়েছে।  ভোটের আগে বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেট্টার এবং উপমুখ্যমন্ত্রী সাভাড়ি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে নির্বাচনে লড়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির প্রচারের সবচেয়ে বড় মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপির প্রচারে সব নেতারাই মোদীর নাম করেই ভোট চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হল না ।কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি সেই সাথে কংগ্রেসের লাগাতার প্রচার যা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সুরকে আরও তীব্র করেছে। তাই শুধুমাত্র মোদী ম্যাজিকের উপর ভর করে নির্বাচন জেতা যে  আর বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয় কর্ণাটকের জনগণ চোখে হাত দিয়ে তাই দেখিয়ে দিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top