ChatGPT শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ ?

উত্তরাপথ

ChatGPT বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ বিশেষকরে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এবার আসা যাক ChatGPT নিয়ে ছাত্র সমাজের কেন এত আগ্রহ? ChatGPT হল একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence)। OpenAI এটিকে ২০২২ নভেম্বরে বাজারে আনে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মুহূর্তে পেতে পারে এছাড়াও এই অ্যাপ ইমেল, প্রবন্ধ সেই সাথে কোড রচনার কাজেও সাহায্য করে।

এবার আসাযাক ChatGPT র কাজ প্রসঙ্গে ধরুন আপনি রবীন্দ্রনাথের মত কবিতা লিখতে আগ্রহী অথচ আপনি কবিতার কিছুই জানেন না, এটি আপনার জন্য মাত্র ২ মিনিটে রবীন্দ্রনাথের মত কবিতা লিখে দেবে। যদি আপনি কোনও আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান চান সেক্ষেত্রেও আপনি  খুব সুন্দরভাবে আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। আবার আপনি যদি একটি ব্যবসা শুরু করবেন ভেবেছেন অথচ ব্যবসার কিছুই জানেন না, সেক্ষেত্রেও ChatGPT আপনাকে আপনার ব্যবসার সমস্ত কিছু  দু- এক কথায় উত্তর না দিয়ে বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে দেবে। এটি একজন শিক্ষক বা অভিভাবকের মতো মানুষের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য প্রদান করে এবং কথোপকথনের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেয়।

ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এই অ্যাপ  একটি উত্তম শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে। এটি তাদের সমস্ত সংসয় দূর করতে সাহায্য করে। ২৪ x ৭। অর্থাৎ একজন ছাত্র তার সমস্যার সমাধানের জন্য সব সময় এই অ্যাপের সাহায্য পেতে পারে। এই অ্যাপ সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ উপযোগী হতে পারে যারা শিক্ষার উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্ছিত। সেইসাথে ChatGPT ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে শিক্ষা গ্রহণের এক সাশ্রয়ী সমাধান হতে পারে।

তবে উপরিয়ুক্ত সুবিধাগুলি থাকলেও মাত্র কিছুদিনের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার শিকার ChatGPT । জাপানের টোকিওর শোফীয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি ইটালি সাময়িক ভাবে ChatGPT কে তাদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া চীন, সিরিয়া, কিউবা, ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া তাদের দেশে ChatGPT কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন প্রশ্ন কেন এই সব দেশ তাদের দেশে ChatGPT নিষিদ্ধ ঘোষণা করল? এটি মানব সমাজেরর জন্য বর না অভিশাপ ?

যারা তাদের সন্তানদের মধ্যে মানসিক সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে চান তাদের ক্ষেত্রে ChatGPT কতটা তাদের সন্তানদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে তা শুধুমাত্র সময় বলে দেবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম তাদের মোবাইল ফোনের ভিতরে থাকা এই টুলের মাধ্যমে ভালো বই পড়ে উপকৃত হবে না কি উৎকর্ষতার খোঁজে নিজস্ব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে পুরোপুরি যন্ত্র চালিত মানুষে পরিনত হবে। এই অ্যাপ এর বহুল ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা কোনও সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করার বা নিজেরাই সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা হারাতে পারে। বেশী সময় ধরে ChatGPT-র ব্যবহার মানুষের মেধার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকট। এটির ব্যবহার আমাদের সঙ্গীত, সাহিত্য এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়াও এই অ্যাপের ফলে কর্মসংস্থান ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেতে পারে, যার প্রভাব অর্থনীতির উপর পড়তে বাধ্য।

ChatGPT পূর্ব-প্রোগ্রাম করা ডেটা ব্যাঙ্কের সূচনার উপর ভিত্তি করে প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে ঠিকই কিন্তু একজন মানব শিক্ষকের মত একই স্তরের সৃজনশীলতা প্রদান করতে পারে না। যা একজন শিক্ষার্থীর শেখার আগ্রহকে সীমিত করতে পারে। ChatGPT ইন্টারঅ্যাকশনের মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ করে এবং সেই ডেটা অনুপযুক্তভাবে ব্যবহার করা বা ভুল হাতে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তবে অস্বীকার করার উপায় নেই ChatGPT-র সুবিধাগুলি ত্রুটিগুলির চেয়ে অনেক বেশি। ChatGPT শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ঠিকই, তবে এটি কে  মানব শিক্ষকদের প্রতিস্থাপন হিসাবে দেখা উচিত নয়। ChatGPT এর সীমাবদ্ধতাগুলি বুঝে  ছাত্রদেরকে দায়িত্বের সাথে অ্যাপটি ব্যবহার করতে হবে,সেই সাথে নিজস্বতা বজায় রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সঠিক পদ্ধতির সাথে ChatGPT-র ব্যবহার আধুনিক শ্রেণী কক্ষের একটি মূল্যবান সংযোজন হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের আরও তথ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top