প্রীতি গুপ্তা-মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে আমরা সরস্বতী পুজো করে থাকি। মূলত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ যেসব বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রী আছে তাঁরা প্রত্যেকেই সরস্বতী পুজো করেন। আপাতভাবে দেখলে মনে হতে পারে সরস্বতী হলেন বিদ্যার দেবী। কিন্তু তিনি কি শুধুই বিদ্যার দেবী? দেবী ভাগবত অনুসারে সরস্বতী হলেন ব্রহ্মার পত্নী। তিনি বাক্ দান করেন। তাই তিনি বাগদেবী। তাঁর অপর নাম বাণী বা ভারতী। তিনি ভাষা থেকে শুরু করে সব বিদ্যা দান করেন।
আবার পুরাণ অনুযায়ী এই তিথিতেই ব্রহ্মার মুখ থেকে বিদ্যা ও বুদ্ধির দেবী সরস্বতীর উৎপত্তি। সরস্বতীকে চার বেদের জননী বলা হয়। সূর্যের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছিলেন গায়ত্রী। সূর্য বন্দনার মন্ত্রেও তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায়। পুরাণ মতে, এই গায়ত্রী ছিলেন সরস্বতীরই আর এক রূপ। উল্লেখ্য গায়ত্রীকে বেদমাতা বলা হয়।তাঁর বাগ্মিতার ক্ষমতা ও দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সরস্বতীকে ‘বাগদেবী’ নামে ভূষিত করেন ব্রহ্মা।পুরাণ অনুযায়ী, সরস্বতীর রূপে ব্রহ্মা এতই মুগ্ধ ছিলেন যে, সরস্বতী যে দিকেই থাকুন না-কেন, তিনি যাতে তাঁকে দেখতে পান, এমন কামনা করে বসেছিলেন। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই রয়েছে ব্রহ্মার চারটি মাথা।
বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারেন দেবী। এ কারণে সরস্বতীর আর এক নাম ‘শতরূপা’।ভারতের পূর্বপ্রান্তে সরস্বতীকে শিব ও দুর্গার সন্তান মনে করা হয়।বৌদ্ধ ধর্মেও সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, সরস্বতী ছিলেন মঞ্জুশ্রীর এক সঙ্গিনী। পদ্মাসনে অধিষ্ঠিত সরস্বতী। এই পদ্মকে জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।সরস্বতীর হাতে শোভা পায় বীণা। এটি শুধুমাত্র সুরেরই নয়, তা বুদ্ধি এবং মেধারও প্রতীক।
পঞ্জিকায় চোখ রাখলে দেখা যাবে দিনটি শ্রীপঞ্চমী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা জানি ‘শ্রী’হল লক্ষ্মী দেবীর অপর নাম। লক্ষ্মীদেবী ধন-সম্পদের দেবতা নন। ধনদেবতা কুবের। লক্ষ্মীদেবী জীবনের লক্ষ্য স্থির করে জীবনকে শ্রীমন্ত করে তোলেন। সরস্বতীর আশীর্বাদে বিদ্যালাভ যাতে জীবনকে শ্রীমন্ডিত করে জীবনের লক্ষ্য স্থির করে দেয় তাই সরস্বতীর হাতে যবের শিস দিয়ে তাতে লক্ষ্মীত্ত্ব অর্পণ করা হয়। তাই দিনটি শ্রীপঞ্চমী। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী দুজনেই বিষ্ণুর পত্নী।
দ্বিতীয় মহাবিদ্যা তারা দেবীর অপর নাম হল নীল সরস্বতী। তাই তন্ত্রসাধকদের কাছে নীল সরস্বতী পুজো হল তন্ত্রসাধনার মহোৎসব। দুর্গা পুজোর সময় আমরা যে শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ করে বা শুনে থাকি সেখানে দুর্গার কোন উল্লেখ নেই। সেখানে যে তিন দেবীর উল্লেখ রয়েছে তাঁরা হলেন মহাকালী, মহালক্ষ্মী এবং মহাসরস্বতী। বাংলা বাদে বাকি ভারতের সর্বত্রই এই মহাসরস্বতীর পুজো হয়। তিনি চতুর্ভূজা এবং ত্রিনেত্র। একমাত্র বাংলাতেই দ্বিভূজা সরস্বতীর রূপটি বহুল প্রচলিত। সরস্বতীর বর্ণনায় আমরা দেখি তাঁর গায়ের রঙ কুন্দ ফুল, চাঁদ এবং তুষারের মতন শ্বেতশুভ্র। তাঁর পরনে সাদা শাড়ি। তিনি শ্বেতপদ্মাসনা, শ্বেত পুষ্পশোভিতা, শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা। তিনি যেসব অলঙ্কার পরে রয়েছেন তারও রং সাদা। পুরাণবিদ শিবশংকর ভারতীর মতে সরস্বতী হলেন শুচিতার প্রতীক। জ্ঞান হল নিরাকার এবং জ্যোতির্ময়। আবার জ্ঞানই হল পরম ব্রহ্ম। তাই সবকিছুই রং বিহীন, শুধুই সাদা। তাঁর চার হাতের একটিতে অক্ষমালা, একটিতে বীণা, একটিতে বই এবং আরেকটি হাতে তিনি আশীর্বাদ করছেন। সরস্বতীর বাহন হিসেবে ময়ূর এবং হাঁস দুটোই বহুল প্রচলিত। ময়ূর হল সৌন্দর্যর প্রতীক আর হাঁস হল সেই পরমহংস যে কিনা দুধ এবং জল মিশিয়ে দিলে তার মধ্যে থেকে দুধটুকু আলাদা করে পান করতে পারে। অর্থাৎ জ্ঞান থেকে সার তত্ত্বটি আয়ত্ত করতে পারে।
তবে এই উৎসবের উৎপত্তি নিয়ে অসংখ্য মিথ ও কিংবদন্তি বিদ্যমান। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিংবদন্তি কবি কালিদাসের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে হয়। লোককাহিনী বর্ণনা করে যে কীভাবে দেবী কালিদাসের জীবন বদলে দিয়েছিলেন, একজন গ্রাম্য সাধারণ মানুষ। তার অশিক্ষার জন্য তার স্ত্রীর দ্বারা পরিত্যক্ত, কালিদাস তার জীবন শেষ করার চেষ্টা করে। যাইহোক, তাকে দেবী সরস্বতী দ্বারা থামানো হয়, যিনি তাকে জ্ঞান এবং সৃজনশীলতার বর দেন। কালিদাস ধীরে ধীরে একজন বিখ্যাত কবি হয়ে ওঠেন।
আমাদের রাজ্যে দিনটি ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আশাবাদ ও আশার সাথে যুক্ত।ভক্তরা হলুদ রঙের পোশাক পরেন কারণ হ্লুদ রঙকে দেবীর প্রিয় রঙ বলে মনে করা হয়। ছাত্র ছাত্রীরা বিশ্বাস করে উপবাস করে দেবীর আরাধনা করলে দেবী তাদের জ্ঞান এবং সৃজনশীলতার বর দেবেন।
আরও পড়ুন
সম্পাদকীয়
এ যেন বহুদিন পর বিজেপির চেনা ছন্দের পতন। হিমাচল প্রদেশের পর কর্ণাটক কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির বিজয়রথকে থামিয়ে দিল ।২০১৮ পর থেকে লাগাতার হারতে থাকা একটি দল আবার ২০২৪ সাধারণ নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক হয়ে গেল । ২২৪ সদস্যের কর্ণাটক বিধানসভায় সরকার গঠন করতে গেলে প্রয়োজন ১১৩টি আসন সেখানে কংগ্রেস একাই পেয়েছে ১৩৬টি আসন, বিজেপি পেয়েছে ৬৫ টি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার জেডিএস পেয়েছে ১৯টি এবং অন্যান্য ৪ টি আসন পেয়েছে। যা গতবারের তুলনায় বিজেপির ৩৯ টি আসন কমেছে এবং কংগ্রেসের বেড়েছে ৫৭টি আসন এবং জেডিএসের কমেছে ১৮ টি আসন। কর্ণাটকে কংগ্রেসের এই সাফল্য কি রাজ্যে কংগ্রেসের শক্তিশালী সংগঠনের ফল না কি কর্ণাটকের আগের ক্ষমতাশীল বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ । কর্ণাটকে কংগ্রেসে অনেক বড় নেতা রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শিবকুমার দক্ষ সংগঠক। আগের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার ব্যাপক জনভিত্তি রয়েছে। ভোটের আগে বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেট্টার এবং উপমুখ্যমন্ত্রী সাভাড়ি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে নির্বাচনে লড়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির প্রচারের সবচেয়ে বড় মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপির প্রচারে সব নেতারাই মোদীর নাম করেই ভোট চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হল না ।কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি সেই সাথে কংগ্রেসের লাগাতার প্রচার যা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সুরকে আরও তীব্র করেছে। তাই শুধুমাত্র মোদী ম্যাজিকের উপর ভর করে নির্বাচন জেতা যে আর বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয় কর্ণাটকের জনগণ চোখে হাত দিয়ে তাই দেখিয়ে দিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
হিউম্যানয়েড রোবট ARTEMIS রেডি পরবর্তী RoboCup-এর জন্য
অনয় কিরণ মাহাতো: কেমন যেন লাগে রোবট এর কথা শুনলে। তারপরে আবার হিউম্যানয়েড, ভাবা যায়। হিউম্যানয়েড রোবট এক জটিল anthropomorphic কৃত্রিম মেশিন যা রোবোটিক্স, লোকোমোশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এই হিউম্যানয়েড রোবর্ট এর বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে। ১৮১০ সালে জার্মানির ফ্রেডলিচ কাউফম্যানন প্রথম তৈরি করেছিলেন এক ট্রাম্পেট সৈনিক রোবর্ট। এরপর হুমানোইড রোবর্ট তৈরি করেন আরবের একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আল-যাজরি। এরপর লিওনার্দো দা ভিঞ্ছির আদলে জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর ঈশিগুর .....বিস্তারিত পড়ুন
নাসার দুই মহাকাশ বিজ্ঞানী "Astronaut Hall of fame -এ অন্তর্ভুক্ত হল
উত্তরাপথ: দুই সুপরিচিত, প্রবীণ NASA মহাকাশচারী রয় ডি. ব্রিজেস জুনিয়র এবং সেনেটর মার্ক ই. কেলিকে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে মার্কিন মহাকাশচারী ৬ মে ২০২৩ হল অফ ফেমে (AHOF) অন্তর্ভুক্ত হল, যার ফলে মোট সদস্য সংখ্যা ১০৭ পৌঁছল। উভয় মহাকাশচারীই ৬০ দিনের সম্মিলিত মহাকাশে NASA এর অনুসন্ধান এবং আবিষ্কারের মিশনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। রয় ডি. ব্রিজস জুনিয়র জর্জিয়ার আটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু জর্জিয়ার গেইনসভিলে বড় হয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
বঞ্চনার আর এক নাম শবর
বলরাম মাহাতো: শবর কথাটির উৎপত্তি হয়েছে ‘সগর’ থেকে। ‘সগর’ শব্দের অর্থ হলো কুঠার। বোঝাই যাচ্ছে, শবররা কুঠার হাতে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। সেখান থেকেই শবর নামটির প্রচলন হয়। শবররা বাস করেন পশ্চিম বাংলা, চেন্নাই, মধ্যপ্রদেশ, ছোটনাগপুর আর উড়িষ্যায়। আমাদের দেশে বর্তমানে শবরদের সংখ্যা ২,০০০ এর কিছু বেশি। শবর কোনো একজনের নাম নয়, এটি একটি জনগোষ্ঠীর নাম। বর্তমানে ভারতে এই শবর জনগোষ্ঠী একটি .....বিস্তারিত পড়ুন