শরীর ঠিক রাখতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সম্পর্কে সচেতনতা কেন জরুরি

উত্তরাপথঃ ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থার এক নীরব সংকটের নাম — মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ঘাটতি। আমরা যখন প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব বা ফিটনেস ব্লগে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক নানান ধরনের খাবার, নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট এবং ডায়েটের পরামর্শ দেখি থাকি। তবে এত কিছু থাকলেও ভারতের মতো দেশে অনেক মানুষ আসল সত্য থেকে দূরে সরে যান — শরীরের সুস্থতার মূল ভিত্তি লুকিয়ে আছে ছোট ছোট কিছু পুষ্টিতে, যেগুলোকে আমরা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বলি। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাবের কারণে আমাদের দেশের একটা বড় অংশের মানুষ রোগভোগ করছেন। আসলে, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের সচেতনতা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

বর্তমানে আমরা প্রতিদিনই জেনে থাকি নানান ধরনের খাবার, নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট এবং ডায়েটের পরামর্শের সমারোহ। তবে এত কিছু থাকলেও ভারতের মতো দেশে অনেক মানুষStill মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাবের কারণে রোগভোগ করছেন। আসলে, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের সচেতনতা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, চলুন তাও জেনে নিই।

কি এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট?

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বলতে বোঝায় ভিটামিন খনিজ (minerals) — যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, বি১২, জিঙ্ক, আয়োডিন ইত্যাদি। এগুলো আমাদের শরীর প্রতিদিন খুব সামান্য পরিমাণে চায়, কিন্তু এদের অভাবে দেখা দেয় গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা — শিশুদের বেড়ে ওঠা ব্যাহত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বাড়ে জটিলতার ঝুঁকি, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে।

কিভাবে ভারতীয়দের স্বাস্থ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব? 

ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাসে নানা রকমের বৈচিত্র্য থাকলেও, আধুনিক জীবনের চাপ, দ্রুত খাবার খাওয়া  ও ভেজাল দুর্বিষহ করে তুলেছে পুষ্টির মান। বিশেষত, সুষম খাদ্য অভাবে আইরন, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, ডি ও বি কমপ্লেক্সের ঘাটতি দেখা যায়। এর ফলশ্রুতিতে নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে যেমন: অ্যানিমিয়া, শারীরিক দুর্বলতা, ইমিউন সিস্টেমে সমস্যা, চোখের বা হাড়ের রোগ। 

ভারতের বাস্তব চিত্র কতটা ভয়াবহ?

জাতীয় পুষ্টি সমীক্ষা ও UNICEF-এর তথ্য বলছে:

  • ভারতে প্রতি দুজন মহিলার একজন রক্তাল্পতায় ভোগেন (অ্যানিমিয়া)
  • শিশুদের মধ্যে ভিটামিন A D-এর ঘাটতি অত্যন্ত সাধারণ
  • দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারে আয়োডিনের অভাবে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে

এই তথ্যগুলো শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক নয় — এগুলো প্রতিটি ভারতীয় পরিবারের স্বাস্থ্য সংকটকে চিহ্নিত করে।

ভুল তথ্যের ঝড় এবং সাপ্লিমেন্টের বাজার

আজকের দিনে স্বাস্থ্য নিয়ে হাজারো ভিডিও, পোস্ট, ইনফ্লুয়েন্সার পরামর্শে বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ নিজের মতো সাপ্লিমেন্ট খাওয়া শুরু করে দেয়। কিন্তু এখানে দুটো বড় বিপদ রয়েছে:

১। নিজে থেকে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া স্বাস্থ্যহানিকর হতে পারে, যদি তা দেহের চাহিদা অনুযায়ী না হয়। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণ করলে যকৃতের সমস্যা হতে পারে।

২। অনলাইন তথ্য সবসময় বিশ্বাসযোগ্য হয় না। প্রমাণ-ভিত্তিক চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া পুষ্টি সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া আত্মঘাতী হতে পারে।

সমাধান কী?

মেডিক্যালি গাইডেড নিউট্রিশন অ্যাপ্রোচ:

প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক চাহিদা আলাদা। তাই রক্তপরীক্ষা বা স্বাস্থ্য পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত বা অনাবশ্যক সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে চলুন এবং শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করুন। 

 সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা কর্মসূচি:

আশা জাগে কেন্দ্রীয় সরকারের POSHAN Abhiyaan ও মিড ডে মিল প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগ দেখে, কিন্তু সেগুলোর ব্যাপক বাস্তবায়ন ও মানুষকে সচেতন করা আরও জরুরি।

 খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

  • আয়রনের জন্য: পালং শাক, কলা, ডাল
  • ক্যালসিয়ামের জন্য: দুধ, ছানা
  • ভিটামিন A ও D-এর জন্য: ডিম, মাছ, রোদে কিছুক্ষণ সময়

ভারতের মতো জনবহুল দেশে শুধুমাত্র বড় রোগ নয়, ছোট ছোট পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আজ প্রয়োজন তথ্য নয়, সঠিক তথ্য; চিকিৎসা নয়, সঠিক পদ্ধতি। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের গুরুত্ব নিয়ে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিই পারে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম করে তুলতে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top