উদয়পুরে রৌপ্য রথে ভগবান যান শহর পরিদর্শনে

উত্তরাপথ

জগন্নাথ রথযাত্রা, ভগবান জগন্নাথকে উৎসর্গ করা একটি বার্ষিক রথযাত্রা। ভারতের বিভিন্ন অংশে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসাবে পালিত হয় । উদয়পুর, রাজস্থান রাজ্যের একটি শহর,এখানকার ৪০০ বছরের পুরানো জগদীশ মন্দির থেকে এই রথযাত্রার সূচনা হয়। ঐতিহাসিক মতে এই জগদীশ মন্দিরটি ১৬৫২ সালে মহারানা প্রতাপের প্রপৌত্র মহারানা জগৎ সিং প্রথম দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে উদয়পুরে রৌপ্য রথে ভগবান যান শহর পরিদর্শনে যা দেশ-বিদেশের সমস্ত অঞ্চলের ভক্তদের আকর্ষণ করে। তবে উদয়পুরের এই জগন্নাথ রথযাত্রার শিকড় রয়েছে ওড়িশার প্রাচীন শহর পুরীতে, যেখানে এটি বহু শতাব্দী ধরে পালিত হয়ে আসছে। রথযাত্রার এই ঐতিহ্যটি উদয়পুরে আনা হয়েছিল ভক্তদের দ্বারা যারা ওডিশা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। সেই থেকে, রথযাত্রা উদয়পুরের সাংস্কৃতিক কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ।

উদয়পুরের জগন্নাথ রথযাত্রা একটি সুনির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান অনুসরণ করে। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হল ৮০ কেজি রৌপ্য দিয়ে তৈরি বিশাল রথটি যা তৈরি করা হয়েছে ক্লামশেল সেগুন থেকে,তার উপরে রূপার প্রলেপ দিয়ে রথটি তৈরী করা হয়েছে।  রৌপ্য রথটি ৮ফুট চওড়া, ১৬ ফুট লম্বা এবং ২১ ফুট উঁচু ।এতে ভগবান জগন্নাথ স্বামী, মাতা লক্ষ্মী, দানি রায় জির সঙ্গে বসে শহর ভ্রমণে যান।  রথযাত্রার শুরুর আগে ২১ টি বন্দুকের স্যালুট দেওয়া হয়। রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ভক্তরা এবং রথ টেনে আসা ভক্তরা উভয়ই ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাদা জব্বা, পায়জামা, ধুতি, মাথায় পাগড়ি পরে।  মহিলারা জগদীশ মন্দির থেকে রথযাত্রায় অংশ নেয় এবং ভজন গান করেন। উদয়পুরের লোকেরা রথযাত্রায় অংশ নেওয়াকে সম্মান জনক বলে মনে করে সেই কারণে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।  শোভাযাত্রার সাথে রয়েছে ভক্তিমূলক গান, নৃত্য পরিবেশনা এবং স্তোত্রগানের মাধ্যমে  ভক্তরা ভগবান জগন্নাথের প্রতি তাদের ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।পুরো যাত্রাপথের পরিবেশ ভক্তি ও আনন্দে পরিপূর্ণ থাকে। রথযাত্রা পথে প্লাস্টিক, আতশবাজি ইত্যাদির ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।

তবে বর্তমানে উদয়পুরের এই রথযাত্রা সম্পূর্ণ হাইটেক হয়ে গেছে।সিলভার রথে হাইড্রোলিক ব্রেক আছে।৮০ কিলো রৌপ্য ব্যবহার করে হায়দ্রাবাদি খোদাই করা রথ দেবতাকে শহর ভ্রমণের জন্য নিয়ে যায়।২০০২ সালে, একটি রৌপ্য রথযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আড়াই লাখ টাকায় একটি কাঠের রথ তৈরি করা হয় এবং তাতে ৪৫ কেজি রূপা দিয়ে বানানো হয় এখন ব্যবহৃত রথ নতুন।

এই রথযাত্রা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে কারণ এই রথযাত্রা দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসে যা এই অঞ্চলে পর্যটনকে বাড়িয়ে তোলে, । স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবং বিক্রেতারা শোভাযাত্রার রুটে অস্থায়ী স্টল স্থাপন করে, বিভিন্ন পণ্য এবং ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার সরবরাহ করে।

উদয়পুরের জগন্নাথ রথযাত্রা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে চলে আসা  ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। উৎসবটি তরুণ প্রজন্মকে তাদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের সাথে সংযুক্ত হওয়ার এবং তাদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের গভীর উপলব্ধি অর্জনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


আমন্ত্রণপত্রে, বর ও কনের নামের সাথে আইআইটি লেখায় বিতর্ক সোশ্যাল মাধ্যমে  

উত্তরাপথঃ বিবাহের সময়, অভিনব এবং ডিজাইনার আমন্ত্রণ কার্ডগুলি সর্বদা সকলের আলোচনায় পরিণত হয়। কিছু আমন্ত্রণ পত্র বিলাসবহুল চকোলেটের সাথে কাস্টমাইজ করে বানানো হয়,আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বায়োডিগ্রেডেবল কার্ডের সাথে  উপহার হিসাবে গাছ দেওয়া হয়।  সম্প্রতি, একটি পুরাতন বিবাহের আমন্ত্রণপত্র ইন্টারনেটে ভাইরাল হচ্ছে যা বর এবং কনের শিক্ষাগত যোগ্যতা গুলিকে হাইলাইট করে বানানো হয়েছে । অর্থাৎ কার্ডে বর ও কনের নামের সাথে তাদের পড়াশোনার ডিগ্রিকেও যুক্ত করা হয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

বৈধ নথি ছাড়া প্লেনে ওঠার চেষ্টা এটি কি নিছক কৌতুহল মেটানো

উত্তরাপথঃ এটি কি নিছক কৌতুহল না কি কিশোর দুস্ক্রিয়তা। সম্প্রতি বাংলাদেশ এর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট, টিকিট বা বোর্ডিং পাশ কোনও কিছু ছাড়াই জুনায়েদ নামের ১২ বছরের এক শিশু বৈধ নথি ছাড়া বিনা বাধায় কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও প্লেনে চড়তে ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। এবার কৌশল পালটে বিমানবন্দরে ঢোকে শিশুটি। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি বিভাগের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শাতে বলা  হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। যে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে, সেই কুয়েত এয়ারলাইন্সকেও শোকজ করা হয়েছে।  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, ছেলেটি ব্রোকেন ফ্যামেলি .....বিস্তারিত পড়ুন

রাজা মহম্মদ ও সি সেল মিউজিয়াম

প্রিয়াঙ্কা দত্তঃ রাজা মহম্মদ, এমন একজন মানুষের নাম, যার ব্যাক্তিগত ইচ্ছার কাছে হেরে যায় সব বাধা। ইচ্ছার চেয়ে বলা ভালো নেশা। সামুদ্রিক প্রাণীদের খোল সংগ্রহের নেশা। যা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই ছুটিয়ে নিয়ে বেরিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর ধরে। আর সেই দীর্ঘ পথের শেষে , তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাক্তিগত সংগ্রহশালা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সি সেল মিউজিয়ামটি বর্তমানে চেন্নাইয়ের মহাবলিপূরম মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। রাজা মহম্মদ ছোট্ট বেলা থেকেই  সমুদ্র তট থেকে সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাংশ। কুড্ডালোর থেকে রামেশ্বরম এর সমুদ্রতট, সেখান থেকে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশে গিয়েছেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। সংগ্রহ করেছেন অসাধারণ সব সামুদ্রিক .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়

বিশ্ব উস্নায়ন এবং তাকে কেন্দ্র করে জলবায়ু পরিবর্তন একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এটি  ধীরে ধীরে একাধিক উপায়ে মানব সমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি প্রায় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।ইতিমধ্যে এটি আমাদের পরিবেশ, অর্থনীতি এবং আমাদের জীবন যাত্রার উপর ব্যাপক ভাবে প্রভাব দেখাতে শুরু করেছে ।সদ্য হয়ে যাওয়া হিমাচল প্রদেশের বন্যা আমাদের সামনে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিল । এবছর হিমাচল প্রদেশে বর্ষাকালে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে ,যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বহু গুণ বেশী।  ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হিমাচল প্রদেশে ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪৯.৬ মিমি যা স্বাভাবিক গড় ৭৬.৬ মিমি থেকে প্রায় ৭০% বেশী .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top