কেন যাচ্ছেন না ২২ শে জানুয়ারী রাম মন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চার শঙ্করাচার্য ?

শঙ্করাচার্য ও রামমন্দিরের ছবি এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।

উত্তরাপথঃ ২২শে জানুয়ারী রাম মন্দিরের উদ্বোধন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ২২ শে জানুয়ারির তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আলোচনা চলছে কে এতে অংশ নেবেন আর কে নেবেন না। তবে, প্রাথমিক ভাবে যা জানা যাচ্ছে তাতে  চারজন শঙ্করাচার্য অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন।

বিশ্বাস অনুসারে, শঙ্করাচার্য হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরুর পদ।হিন্দু ধর্মে শঙ্করাচার্যকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের চোখে দেখা হয়।আদি শঙ্করাচার্য হিন্দু ধর্মের দার্শনিক ব্যাখ্যার জন্যও পরিচিত।আদি শঙ্করাচার্য হিন্দু ধর্ম প্রচারের জন্য চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  এসব মঠের কাজ ছিল হিন্দু ধর্ম প্রচার করা।  এই চারটি মঠ হল শ্রীঙ্গেরি মঠ, কর্ণাটক, গোবর্ধন মঠ, পুরী ওড়িশা,শারদা মঠ, দ্বারকা গুজরাট এবং জ্যোতির্মথ, বদ্রিকা উত্তরাখণ্ড।হিন্দু ধর্মে এই মঠগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।

আজ, আমরা শঙ্করাচার্যদের অনুপস্থিতির পিছনে সম্ভাব্য কারণগুলি অনুসন্ধান করব ।

১। শঙ্করাচার্যদের মতে ২২ তারিখে রাম মন্দিরের প্রান প্রতিষ্ঠার পেছনে কোনও ধার্মিক ভিত্তি নেই,পুরোটাই শাস্ত্র বিরুদ্ধ। কারণ হিসেবে তারা অসম্পূর্ণ মন্দিরের প্রসঙ্গ এনেছেন।তাদের যুক্তি হিন্দু ধর্মে মন্দিরকে ভগবানের শরীরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অসম্পূর্ণ শরীরে প্রান প্রতিষ্ঠা কি করে সম্ভব?

২। শঙ্করাচার্যরা, আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তাদের অনুপস্থিতি যেকোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরে রাখার একটি সচেতন প্রচেষ্টা হতে পারে। উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে, তারা তাদের আধ্যাত্মিক ভূমিকা বজায় রাখতে এবং স্বার্থের সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব এড়াতে চাওয়ার এক সচেতন প্রচেষ্টা হতে পারে।

৩। শঙ্করাচার্যরা তাদের নিজ নিজ মঠের মধ্যে কঠোর প্রটোকল এবং ঐতিহ্য মেনে চলেন। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি তাদের নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান বা কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।

৪। শঙ্করাচার্যদের অনুপস্থিতিকে তাদের নিজ নিজ মঠের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ বা মতের পার্থক্যের জন্যও হতে পারে। এই মতবিরোধের কারণে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

যদিও শঙ্করাচার্যদের অনুপস্থিতি আলোচনার বিষয় হতে পারে,তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের অ-অংশগ্রহণ রাম মন্দির উদ্বোধনের তাৎপর্যকে হ্রাস করে না। রাম মন্দির উদ্বোধন নিজেই অপরিসীম সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। তবে প্রাধান বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপিকে রাম মন্দিরকে একটি রাজনৈতিক প্রকল্পে পরিণত করার অভিযোগ তুলে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে।

কংগ্রেস একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, “ভগবান রামকে কোটি কোটি ভারতীয় পূজা করে। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু বিজেপি এবং আরএসএস অযোধ্যার রাম মন্দিরকে বছরের পর বছর ধরে একটি রাজনৈতিক প্রকল্পে পরিণত করেছে। এটা স্পষ্ট যে একটি অর্ধেক নির্মিত মন্দির। শুধু নির্বাচনী সুবিধা পাওয়ার জন্যই উদ্বোধন করা হচ্ছে।”

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top