ছোটগল্পঃ- সীমানা

অনসূয়া পাঠকঃ সম্মিলিত জাতিসংঘের বৈঠক হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো তে। উপস্থিত আছেন গোট বিশ্বের রাষ্ট্র নেতারা। ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে শ্রেয়সী বোস। ম্যাডাম বোস এসেছেন জাতিসংঘের বৈঠকে যোগ দিতে। ফাইভ স্টার হোটেলের আঠারো তলার ব্যালকনি থেকে শহর টাকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা ফাইল পড়ে আছে , কফিটা শেষ করে ওগুলো তে মন দিতে হবে। এমন সময় ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামলো। কেমন যেনো শিহরন অনুভব করে শ্রেয়সী। বাইরের কঠিন আবরন ভেদ করে ভেতরের আবেগ যেনো বেরিয়ে আসে। কাল ঠিক দশটায় বৈঠক , রাত শেষ হতে আর কয়েক ঘন্টা। শ্রেয়সীর মন চলে যায় সুদূর অতীতে।

সানফ্রান্সিসকো শহর টা তার অচেনা নয়। এই শহরকে ঘিরে তার জীবনের কিছু সুন্দর স্মৃতি রয়েছে।
শ্রেয়সী ভারতবর্ষের কোলকাতার মেয়ে , তার বাবা অভিনব বোস ছিলেন একসময় ভারতের রেল মন্ত্রী। পারিবারিক ভাবেই রাজনীতির মধ্যে তার আবর্তন। শ্রেয়সী যখন খুব ছোট তখনই তার মা মারা যান। বাবাই ছিলো তার সব। অভিনব বাবুর প্রিয় ছিলো দুটি জিনিস , তাঁর দেশ ও তাঁর মেয়ে‌।
কুড়ি বছর আগে শ্রেয়সী কে উচ্চ শিক্ষার জন্য স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করেন অভিনব বাবু। সোস্যাল সায়েন্সের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো শ্রেয়সী। ইউনিভার্সিটি তে পরিচয় হয় আয়ান খানের সাথে। নীল চোখ কোঁকড়া চুল ফর্সা লম্বা হ্যান্ডসাম আয়ানের সাথে বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে রূপান্তর খুব একটা দেরি হয়নি। আয়ানের দাদু ভারতীয় এবং তার বাবা কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকতেন। আয়ান সেই বয়সেই খুব ম্যাচিউর রেসপন্সিবেল আর কেয়ারিং ছিলো।

গোল্ডেন গেট ব্রিজে জমজমাট আড্ডায় একটা কোয়ালিটি টাইম কাটাতো তারা। ফেরী বিল্ডিং এর সামনে দুজনে একটা ছবি তুলেছিলো যেটা এখনো শ্রেয়সীর অ্যালবামে বন্দী। আজো শ্রেয়সী আয়ানের স্মৃতি নিয়ে দেশের কাজে ডুবে থাকে।
আয়ানের কথা মনে হতে কেমন যেনো অস্থির হয়ে ওঠে শ্রেয়সী‌। সব বিখ্যাত প্রেমের গল্পের মত তাদের প্রেমের শেষটাও বিষাদময়। হ্যাপি এন্ডিং হলো না ।
যখন শ্রেয়সী ঠিক করে নিয়েছিল সে বাড়িতে জানাবে , সে সময় একদিন ফাইনাল পরীক্ষার পর আয়ান তাকে ওসেন বীচ বেড়াতে নিয়ে গেলো , ওখানে সে যা বললো তার শুনে শ্রেয়সী অবাক হয়ে গেলো। হোটেলে ফিরে শ্রেয়সী ভাবলো তার বাবাকে সব খুলে বলবে , আর তখনই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া ফোন কল , তার কাকু জানালো হঠাৎ ই হার্ট আ্যাটাকে অভিনব বাবু মারা গেছেন। আয়ানকে একটা ছোট্ট মেসেজ দিয়েই শ্রেয়সী ভারতে চলে এসেছিল, সেই শেষ দেখা আয়ানের সাথে।
সময়ের স্রোত বয়ে গেছে কুড়ি বছর।

পরদিন নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই সানফ্রান্সিসকো অপেরা হাউসে চলে এলো শ্রেয়সী। করিডোর পেরুতেই দেখে সামনে যেনো কে দাঁড়িয়ে, সামরিক পোশাকে সুসজ্জিত পাকিস্তানের সেনা প্রধান আয়ান খান । শ্রেয়সীর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে “হাউ আর ইউ ম্যাডাম “? আয়ান ইউনিভার্সিটি থেকেই শ্রেয়সী কে ম্যাডাম বলে ডাকতো। শ্রেয়সী অপলক তাকিয়ে থাকে আয়ানের দিকে। আয়ান যেদিন শ্রেয়সী কে ওসেন বীচে বলেছিলো সে পাকিস্তানের, তার দেশ পাকিস্তান , তার স্বপ্ন পাকিস্তানকে টেরিরিজম থেকে মুক্ত করে সুন্দর রাষ্ট্রে পরিনত করা সেদিন শ্রেয়সী অবাক হয়েছিলো , তখনই বুঝেছিলো তাদের চার হাত এক হওয়া এতো সহজ নয়। আয়ান সেদিন বলেছিলো আমার দেশের সাথে আর যদি কিছু প্রিয় থাকে তাহলে সেটা তুমি ম্যাডাম।
আর পাঁচ মিনিট পর বৈঠক শুরু , শ্রেয়সী আয়ানের হাতে হাত মিলিয়ে একটু মুচকি হেসে বলে , আই অ্যাম গুড , অ্যান্ড গ্ল্যাড টু সি ইউ, হাউজ ইওর লাইফ গোয়িং? আয়ান বলে ,” লাইফ ইজ গুড উইথ দ্যা মেমোরিজ অফ মাই ম্যাডাম”।
তারা এগিয়ে যায় কনফারেন্স রুমের দিকে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top