সম্পাদকীয়

বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমরা কি মন্থর ?

বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির মধ্যে একটি। মানুষের ক্রিয়াকলাপের কারণে পৃথিবীর জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, যার ফলে আমাদের পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক পরিণতির সৃষ্টি হচ্ছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব প্রশমিত করতে এবং সবার জন্য একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজন।

বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলতে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রার দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধিকে বোঝায়।প্রাথমিকভাবে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস জমা হওয়ার কারণে ২০২২ সালে পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ০.৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস  উষ্ণ ছিল গত ২০ শতকের তুলনায় । জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিণতি, যার মধ্যে রয়েছে আবহাওয়ার ধরণ পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া এবং চরম আবহাওয়ার মত ঘটনা।

মানুষের ক্রিয়াকলাপ, বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো, বন উজাড় করা এবং শিল্পাঞ্চলের দূষণ বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়াতে প্রধান সাহায্যকারী । কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), এবং নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) হল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রীনহাউস গ্যাস,যা  তাপ আটকে রাখে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি সুদূরপ্রসারী এবং আমাদের গ্রহের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কার কারণ। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাত, এবং হারিকেন, খরা এবং তাপপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির কম্পাঙ্ক (Frequency) এবং তীব্রতা বৃদ্ধি করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি উপকূলীয় সম্প্রদায় এবং নিচু এলাকার,লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে এবং এক বিশাল অংশের লোককে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন করছে।

 সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলিকে অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির  উৎসগুলিতে রূপান্তরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ এই পরিবর্তন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করবে এবং দীর্ঘস্থায়ী  উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে।

 জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ এবং বন উজাড় হ্রাস প্রচেষ্টাকে তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদি ভূমি সংস্কার পদ্ধতি গ্রহণ  কার্বন ডাই অক্সাইডকে আলাদা করতে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।

 পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের জন্য বন, জলাভূমি এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সহ প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা ও সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। এই অঞ্চলগুলি কার্বনের এক সঞ্চয় ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করে, প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং সঞ্চয় করে।

 বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার, সংস্থা এবং ব্যক্তিদের অবশ্যই যৌথভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে এমন নীতি এবং উদ্যোগগুলি বিকাশ ও বাস্তবায়ন করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্যারিস চুক্তি বৈশ্বিক জলবায়ু কাঠামো বজায় বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসাবে কাজ করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক এবং এর সুদূর প্রসারী প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক। শিক্ষা এবং সচেতনতা মূলক প্রচার ব্যক্তিদের তাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশ সচেতনতা মূলক অনুশীলন গ্রহণ করতে সাহায্য করতে পারে।তবে এখনও পর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলায় আমরা যেভাবে মন্থর গতিতে এগোচ্ছি তাতে দ্রুত কোনও কার্যকর পদক্ষেপ সম্মিলিত ভাবে গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাইরে চলে যাবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাজা মহম্মদ ও সি সেল মিউজিয়াম

প্রিয়াঙ্কা দত্তঃ রাজা মহম্মদ, এমন একজন মানুষের নাম, যার ব্যাক্তিগত ইচ্ছার কাছে হেরে যায় সব বাধা। ইচ্ছার চেয়ে বলা ভালো নেশা। সামুদ্রিক প্রাণীদের খোল সংগ্রহের নেশা। যা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই ছুটিয়ে নিয়ে বেরিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর ধরে। আর সেই দীর্ঘ পথের শেষে , তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাক্তিগত সংগ্রহশালা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সি সেল মিউজিয়ামটি বর্তমানে চেন্নাইয়ের মহাবলিপূরম মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। রাজা মহম্মদ ছোট্ট বেলা থেকেই  সমুদ্র তট থেকে সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাংশ। কুড্ডালোর থেকে রামেশ্বরম এর সমুদ্রতট, সেখান থেকে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশে গিয়েছেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। সংগ্রহ করেছেন অসাধারণ সব সামুদ্রিক .....বিস্তারিত পড়ুন

চম্পারন মাটন রাজনীতি কি কোনও নতুন সমীকরণ তৈরি করবে

উত্তরাপথঃ সামনে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন ,আর সেই নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে INDIAজোট। মুম্বাইতে বিরোধী INDIA জোটের (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) তৃতীয় বৈঠকের একদিন পরে, কংগ্রেস শনিবার রাহুল গান্ধীর লালু প্রসাদ যাদব এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দিল্লিতে দেখা করার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে তাদের চম্পারন মাটন দিয়ে রান্না এবং রাজনীতি নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে।ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাহুল গান্ধী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্যও মাটন চাইছেন যা প্রিয়াঙ্কা বাড়িতে উপভোগ করেন এবং সন্দেহ করেছিলেন যে রাহুল সত্যিই মাটন রান্না করেছেন কিনা। "সবাই করেছে। আমি রান্না করেছি, লালুজি রান্না করেছে, মিসা রান্না করেছে," রাহুল বলল। .....বিস্তারিত পড়ুন

একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) স্পেন সফরে

উত্তরাপথঃ  একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেনে রয়েছেন। জানা যাচ্ছে, স্পেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বৈঠক হবে ফুটবল নিয়ে। ১৪ সেপ্টেম্বর, মাদ্রিদে লা লিগার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদলের বৈঠক। বাংলা ফুটবলের উন্নতির স্বার্থে সরকারের সঙ্গে কোনও বিশেষ চুক্তি হতে পারে লা লিগার । এই বৈঠকে তাঁর সঙ্গে থাকবেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিংয়ের ক্লাবকর্তারাও। এছাড়াও থাকার কথা  সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও।যদিও তিনি এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন লন্ডনে,সেখান থেকেই ১৪ তারিখ সরাসরি মাদ্রিদ পৌঁছবেন বলে খবর।এরপর স্পেনে মমতার লক্ষ্য রাজ্যের জন্য বিনিয়োগ টানা। রাজ্যে বিদেশি লগ্নি বাড়াতে তিনি সঙ্গে বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে স্পেনে গিয়েছেন।প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ময়দানের তিন ফুটবল ক্লাবের কর্তা, বই প্রকাশকদের একটি দল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ভোরের শুকতারা

অনসূয়া পাঠকঃ বাস ছাড়তে তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিলো, আমি মা বাবার সাথে বাসের ভেতরে জানালার দিকের সিটটায় বসে আছি। এমন সময় দেখি আমাদের পাশের সিটে বসে একজন রবীন্দ্রনাথের সঞ্জয়িতা পড়ছেন, বইটাকে দেখে আমার চোখের সামনে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা পরা মুখ ভেসে উঠলো, চন্দন স্যারের মুখ। বছর পাঁচেক আগের কথা, আমার বাবা তখন জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের আমলাশুলির পোষ্টমাষ্টার। দু কিমি দূরেই আমার পিসীমার বাড়ি। ওখানেই আমার হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু। আর যে স্যার আমার মননে সদা জাগরুক , বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ বলা যায় যাকে , আমার গল্প যাঁকে নিয়ে সেই চন্দন স্যারকে ওখানেই পাওয়া। ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ক়াঁচা পাকা চুল , সরু গোঁফ চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top