আমাদের সুপ্রিম কোর্ট নির্ভর বিচার ব্যবস্থা

উত্তরাপথঃ সম্প্রতি গুজরাট হাইকোর্টের বিচারককে সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা বিহার উচ্চ আদালতে বদলির মামলাটি যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং ভারতের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে৷ বিচারকদের স্থানান্তর একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যার লক্ষ্য দক্ষতা এবং কাজের চাপ বন্টন নিশ্চিত করা।কিন্তু যখন এই ধরনের বদলিকে বিচার বিভাগের সততা ও নিরপেক্ষতা বাজায় রাখার জন্য করা হয়, তখন তা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি মোদী পদবি নিয়ে  রাহুল গান্ধীর ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের অভিযোগের জেরে সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রাহুলকে দু’বছরের জেলের সাজা দিয়েছিল। পরে সুরাত জেলা দায়রা আদালতের দেওয়া  সেই সাজা বহাল রেখেছিল গুজরাত হাই কোর্ট ।রাহুল গান্ধীকে সাজা দেওয়া সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের ‘বেআইনি পদোন্নতি’র উপর স্থগিতদেশ আগেই দেওয়া হয়েছিল । এ বার রাহুলের সাজা বজায় রাখা গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতিকে বদলি করল সুপ্রিম কোর্ট । শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছককে পটনা হাই কোর্টে বদলি করেছে। বিচারপতি প্রচ্ছকের সঙ্গেই বদলি করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন হাই কোর্টের আরও আট জন বিচারপতিকে

সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা এক সাথে এতজন বিচারপতির স্থানান্তর মামলা বিচার বিভাগের সততা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।বিচার বিভাগ যা গণতন্ত্রের ভিত্তি যেখানে একজন সাধারণ নাগরিক আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং নাগরিকদের অধিকার পাওয়ার জন্য নির্ভর করে । বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ঘটনা শুধুমাত্র বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করছে তা নয় এটি গণতন্ত্রের নীতিকেও ক্ষুন্ন করছে।

একটি রাজ্যের উচ্চ আদালত রাজ্যের মানুষের ন্যায় পাওয়া সহ নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার শেষ আশ্রয় স্থল। কারণ আমাদের বেশীর ভাগ মানুষের সাধ্য নেই প্রতিটা মামলা সুপ্রিম কোর্ট এ এসে লড়বার । সেই উচ্চ আদালতের বিচারকরা যদি বাহ্যিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ন্যায়সঙ্গত  বিচার প্রদান থেকে বিরত থাকে তাহলে জনগণ বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাতে বাধ্য।  

সুপ্রিম কোর্টের একটি অপরিহার্য কাজ হল বিচারিক পর্যালোচনার ক্ষমতা।অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের ভারতের সমস্ত কোর্ট এর আইন এবং নির্বাহী কর্মের সাংবিধানিকতা পরীক্ষা করার কর্তৃত্ব রয়েছে । এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে,সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে  সুরক্ষা হিসাবে কাজ করে এবং এটি নিশ্চিত করে যে সরকার  সহ দেশের সমস্ত বিচার বিভাগ এক গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করছে। কিন্তু বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টকে যেভাবে বিচার ব্যবস্থাকে বাঁচাতে যেভাবে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে তা গভীর উদ্বেগের ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top