ভারত জোড়  যাত্রা রাজনীতির এক নতুন দিগন্ত  

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতো

ছবি সৌজন্য : রাহুল গান্ধীর টুইটার থেকে নেওয়া

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী থেকে একটি যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা প্রথমে তেমন কারো নজরে পড়েনি। এটির নেতৃত্বে ছিলেন কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী। ভারতীয় জনতা পার্টির লাগাতার ট্রোলিং সেই সাথে নিবেদিত আইটি সেল এই যাত্রাকে  প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণের কেন্দ্রে এনে দিয়েছিল। এতদিন রাহুল গান্ধী ছিলেন বিজেপির  সবচেয়ে উপহাস করা রাজনীতিবিদদের একজন।এই প্রথম দেশবাসী  রাহুল গান্ধী ও ভারতজোড় যাত্রাকে সিরিয়াসলি নিতে শুরু করল।

 ভারতজোড় যাত্রার (বিজেওয়াই) মূল লক্ষ্য ছিল দেশের দক্ষিণপ্রান্ত  কন্যাকুমারী থেকে উত্তরে কাশ্মীর পর্যন্ত   মিছিলের মাধ্যমে দেশবাসীর মনে  ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষকে একত্র করা। এই যাত্রায় রাহুল গান্ধী  কাশ্মীরের লালচক অতীতে যেখানে  বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলি  পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করেছিল, সেখানে  জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেন এবং জাতীয়তাবাদের একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাতে জাতীয়  সঙ্গীত গেয়েছিলেন। এই পুরো যাত্রাতে  তিনি যে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি দেখিয়েছেন তা কংগ্রেসকে অনেকদিন পর একটা সমীহ করার মত জায়গায় এনে দিয়েছে।  বিজেওয়াই যে শুধুমাত্র  একটি সাধারন  পদযাত্রা নয় এর লক্ষ্য ২০২৪ তা তিনি তাঁর যাত্রাপথে বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন। গত কয়েক বছরে ভারতীয় রাজনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বর্তমান  রাজনীতি হিন্দু –মুসলিম বিভাজনের রাজনীতির  মধ্যে  সীমাবব্ধ নেই। এই পটভূমিতে, ভারত জোড় যাত্রাতে তিনি দেশের তিনটি প্রধান সমস্যা উত্থাপন করলেন – অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক মেরুকরণ এবং কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি সেই সাথে যুক্ত করলেন বেকারত্ব , মুদ্রাস্ফীতি এবং কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি পালনে অক্ষমতার কথা।

এক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের একটি প্রশ্ন হতে পারে রাহুল গান্ধীর প্রায় ১৫০  দিনের  ৩,৫০০ কিলোমিটার যাত্রায় কারা রাহুল গান্ধীর সাথে অংশ নিয়েছিলেন। শুধুমাত্র কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাই কি ভারত জোড় যাত্রায় হাঁটছিলেন, হঠাৎ এত কংগ্রেস কর্মীদের বন্যা এল কোথা থেকে? সারা দেশে কংগ্রেসের দলীয় অফিস আছে, কোনো কর্মসূচি হলেই সেখানে লোকজন দেখা যায়। কিন্তু এই পরিমাণ জন সমর্থন বহু বছর পর আবার কংগ্রেস প্রত্যক্ষ করল। ভারত জোড় যাত্রার বিশাল জনসমাবেশ ছবি ফটোশপ করা যাবে না আর এখানেই বিজেপির চিন্তা। মোদী ও শাহের মত সিরিয়াস রাজনীতিবিদেরা জানেন ২০২৩ সালে উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলি সহ কর্ণাটক, রাজস্থান, ছত্তিসগড় ও মধ্যপ্রদেশে নির্বাচন। এই সবগুলি রাজ্য বিজেপির কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ তাই কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ের নির্বাচণের কথা মাথায় রেখে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ প্যাকেজ সেইসাথে কর্ণাটকের জন্যও ৫৩০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে উপজাতীয় ভোটার, মহিলা, কৃষক এমনকি গরিবদের জন্য বিনামূল্যে রেশনের ঘোষণা  করা হয়।

বিজেপি জানে জাতীয় ভোটের ২০ শতাংশ অংশ এখনও কংগ্রেসের অক্ষত রয়েছে, অন্যদিকে আম আদমি পার্টি রাষ্ট্রীয় দলের মর্যাদা পেলেও তাদের শক্তি গুজরাট, পাঞ্জাব ও দিল্লি তে সীমাবব্ধ জাতীয় স্তরে ভোটের শতাংশ কংগ্রেসের থেকে কম। আন্যদিকে তৃণমূল, সমাজবাদী, শিবসেনা সবাই এক একটি আঞ্চলিক দল। তাই এদের নিয়ে বিজেপির তেমন কোনও আতঙ্কিত হবার কারন নেই। তাই ২০২৪ সাল পর্যন্ত সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ রাহুল সহ কংগ্রেস। তাই বিজেপি কোনদিন চাইবেনা রাহুল তার ‘পাপ্পু’ ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে এক সিরিয়াস রাজনীতিবিদ হয়ে উঠুক সেই সাথে তাঁর দলের হেরে যাওয়া কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনুক।

অন্যদিকে এই যাত্রাটি বিরোধীদের জন্য রাজনৈতিক জায়গা তৈরি করেছে যাকে কংগ্রেস মতাদর্শের লড়াই হিসাবে বর্ণনা করছে। এটি বিরোধীদের একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করেছে যা ২০১৪ সালে বিজেপির দুর্দান্ত উত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে বিরোধী দল কোথায়? ঠিক তাই, কারণ বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস, সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনও বড়  প্রতিবাদ আন্দোলন করে উঠতে পারেনি। এই  যাত্রা দেখিয়েছে যে বিরোধীরা অ্যাকশনে রয়েছে এবং কংগ্রেস তার নেতৃত্ব দিচ্ছে।  এটি রাহুল গান্ধী এবং তাঁর দলের কর্মীদের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করেছে। প্রচার মাধ্যমের খুব সামান্য আলোকবৃতে থেকেও, এই যাত্রা রাহুল গান্ধীর ভাবমূর্তিকে একজন গুরুতর, সহানুভূতিশীল এবং সাধারণ এক জননেতা হিসাবে তুলে ধরতে  সাহায্য করেছে। যার প্রভাব দেশের রাজনীতিতে  আগামীতে পড়বে বলে আশাবাদী কংগ্রেস ।

খবরটি শেয়ার করুণ

1 thought on “ভারত জোড়  যাত্রা রাজনীতির এক নতুন দিগন্ত  ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top