রাষ্ট্রপতি ভবনঃ মূল ভবন
প্রিয়াঙ্কা দত্তঃ এক বাঙালির বদান্যতায় পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নাগরিকের বাসভবন দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই বাঙালি আর কেউ নন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। যিনি ২০১৬ সালে জনসাধারণের জন্য খুলে দিয়েছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই রাষ্ট্রীয় আবাসস্থল।মূলত তিনটি অংশ দর্শকদের জন্য খোলা থাকে। মেইন বিল্ডিং, মিউজিয়াম আর অমৃত উদ্যান।আহা সে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভাষার অতীত।
ইতিহাস বলে, ১৯১১ সন রাজা পঞ্চম জর্জ যখন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন ভাইসরয় দের বসবাসের জন্য গড়ে তোলা হয় ভাইসরয় হাউস। কাজ শুরু হয় ১৯১২ সালে আর শেষ হয় ১৯২৯ এ। ১৯৫০ সালে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি শ্রী রাজেন্দ্র প্রসাদ এর নিবাস স্থল হিসাবে তার নাম হয় রাষ্ট্রপতি ভবন। ভবনটির মূল স্থপতি স্যার এডুইন লুটিয়েন্স ও হার্বার্ট বেকার । ইউরোপীয় ও ভারতীয় স্থাপত্য কীর্তির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটানো হয় এই ভবন নির্মাণে। তাই ইন্ডিয়া গেট থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, এই পুরো চত্বরটি সেজে উঠেছে অনন্য শৈলীতে। ঝাঁ চকচকে কর্তব্য পথের পশ্চিম প্রান্তে রাষ্ট্রপতি ভবন আর পূর্বে ইন্ডিয়া গেটের অপরূপ সৌন্দর্য এক কথায় অসাধারণ।
জয়পুর স্তম্ভ
বর্তমান রাষ্ট্রপতি ভবনটি গড়ে ওঠে রাইসিনা হিল অঞ্চলে যা সমতল থেকে প্রায় ৫০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। মূল ভবনটি ছড়িয়ে আছে প্রায় পাঁচ একর জমিতে। প্রবেশ দ্বারের সংখ্যা মোট ৩৮ টি। সত্যিই এর বিশালতা দেখার মতো। মূল প্রবেশ দ্বারে রয়েছে ১৪৫ ft উঁচু জয়পুর স্তম্ভ। মহারাজ সোয়াই মাধো সিং উপহার দিয়েছিলেন বৃটিশ সরকারকে। নতুন রাজধানী দিল্লী স্থাপনের স্মৃতি স্বরূপ। কারণ রাইসিনা হিলের বেশিরভাগ অংশ ছিল জয়পুরের মহারাজের সম্পত্তি।
মূল ভবনের মাথায় রয়েছে ১৮ ফুট উঁচু তামার গম্বুজ যা বৌদ্ধ স্থাপত্য রীতি অনুসারে সাজানো। তার মাথাতেই শোভা পায় ভারতের তিরঙ্গা পতাকা। যখন রাষ্ট্রপতি দিল্লীর বাইরে থাকেন তখন পতাকা খুলে দেওয়া হয়। এটি একটি প্রতীক স্বরূপ, যে ভবনের প্রধান বাসিন্দা ভবনের বাইরে আছেন।
অমৃত উদ্যান থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন
৩৪০ টি কক্ষ বিশিষ্ট এই ভবনের প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে আছে ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অজস্র নিদর্শন। চারটি উইংসে বিভক্ত মূল ভবনটি কর্তব্য পথকে (কিংস্ ওয়ে) মাঝে রেখে নির্মিত।মূল ভবনে প্রবেশের পথে ঘোরানো মার্বেলের সিঁড়ি বা লুটিয়েন্স স্টেয়ার এর পা দানি তে বিরাজমান সহস্র হস্ত বিশিষ্ট বুদ্ধ মূর্তি। যা ভিয়েতনামের উপহার ভারতের রাষ্ট্রপতিকে। অবাক করা তার সৌন্দর্য। এর পরেই প্রবেশ দরবার হলে। এই ঘরটির আভিজাত্যই আলাদা। সেখানেই বিশালাকার প্রবেশ দ্বারের সম্মুখে রয়েছে গুপ্ত যুগের প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তি। যার মাথা আর ইন্ডিয়া গেটের মাথার উচ্চতা নাকি এক। সঙ্গে থাকবেন সরকারি ভারপ্রাপ্ত মাষ্টার গাইড। তাঁর অপূর্ব বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে ওঠে দরবার হলে রাষ্ট্রপতিদের শপথ গ্রহণের দৃশ্য টি। