

NASA-র Curiosity rover-র অবিশ্বাস্য উপগ্রহ দৃশ্য যখন এটি মঙ্গল গ্রহে মন্ট মেরকো আরোহণ করছে। ছবিটি NASA/JPL/UArizona এর X-একাউন্ট থেকে গৃহীত।
উত্তরাপথঃ মহাকাশ অনুসন্ধানের এক বিস্ময়কর অগ্রগতিতে, NASA এর কিউরিওসিটি রোভার (Curiosity rover) যা তথ্য সংগ্রহ করেছে তা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার পরিবর্তন করতে পারে। মঙ্গলগ্রহের উপরিভাগে বহু বছর ধরে ব্যাপক অনুসন্ধানের পর, কিউরিওসিটি রোভার লাল গ্রহে প্রাণের উপস্থিতি সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর প্রমান সংগ্রহ করেছে। এই উদ্ঘাটন বহির্জাগতিক জীবনের সন্ধানে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে ।
কিউরিওসিটি, একটি অত্যাধুনিক রোভার, যা মঙ্গল গ্রহের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস, জলবায়ু এবং এর পরিবেশের সম্ভাব্য বাসযোগ্যতা মূল্যায়নের প্রাথমিক মিশন নিয়ে আগস্ট ২০১২ সালে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেছিল। বছরের পর বছর ধরে, এটি মঙ্গলগ্রহের অমূল্য ডেটা এবং ছবি প্রদান করে আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু যা বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে আলোড়িত করেছে তা হ’ল রোভারের সাম্প্রতিক আবিষ্কার। মঙ্গল পৃষ্ঠের একটি বৃহৎ বেসিন, গেল ক্রেটারে NASA-এর কিউরিওসিটি রোভার দ্বারা সংগৃহীত ডেটা পরীক্ষা করে গবেষকদের একটি দল আরও প্রমাণ করেছে যে মঙ্গল গ্রহে নদীগুলি এক সময় লাল গ্রহের উপর দিয়ে প্রবাহিত হত , সম্ভবত আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি বিস্তৃত। Penn State University র ভূ-বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন কার্ডেনাস (Cardenas) এবং গবেষণার প্রধান লেখক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা প্রমাণ খুঁজে পাচ্ছি যে মঙ্গল সম্ভবত নদীর একটি গ্রহ ছিল’’।
মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে অনেকগুলি গর্ত রয়েছে । গবেষকদের করা এই নতুন বিশ্লেষণ থেকে জানা যাচ্ছে যে এই গর্তগুলির বেশিরভাগই সম্ভবত এক সময় নদী ছিল,যা থেকে স্পষ্ট যে মঙ্গল গ্রহে একসময় জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত ছিল।জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি কিউরিওসিটি রোভারের দ্বারা সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে করা হয়েছে।গবেষকরা পেন স্টেট কার্ডেনাসকে উদ্ধৃত করে বলেছেন,“আমরা প্রমাণ খুঁজে পাচ্ছি যে মঙ্গল সম্ভবত নদীর একটি গ্রহ ছিল। আমরা পুরো গ্রহে এর লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি,” । গবেষকদের মতে আজ আমরা মঙ্গল গ্রহে যা দেখছি তা কোনও ছবির ভিত্তিতে করা বিশ্লেষণ নয়,এটি মঙ্গলগ্রহে চলতে থাকা পরিবর্তনের রেকর্ড। আমরা আজ যা দেখছি তা হল একটি সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের অবশিষ্টাংশ,যা সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী।
গবেষকদের ধারনা মঙ্গল গ্রহের অন্য কোথাও এখনও অনাবিষ্কৃত নদী থাকতে পারে।গবেষকদের দলটি কার্ডেনাসকে উদ্ধৃত করে বলেছেন “আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত করে যে মঙ্গল গ্রহে পূর্বে বিশ্বাসের চেয়ে অনেক বেশি নদী থাকতে পারে, যা অবশ্যই মঙ্গলে প্রাচীন জীবনের সম্পর্কে আরও আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। এটি মঙ্গল গ্রহের সম্পর্কে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে যেখানে একসময় বেশিরভাগ গ্রহের জীবনের জন্য সঠিক অবস্থা ছিল’’।
সাংখ্যিক মডেল ব্যবহার করে, গবেষকরা হাজার হাজার বছর ধরে মঙ্গলের গেল ক্রেটারে যে ক্ষয় ঘটেছে তা অনুকরণ করেছেন। গবেষণায় স্যাটেলাইট ডেটা এবং কিউরিওসিটি ইমেজগুলির উপর একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে গবেষকরা মেক্সিকো উপসাগরের সমুদ্রতলের নীচে পাথরের স্তরগুলির 3D স্ক্যানগুলির সাথে মঙ্গল গ্রহের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের অবশিষ্ট অংশের তুলনা করেছেন যা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মঙ্গল গ্রহে রয়েছে।
NASA এর কিউরিওসিটি রোভারের (Curiosity rover) মঙ্গল গ্রহে জীবনের সম্ভাব্য চিহ্নের আবিষ্কার বিজ্ঞানী, মহাকাশ সংস্থা এবং জনসাধারণের মধ্যে একইভাবে আগ্রহ ও উত্তেজনার উদ্দীপনা জাগিয়েছে। এই প্রকাশ নিশ্চিতভাবে মঙ্গলগ্রহ অনুসন্ধানের ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে। যদিও এই উদ্ঘাটনটি লাল গ্রহে জীবনের নিশ্চিত প্রমাণ দেয় না, তবে এটি উদ্বেগজনক সূত্র প্রদান করে এবং অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য নতুন দরজা খুলে দেয়। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান মহাকাশ অনুসন্ধানের আগামী দিনের জন্য একটি প্রাথমিক ফোকাস হতে পারে । মঙ্গল গ্রহে এক সময় জীবনের অস্তিত্ব ছিল কিনা বা এখনও আছে কিনা সেই প্রশ্নটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক রহস্যগুলির মধ্যে একটি। এবং কিউরিওসিটি রোভারের আবিষ্কার আমাদেরকে সেই রহস্য উন্মোচন করার কাজে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল।
আরও পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন