নজরে ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবস

ছবি সৌজন্য – মৈত্রেয়ী চৌধুরী

মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ আজ আমরা ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছি গেরুয়া, সাদা, সবুজ রঙের পোশাকে, আবীর খেলায় আর পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ।আজ স্বাধীনতা দিবস পালান মানে দেশাত্মবোধক গান  দোকান থেকে শপিং মল , পাড়ায়, পাড়ায় সর্বত্র। বিদ্যালয়গুলিতে কচিকাঁচার দল দেশাত্মক বোধক গান, নাচ, আবৃত্তি র মাধ্যমে দেশ মাতৃকার আরাধনা করছে। আচ্ছা বলুন তো  দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা কি শুধু ই একটা দিনে আবদ্ধ ? ভাবছেন তো কেন বললাম এই কথা?  এটাও ভাবছেন যে আমি তো প্রতিটা দিন গর্ব অনুভব করি ভারত মায়ের সন্তান হিসেবে, তাই তো? একদম ঠিক। আজকের আমার আলোচনা গুটিকয়েক মানুষ কে নিয়ে নয়। আজকে আমার কাছে সেই সব মানুষের জবানবন্দি রয়েছে, যারা প্রতিটা দিন লড়াই করছে বেঁচে থাকার,বাস্তব সমাজের কঙ্কালবৎ চেহারা দেখেও সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অক্ষমতায় কাতর একজন মানুষ, অন্যায় সহ্য করাটা যাদের অভ্যেস হয়ে গেছে  সেই সব মানুষের কথাই আজকে আমার বিষয়।

শুরু করার আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য পড়াশোনা করতে আসা স্বপ্নদীপের  মতো একটি তরুন প্রাণের ঝরে পড়া কিছু বর্বরচিত মানুয়ের জন্য সেই মর্মান্তিক ঘটনাকে সাক্ষী করেই আজকের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা

তীর্থঙ্কর দত্ত (টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার)  ভারতের স্বাধীনতা অবশ্যই দরকার ছিল, তবে বর্তমানে রাজনৈতিক দলের চাপে আমরা তো নিজেদের  সঠিক মন্তব্য  প্রকাশে ভয় পায় , তাই  ইচ্ছে থাক আর নাই থাক তেলা মাথায় তেল দিতে হয়।স্বাধীন ভাবে চাকরিটা  করছি, কথায় কথায় তো কাউকে  তোষামোদ করতে হয় না, চলাফেরা বা ধরুন  নিজের ইচ্ছে মত অবশ্যই  নিত্য নৈমিত্তিক জীবনযাপনের স্বাধীনতা তো রয়েছে। এটিই হইতো ভারত মায়ের স্বাধীনতার  ফসল।

পৌলমী রায়চৌধুরী (স্কুল শিক্ষিকা) আমার  কাছে ভারত স্বাধীন একটি দেশ, এইমাত্র। দেখুন না  সরকারী  চাকুরীজীবী, সরকারের উপর নির্ভরশীল। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, ঔষধের দাম তো আকাশ ছোঁয়া। রাজ্য সরকার মনে করছেন  ডি.এ বাড়াবেন না,ব্যস হয়ে গেল। কি করবো বলুন তো আমরা মধ্যবৃত্ত ব্যক্তিরা। বাড়ির দায়িত্ব, স্কুলের দায়িত্ব পালন করছি কিন্তু স্বাধীনভাবে চলতে গেলে যতটা অর্থের প্রয়োজন তা নেই তাই এই বিষয়টি আমার কাছে অবান্তর।

রাজু আহমেদ (টেলার) দেখুন ১৫ ই আগস্ট আমাদের কাছে কিছু টাকা হঠাৎ রোজগারের সুযোগ। গত তিন দিন ধরে মোটামুটি দুশোটি পতাকা তৈরি করেছি। অর্ডার আছে আরও অনেকগুলো। তবে যদি বলেন দেশ স্বাধীনের কথা  তবে বলবো কি আমি তো পরাধীন ভারতে জন্মায়নি, তাই ঠিক বলতে পারবো না তখন কি হতো কিন্তু এখন পার্টিগুলোই তো ইংরেজদের মতো কাজ করে। প্রত্যেক মাসে আমাদের কাছ থেকে তোলা আদায় করতে আসা ছেলের দল যা ইচ্ছে করে, কিছু বলার উপায়  নেই।

যা ইচ্ছে মানে জানতে চাওয়াতে  বলেন ইচ্ছে করে হাতের সামনে যা পাবে ভেঙে ফেলবে, নিয়ে নেবে বা মারধরও করে। তাই থাক এই বিষয়ে আর কিছু বলবো না।

রজনী বেগম (পরিচারিকা) কি বলছো বলেই একগাল হেসে বলল আমি কিছু জানি না। খাটতে পারি বলেই তো পয়সা রোজগার করতে পারছি। দিন আনি দিন খাই , আমাদের আবার স্বাধীনতা কি গো? ভোট দিতে গেল তো আগেই ভোট পরে যায়, কয়েক বছর থেকেই তো ভোট দিতে পারি না। আর ভোট দেওয়া নিয়ে অশান্তি করলে তো ফটো করে দেবে।পার্টি গুন্ডাদের ভয়ে ভয়ে আমাদের থাকতে হয়।

রমা সূত্রধর (গৃহবধূ)

অবশ্যই ভারতের স্বাধীনতা দরকার ছিল, আমি গর্বিত আমি ভারতীয়। রাজ্য সরকার আমাদের মতো গৃহবধূদের কথা ভেবে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প চালু করেছেন।প্রতিমাসেই  সময় মতো টাকা পাই।

আর দেখুন গুন্ডামী, মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচার এসব তো আজ যুগের ধর্ম। কোনো রাজনৈতিক দল কি বলে যে এইসব করতে? আপনিই বলুন?

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


জানুন ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক ডঃ শীলা অসোপা'র কথা

ত্তরাপথঃ ডঃ শীলা অসোপা, সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শ্যাম সদন, যোধপুরের অধ্যক্ষা, তিনি ১৭ বছর ধরে স্কুলের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন।তাঁকে শিশুদের শেখানোর নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, স্কুলের অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং উদ্ভাবনের জন্য ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষক পুরস্কারে পুরুস্কৃত করা হয়।  ডঃ অসোপাকে, যোধপুরে শ্যাম সদন, সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, ১০ মাস আগে বদলি করা হয় । সেই সময় দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে মাত্র দুটি কক্ষ ছিল।মেয়েরা টিনের চালা দিয়ে তৈরি ঘরে পড়াশোনা করত।  ঘর কম থাকায় গাছের নিচেও ক্লাস হত । তার কথায় ,সেই সময়টা বাচ্চাদের পড়াশুনা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় কেটেছে । এরপর টিনের চালা দিয়ে তৈরি কক্ষে কাঠের পার্টিশন দিয়ে ৬টি কক্ষ তৈরি করা হয়। .....বিস্তারিত পড়ুন

রবি কিরণে “আদিত্য”

ড. সায়ন বসুঃ বীর "বিক্রমে" চাঁদের মাটিতে পা রাখার পর এবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র (ISRO)-এর লক্ষ্য সূর্য | আমাদের ৮টি গ্রহ (প্লুটো এখন বামন গ্রহের তালিকায়) যাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেই সূর্যের দিকে পাড়ি দিয়েছে "আদিত্য" ২রা সেপ্টেম্বর| চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের ১০ দিনের মাথায় আদিত্যকে সূর্যের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে ISRO বাকি বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলির কাছে যে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছে তা বলাই বাহুল্য| আদিত্য মিশনের সূচনা ২০০৮ সালের জানুয়ারী মাসে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত একটি উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে|প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয় যে একটি ছোট এবং কম ওজনের (৪০০ কেজি) কৃত্রিম উপগ্রহকে low Earth orbit (LEO ;লিও) যে কক্ষপথের উচ্চতা ১,২০০ কিলোমিটারের থেকে কম সেখানে পাঠানো হবে এবং তার কাজ হবে সূর্যের একদম যে বাইরের স্তর যাকে আমরা সৌর-করোনা বলি তার সম্বন্ধে তথ্য পাঠানো। .....বিস্তারিত পড়ুন

ভোরের শুকতারা

অনসূয়া পাঠকঃ বাস ছাড়তে তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিলো, আমি মা বাবার সাথে বাসের ভেতরে জানালার দিকের সিটটায় বসে আছি। এমন সময় দেখি আমাদের পাশের সিটে বসে একজন রবীন্দ্রনাথের সঞ্জয়িতা পড়ছেন, বইটাকে দেখে আমার চোখের সামনে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা পরা মুখ ভেসে উঠলো, চন্দন স্যারের মুখ। বছর পাঁচেক আগের কথা, আমার বাবা তখন জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের আমলাশুলির পোষ্টমাষ্টার। দু কিমি দূরেই আমার পিসীমার বাড়ি। ওখানেই আমার হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু। আর যে স্যার আমার মননে সদা জাগরুক , বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ বলা যায় যাকে , আমার গল্প যাঁকে নিয়ে সেই চন্দন স্যারকে ওখানেই পাওয়া। ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ক়াঁচা পাকা চুল , সরু গোঁফ চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, .....বিস্তারিত পড়ুন

লোকসংস্কৃতির আলোকে মালদার শতাব্দী প্রাচীন গম্ভীরা  

মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের একটি জেলা মালদা। আমের জন্য এই জেলাটি পরিচিতি লাভ করলেও এই জেলা আর ও একটি কারণে বিখ্যাত, তা হল গম্ভীরা । মালদার নিজস্ব লোকসংস্কৃতি।গম্ভীরা শব্দটি প্রকোষ্ট, গৃহ বা মন্দির অর্থের সঙ্গে আভিধানিক মিল থাকলেও এই অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত আকাশের নিচে বা কোথাও চাঁদোয়া বা ত্রিপল  দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন স্বয়ং দেবাদিদেব। এই উৎসবের তিনি 'নানা' নামে পরিচিত।একজন শিবের সাজে থাকেন, আর দেবাদিদেবের চেলার মতো কিছু সংখ্যক সেই নানার ভক্ত হয়ে খোল, করতাল হাতে উনার সঙ্গী হন। বাস্তব জগতের এবং পারিপার্শ্বিক যা মা সমস্যা থাকে তা  চেলার নানার কাছে অভিযোগ জানান, যেন নানা সেই অভিযোগ শুনে তার সমাধান করেন।শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই ভিড় করে জমায়েত .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top