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এরপর একে একে দেখে নেবো গেস্ট রুম, অশোক হল, ব্যাংকয়েট হল। অশোক হলের ছাদের পার্সি চিত্র শিল্প আর মেঝেতে পার্সি গালিচার বহর দেখলে তাক লেগে যায়। ব্যাঙ্কয়েট হলে একসাথে ১০৪ জনের বসে খাওয়ায় ব্যাবস্থা আছে আর আছে ব্যান্ড পার্টির আলাদা স্থান। আছে খাদ্য পরিবেশনের লাইট সিগন্যালিং এর ব্যবস্থাও। একেবারেই রাজকীয় ব্যাপার। যাদের বর্ণনা ভাষার অতীত।
দরবার হলের প্রবেশ পথ
পুরো রাষ্ট্রপতি ভবনটি তৈরী হতে সময় লাগে ১৭ বছর। লাল থেকে হালকা লাল রঙের বেলে পাথরে খুব নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল প্রতিটি দেওয়াল। এর ভিতরের অংশে রয়েছে ৯ টি টেনিস কোর্ট, গল্ফ কোর্ট, পোলো গ্রাউন্ড এমনকি একটা আস্ত ক্রিকেট মাঠ ও। ভাবা যায়! রাষ্ট্রপতি ভবনের সমস্ত কর্মীদের জন্য এর বাউন্ডারির মধ্যেই রয়েছে সব ব্যবস্থা। স্কুল, লাইব্রেরি, পোস্ট অফিস ইত্যাদি। এসব চিন্তা ভাবনার বেশির ভাগই কিন্তু প্রণব বাবুর কার্যকরী সিদ্ধান্তের ফল। এমনকি উনি এখানকার স্কুলে শিক্ষকের ভূমিকাও পালন করতেন। যখন ভাবি, গর্বে বুক ভরে যায়।
রাষ্ট্রপতির সংগ্রহশালা
আগে যেখানে ছিলো ভবনের আস্তাবল, গ্যারেজ আর ক্লক টাওয়ার সেখানে হয়েছে রাষ্ট্রপতির সংগ্রহশালা। ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতিদের প্রাপ্ত বিভিন্ন উপহার সামগ্রী, পুরস্কার, বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ,রাষ্ট্রপ্রধানদের ও ভাইসরয়দের ব্যবহৃত বাসনপত্র, আসবাবপত্র আরও হাজারো চোখ ধাঁধানো সামগ্রীতে সজ্জিত বিশাল সংগ্রহ দেখে শেষ হয় না। এটিও উদ্বোধন করেন শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। আন্ডারগ্রাউন্ড তিন তলা এই সংগ্রহালয়ের বিভিন্ন তলায় রয়েছে দেশের সব রাষ্ট্রপতিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। আছে কালাম সাহেবের বীণা, রাজেন্দ্র প্রসাদ এর কলম, প্রণব বাবুর চুরুট আরও কত স্মৃতির সম্ভার। আর আছে শুরু থেকে ২০১২ সাল অব্দি ব্যবহৃত রাষ্ট্রপতিদের ব্যবহৃত কালো মার্সিডিজ গাড়ি, সমস্ত ভাইসরয়দের বিশাল বিশাল তৈল চিত্র, মোমের মূর্তি। তালিকা যেন ফুরোবার নয়।
রাষ্ট্রপতি ভবনের দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বাগিচা অমৃত উদ্যান। ফেব্রুয়ারী আর মার্চ মাসেই সেখানে ঢুকতে পারা যায়। আর এই সময়ই মুঘল গার্ডেনের আদলে তৈরী অমৃত উদ্যান সেজে ওঠে অগণিত ফুলের সমাহারে। ১৫ একর এলাকায় ছড়ানো সহস্র ফুল আর গাছের অপূর্ব সম্ভারে সেজে ওঠে এই সুবিশাল প্রান্ত। কী অপূর্ব সে দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। টিউলিপ,গোলাপ, মরশুমি ফুল এর বাগান,ভেষজ বাগান, বনসাই বাগান, মেডিটেশন বাগান এমন অনেক ভাগে বিভক্ত এই অমৃত উদ্যান। সঙ্গে জলাশয় আর অসংখ্য ফোয়ারার অনন্য উপস্থিতি সমগ্র পরিবেশে ছড়িয়ে দিয়েছে নির্মল আনন্দ।
Musium
ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশের রাষ্ট্রীয় ভবন তো এমনই হওয়া উচিত। তাই না? তাই আর দেরি নয়। সুযোগ পেলে অনলাইনে টিকিট কেটে অবশ্যই দর্শন করুন ভারতের ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি। আর অনুভব করুন ভারতের গৌরব।
আরও পড়ুন
মরশুমের প্রথম ইলিশ ( Hilsa) এল দিঘায়
উত্তরাপথ: মরশুমের প্রথম ইলিশ এল দিঘায় (Digha)। জানা গেছে, সাত থেকে দশদিন আগে ট্রলারগুলি সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল। মৎস্যজীবীরা জানান, মাঝসমুদ্রে ইলশেগুড়ি বৃষ্টি পেয়েছেন। পুবের হাওয়াও ছিল। এটাই ইলিশের পক্ষে অনুকূল আবহাওয়া। তাই ইলিশের দেখা মিলেছে। বেশ কিছু ট্রলার ইতিমধ্যে দিঘায় এসে ঠেকেছে। তাঁরা বলেন, “আরও ট্রলার সমুদ্রে আছে সেগুলো ফিরছে খুব শীঘ্রই । ট্রলারগুলি ফিরে আসায় দিঘার বাজারে আমদানি হল মরশুমের প্রথম ইলিশ যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টন ইলিশ। .....বিস্তারিত পড়ুন
বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোট গঠনের বৈঠকে অংশ নিতে পারে ৩২টি দল
উত্তরাপথ: আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিরোধী জোট গঠনের জন্য বেঙ্গালুরুতে আগামী ১৭-১৮ জুলাই বিরোধী দলগুলির সমাবেশ হতে চলেছে। এই বৈঠকে ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, এবার বিরোধী দলে যোগ দিতে যাচ্ছে আরও নতুন ৮টি দল। এই দলগুলি হল, মারুমালারচি দ্রাবিড় মুনেন্দ্র কাজগাম, কঙ্গু দেস মক্কাল কাচ্চি, বিদুথালা চিরুথাইগাল কাচ্চি, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দল, অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ, কেরালা কংগ্রেস জোসেফ, কেরালা কংগ্রেস মানি ।তবে বিরোধী জোটে যদি সব গুলি দল .....বিস্তারিত পড়ুন
Camel Cloning: দুবাই ‘উট' ক্লোনিং‘এর জন্য খবরের শিরোনামে
উত্তরাপথ: দুবাই, তার ঐশ্বর্য এবং জাঁকজমকের জন্য পরিচিত হলেও এবার দুবাই তার ‘উট ক্লোনিং ‘এর জন্য খবরের শিরোনামে।এবার আশা যাক ক্লোনিং কি তা নিয়ে আলোচনায়। ক্লোনিং হল প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে অভিন্ন জিনোম সহ পৃথক জীব উৎপাদনের প্রক্রিয়া অর্থাৎ জীবের অভিন্ন অনুলিপি তৈরি করার প্রক্রিয়া।২০০৯সালে বিশ্বের প্রথম উটের ক্লোনিংয়ের নেতৃত্ব দেওয়া, নিসার ওয়ানি এখন দুবাইয়ের একটি ল্যাবে বছরে কয়েক ডজন উটের প্রতিলিপি তৈরি করছেন যা উপসাগরীয় অঞ্চলের এখন একটি বড় ব্যবসা যেখানে উট লালন-পালন করা হয় সৌন্দর্য ও রেসিং .....বিস্তারিত পড়ুন
Snake Robot : এবার মহাকাশে সাপ রোবট পাঠাবে NASA
উত্তরাপথ: মহাকাশ অনুসন্ধানের সীমানা আরও বিস্তৃত করতে এবং বহির্জাগতিক পরিবেশের দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে NASA ক্রমাগত উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সন্ধান করেছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল Snake robot বা সাপের মতো রোবট তৈরি করা যা মহাকাশে নেমে যাবতীয় অনুসন্ধানের কাজগুলি করবে এবং সেই সাথে মহাকাশে বসবাসের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করবে। এই যুগান্তকারী সৃষ্টিতে মহাকাশ অভিযানে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা দূরবর্তী এবং প্রতিকূল পরিবেশে গবেষণার কাজ নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন